E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুই মাসে সঞ্চয়পত্রে ভাটার টান

২০১৯ অক্টোবর ১১ ১০:০৮:৪৪
দুই মাসে সঞ্চয়পত্রে ভাটার টান

স্টাফ রিপোর্টার : সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম দুই মাসে ভাটা পড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে।

তথ্য মতে, জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা ও আগস্ট মাসে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ৬৬১ কোটি টাকা।

প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ৩ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। একই অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংক মালিকদের অনুরোধে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করে সরকার। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ এবং পাঁচ লাখ টাকার অধিক সঞ্চয়পত্রে সুদের উপর উৎসে কর ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া এক লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা এবং একই ব্যক্তির একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতে পদক্ষেপ গ্রহণ।

নানা ভোগান্তির ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের নানা কড়াকড়ি, উৎসে কর বাড়ানোর ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে অনেকেই।

এদিকে গ্রাহকরা ব্যাংকের দিকে এখন একটু বেশি ঝুঁকছেন, এর কারন হিসেবে ব্যাংক আমানতে সুদের হার বেড়ে যাওয়াকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে সরকারের বাধ্য হয়ে খরচ মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। আর সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানান সাবেক এ গভর্নর।

দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই।

এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের আগস্টে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ২০৫ কোটি ৪০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এর আগে জুলাইয়ে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

দুই মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৩০৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়।

ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ঋণ বা ধার হিসেবে গণ্য করা হয়।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশনিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

(ওএস/অ/অক্টোবর ১১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test