E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হয়রানিমুক্ত ব্যবসার পরিবেশ চান প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা

২০২২ আগস্ট ০৮ ১৮:১৬:০৭
হয়রানিমুক্ত ব্যবসার পরিবেশ চান প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার : পরিদর্শনের নামে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের প্লাস্টিক শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা। সোমবার (৮ আগস্ট) এফবিসিসিআইতে অনুষ্ঠিত প্লাস্টিক, রাবার, মেলামাইন ও পিভিসি পণ্যবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে তারা এ দাবি জানান।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার অগ্নিদুর্ঘটনার পর থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে কোনো প্রকার লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না। এ কারণে সব ধরনের আইনি শর্ত মেনে যেসব বৈধ কারখানা চালু হয়েছিল সেগুলো অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে সরকারি সংস্থাগুলো পরিদর্শন ও অভিযানের নামে প্রায়ই বিভিন্ন কারখানাকে জরিমানা ও মামলা করছে। এসব ভোগান্তির কারণে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্লাস্টিক পল্লি স্থাপনের কথা থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। তাই পুরান ঢাকার কারখানাগুলো স্থানান্তরের সুযোগও তৈরি হয়নি। প্লাস্টিক পল্লি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়নের দাবি জানান তারা।

বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, প্লাস্টিক শিল্প দেশে কর্মসংস্থান, রপ্তানি আয় ও শিল্পায়নের বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখছে।

২০২৩ সাল নাগাদ মহামন্দার বৈশ্বিক পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মন্দা মোকাবিলার জন্য রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। সেজন্য প্লাস্টিকখাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

সংস্থাটির সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, রপ্তানি বাড়াতে ভারতের কলকাতা, গোয়াহাটি ও ত্রিপুরায় তিনটি মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এফবিসিসিআই। এসব মেলায় প্লাস্টিক, মেলামাইনসহ এ খাতের সম্ভাবনায় পণ্যগুলোর প্রদর্শনীর পরামর্শ দেন তিনি। তিনি জানান, ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশি এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ আবু মোতালেব বলেন, প্লাস্টিকখাত শুরু থেকেই নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। এখনো এসব ষড়যন্ত্র চলছে। এ খাতের কর সংক্রান্ত সমস্যা, পরিবেশবিষয়ক সমস্যা সমাধানে স্ট্যান্ডিং কমিটি কাজ করবে বলে জানান তিনি। এসময় শিল্প কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধবভাবে পণ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান আবু মোতালেব।

কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ প্লাস্টিকপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লাস্টিকখাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলে বিশ্ববাজারের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, প্লাস্টিকপণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ এ খাত থেকে আয় করে মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ১ শতাংশেরও কম। দেশে প্লাস্টিক খাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই রপ্তানি বাড়াতে বৈশ্বিক বাজার আবিষ্কার করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, দেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিকপণ্যের বাজার রয়েছে। প্রতি বছর ২০ শতাংশ করে এ বাজার বাড়ছে। তাই এ শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। প্লাস্টিকপণ্যের পরোক্ষ রপ্তানিকে এ খাতের আয় হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান বিপিজিএমইএ সভাপতি।

প্লাস্টিকপণ্যের সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে এ শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিপিজিএমইএ পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী।

এছাড়া প্লাস্টিক শিল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান পরিচালক হাফেজ হারুন। আর পরিচালক মোহাম্মেদ বজলুর রহমান জানান, প্লাস্টিক শিল্পের সমস্যাগুলো এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

এর আগে মুক্ত আলোচনায় মেলামাইনপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকরা জানান, নেপালে বাংলাদেশি মেলামাইনপণ্য রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয়, বিপরীতে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ১০ শতাংশ। ভারতের মতো বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক কমিয়ে আনতে পারলে নেপালে প্রতি বছর মেলামাইনপণ্য থেকে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় অর্জন করা সম্ভব। এছাড়াও কমিটির সদস্যরা পিভিসি খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিল করে ৩ শতাংশ ভ্যাট পুনর্বহাল, প্যাকেজ ভ্যাট আরোপ, রাবার পণ্যকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, খেলনা তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে আলাদা এইচএস কোড নির্ধারণের দাবি জানান।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম (মিন্টু), মো. আবুল খায়ের, নাজমুল হোসাইন, এফবিসিসিআই’র উপদেষ্টা মনজুর আহমেদসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test