বড় ধাক্কার মুখোমুখি বাংলাদেশের অর্থনীতি

স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের সর্বব্যাপী শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ভবিষ্যৎ অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি) সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, শুল্কের এই নতুন নীতিমালা দরিদ্র দেশগুলোর রপ্তানিপ্রবাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো প্রকট করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন আমদানি শুল্কের ফলে অনেক উন্নয়নশীল দেশের বাণিজ্য খরচ বেশ বাড়বে। এ কারণে দেশের পোশাক ও কৃষি খাতে রপ্তানি সম্ভাবনা কমবে।
জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রায় এক শতাব্দী ধরে অপরিবর্তিত বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে বড় ধাক্কার মুখোমুখি পড়ছে। তবে শুল্ক বাস্তবায়নে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ অর্থনীতির পালে কিছুটা হাওয়া দিলেও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আংকটাড প্রকাশিত ‘স্প্যারিং দ্য ভালনারেবল : দ্য কস্ট অব নিউ ট্যারিফ বার্ডেনস’ প্রতিবেদন এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও রপ্তানি ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে এসব দেশের নতুন শুল্কনীতি। ফলে মার্কিন বাজারে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে পোশাক ও কৃষিপণ্যের মতো খাতগুলোতে রপ্তানি সম্ভাবনা কমবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে সর্বজনীন শুল্ক আরোপ করলেও জুলাইয়ে দেশভিত্তিক অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে।
এতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর আমদানি শুল্ক বেড়ে ৪৪ শতাংশ হতে পারে, যা দেশগুলোর অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলেও প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, ট্যারিফ রিলিফ নীতিমালা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাজারে প্রবেশে সহজ শর্ত নিশ্চিত করা জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তা না হলে নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে বিশ্ববাণিজ্যে, যা দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার এবং দেশটির বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক কমাতে আসন্ন বাজেটে ১০০টি মার্কিন পণ্যে শুল্কছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে নতুন বিনিয়োগেও স্থবিরতা বিরাজ করছে।
জ্বালানি-বিদ্যুতের ঘাটতির পাশাপাশি যোগ হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মব-সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।
৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের: সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, আগামী ৩০ জুন শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশে, যা গত ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ মাত্র চার মাস আগেই, জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল।
তবে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, এখনো বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সেই আশাবাদও ক্ষীণ হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ, রপ্তানি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্জ বলেন, ‘নিম্ন রাজস্ব দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ এবং এটি অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিবেশে স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। ’
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেছেন, দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। আবার নতুন বিনিয়োগকারীরাও পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন। তারা একটি স্থিতিশীল পরিবেশের দিকে তাকিয়ে আছেন। এমনিতেই সামষ্টিক অর্থনীতিতে শ্লথগতি বিদ্যমান। নতুন করে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ৩০ শতাংশ কমেছে, যা নির্দেশ করে যে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। আর বিনিয়োগ না হওয়ার চূড়ান্ত প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের ওপর। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি আরো শ্লথ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, এডিবির পূর্বাভাস : চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। তবে তারা আশা করছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
এডিবি এর আগে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
এডিবি এপ্রিল মাসের ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের উল্লেখ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪.৩ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৩.৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
এডিবির বিশ্লেষণ অনুসারে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শ্রমিক বিক্ষোভ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলেছে।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের চড়া হারের কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নিরুৎসাহ হচ্ছেন, যার ফলে প্রবৃদ্ধির গতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চিত নীতিকাঠামো, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যযুদ্ধের মিলিত প্রভাবে চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বেসরকারি বিনিয়োগ ও এফডিআই সীমিত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত, ভোগের প্রবণতা কমেছে—আইএমএফ : চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে। ফলে ভোগের প্রবণতা কমেছে। এতে প্রবৃদ্ধির হারও কমবে।
ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক টি আই এম নুরুল কবির বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গণবিক্ষোভ, কারফিউ এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকার মতো অনভিপ্রেত ঘটনার মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) হয়েছে মাত্র ১০৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে এফডিআই ছিল ৩৬০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার।
তথ্যসূত্র : কালের কণ্ঠ
(ওএস/এএস/মে ২৪, ২০২৫)
পাঠকের মতামত:
- ‘আজকের দিনটি হতাশার’
- ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৬৫৫৮
- ‘পাকিস্তান শুধু টিকেই থাকবে না, শক্তিশালীও হবে’
- কাপ্তাই ইউএনও এর হস্তক্ষেপে মুক্তি মিললো মারমা হোটেলে কাজ করা ৪ শিশুর
- ফরিদপুরে মধ্যরাতে এক কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগ
- সাতক্ষীরায় নাশকতা মামলায় দুই সম্পাদক গ্রেপ্তার
- নড়াইলে পুকুরে ডুবে দু'জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু, এলাকায় শোকের ছায়া
- ঈশ্বরদীতে অটোরিকশা চোর চক্রের তিন নারীসহ আটক ৪
- ‘তথ্য এখন জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত অস্ত্র’
- দেবহাটায় কামরুল হত্যা মামলার আসামি রবিউল র্যাবের জালে
- সোনারগাঁয়ে পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং জোনের দাবি
- ফরিদপুরে এক নারীকে পাচারের দায়ে দুই নারীর যাবজ্জীবন
- পলাশবাড়ীতে অতর্কিত হামলায় নারী আহত
- সদরপুরে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায় গ্রেফতার ছাত্রলীগের সভাপতি
- সালথায় সাজাপ্রাপ্ত তিন পলাতক আসামিসহ গ্রেপ্তার ৭
- বাগেরহাটে দিনভর বৃষ্টিতে বিপর্যন্ত জনজীবন, প্লাবিত শহরের নিম্নাঞ্চল
- মালয়েশিয়ায় খুন হওয়া মহম্মদপুরের সেই যুবকের দাফন সম্পন্ন
- পাংশায় কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সংবাদ উধাও
- ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা দেশে কায়েম রয়েছে’
- গৌরনদীতে পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস
- জয়ন্তী নদীর ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে সফিপুর ইউনিয়ন
- ট্রাম্প-মোদির ৩৫ মিনিটের ফোনালাপ
- ‘দক্ষিণ সিটির সেবায় সরকার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে’
- সোনার দাম নিয়ে সবশেষ যা জানা যাচ্ছে
- ইসরায়েলে ৪ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান
- রাজারহাটে ঘন কুয়াশায় ইরি-বোরো বীজতলার চারা বিবর্ণ, দুঃশ্চিন্তায় কৃষক
- জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত মুমিনের
- চুয়াডাঙ্গার দুটি উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে, ভোটার উপস্থিতি কম
- ঈদগাহ মাঠে পাওয়া গেলো ৩৪৩ ভরি স্বর্ণ
- ফরিদপুরের বইমেলায় পীযূষ সিকদারের ‘চান্দের হাট’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- রূপকথার গল্প
- ব্যাংক ডাকাতি: রুমা ও থানচিতে ৪ মামলা
- কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি বিএনপির
- থেকে যাব না থাকাতে
- তাজউদ্দীন কলেজের নাম পরিবর্তন নিয়ে সোহেল তাজের প্রতিক্রিয়া
- গণতান্ত্রিক-স্থিতিশীল বাংলাদেশের প্রত্যাশা ভারতের রাষ্ট্রপতির
- সাতক্ষীরায় নাশকতা মামলায় দুই সম্পাদক গ্রেপ্তার
- অনির্দিষ্টকালের জন্য সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা বাজুসের
- ঝিনাইদহে ট্রাকচাপায় স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু
- গোয়ালন্দে হেরোইনসহ স্বামী-স্ত্রী আটক
- ফসলি জমির মাটি কাটতে যমুনার বুকে নয়া সড়ক
- মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন ধীতপুর
- কাপ্তাই ইউএনও এর হস্তক্ষেপে মুক্তি মিললো মারমা হোটেলে কাজ করা ৪ শিশুর
- নড়াইলে পুকুরে ডুবে দু'জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু, এলাকায় শোকের ছায়া
- ৫২ বছরেও বিচার পায়নি গোপালগঞ্জের ৪ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার