E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ট্রাক না পাওয়ায় মংলার সাদা মাছের পাইকারী বাজারে ধস

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৮:২৫:৩৯
ট্রাক না পাওয়ায় মংলার সাদা মাছের পাইকারী বাজারে ধস

বাগেরহাট প্রতিনিধি : টানা হরতাল অবরোধে লোকসানের মুখে পড়েছেন মংলার সাদা মাছ ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজার ঠিক থাকলেও পাইকারী বাজারে অবরোধ হরতালে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মংলা থেকে মাছের কোন চালান দেশের অন্য বাজারে পাঠাতে না পারায় ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্য দিকে পাইকারী বাজারে চাহিদা না থাকায় ঘের থেকে মাছ তুলছেন না চাষীরা। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন ফড়িয়া নামের শতাধিক ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী। মাছের সব চেয়ে বড় দু’ পাইকারী বাজার মংলা ও দিগরাজে পাইকারী কোন ক্রেতা নেই। মাছ কেনা বেচার আড়ত গুলো খোলা থাকলেও তাতে এখন বেচা কেনা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মংলা উপজেলার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জলাশয়ে মাছের চাষ করা হয়। ঘের বা খামারের সংখ্যা ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। মংলা ও দিগরাজ বাজার হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার। এ দু’বাজারে ৬০ টির মত মাছের পাইকারী আড়ৎ রয়েছে। প্রতিদিন এসব আড়তে প্রায় কোটি টাকার মাছ কেনা বেচা হয়। আর এখান থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমান মাছের চালান পাঠানো হয় বৃহত্তর খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাছ বাজারে। আবার ওই সব অঞ্চল থেকেও অনেক ব্যবসায়ী মংলায় মাছ কিনতে আসেন। ঘের মালিক বা চাষীদের উপর নির্ভর করে স্থানীয় ভাবে শতাধিক ফড়িয়া রয়েছে, যারা স্বল্প পুঁজিতে ঘের থেকে মাছ কিনে এনে তা বিক্রি করেন পাইকারী বাজারে। চলমান টানা হরতাল অবরোধের কারণে মাছের কোন চালান পাঠানো যাচ্ছে না দেশের অন্যান্য বাজারে। তাই পাইকারী ব্যবসায়ীরা আপাদত কোন মাছ কিনছেন না। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী মাছ কিনে তা বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন । বরফ দিয়ে আড়তে মজুত করে তা রাখতে হচ্ছে দিনের পর দিন। এগুলো পঁচে যাওয়ারও আশংকা করছেন তারা। কবে নাগাদ এ মাছ বাইরে পাঠানো যাবে তা অনিশ্চিত।

অন্য দিকে, দাদন আর ব্যাংক ঋণের কিস্তির চাপ বাড়ছে বড় ব্যবসায়ীদের উপর। পাইকারী বাজার মন্দা হওয়ায় চাষীরাও মাছ তুলছেন না ঘের থেকে । এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফড়িয়া বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইনতাজ ফকির (৩২) বলেন, ’ঘেরে মাছ না ধরায় আমরাও কিনতে পারছিনা। আড়ত থেকে দাদন এনেছি কিন্তু ব্যবসা বন্ধ থাকায় পুঁজি ভেঙ্গে বাজার করা লাগছে, দেনায় জর্জরিত হয়ে যাচ্ছি।’ কাইনমারী এলাকার মাছ চাষী আব্দুর রহমান (৩৮) বলেন, ’হরতাল অবরোধের কারনে বাজারে মাছের চাহিদা কম থাকায় দামও কম। তাই চাষীরা লোকসানের ভয়ে ঘের থেকে মাছ ধরছেন না।’


মংলা বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আফজাল ফরাজী জানান, অবরোধে ভাংচুর আর অগ্নি সংযোগের কারনে মাছ পরিবহনের জন্য কোন ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও তার ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাঝে মধ্যে শুক্র ও শনিবার ২/১ টি ট্রাক মংলা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। দেশের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে মংলার ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার পুঁজি আটকে আছে। মাছ পাঠাতে না পারায় ঠিকমত লেনদেনও করছে না ওই সব ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্থানীয় প্রায় প্রতিটি মাছ চাষীর কাছে ব্যবসায়ীদের মোটা অংকের দাদনের টাকা রয়েছে। ঘের থেকে তারা মাছও ধরছে না, আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এ অবস্থায় চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন মংলার মাছ ব্যবসায়ীরা। লাভ তো দূরের কথা, এবার পুঁজিও ফেরত আসবে না বলে তারা আশংকা করছেন। মংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার দেব বলেন, ’মংলা এলাকায় এ বছর চিংড়ি মাছের ফলন কিছুটা কম হলেও সাদা মাছের বাম্পার ফলন হয়েছে ।

মংলায় উৎপাদিত মাছ স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে শতকরা অন্তত ৮০ ভাগ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ মাছ মংলার বাইরের বাজার গুলোতে পাঠাতে না পারায় ব্যবসায়ীদের চরম আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test