বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার বাইরে গোঁজামিল সংজ্ঞার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা গ্রহণযোগ্য হবে না

আবীর আহাদ

বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা : (1972) : Freedom Fighters (FF) means any person who had served as member of any force engaged in the War of Liberation. অর্থ : মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি যেকোনো একটি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য হিশেবে মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন ।

এটাই হলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংজ্ঞা । বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার ভেতর সংঘবদ্ধ (ফোর্স ) সশস্ত্র বাহিনীর কথা রয়েছে-----যেসব বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের সাথে সম্পর্ক ছিলো । এ-সংজ্ঞার আলোকে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন সেক্টরভিত্তিক গণবাহিনী (এফএফ), মুজিববাহিনী, সামরিক বাহিনী, ইপিআর-পুলিশ-আনসার বাহিনী ও স্থানীয় বিভিন্ন বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ ।

অপরদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞাটিকে পাশ কাটিয়ে নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে, তা হলো :

(2016) : The people who were involved in the liberation war in response to the call of the Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman in between March 26 and December 16, 1971. অর্থ : যে সমস্ত লোক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।

এটা কিছুতেই মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা হতে পারে না । এটা হলো মুক্তিযুদ্ধের সাথে কোনো-না-কোনোভাবে জড়িত লোকদের সংজ্ঞা-----যাকে প্রচ্ছন্নভাবে মুক্তিকামী জনতার সংজ্ঞা বলা যেতে পারে । জামুকা প্রণীত এই তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের কথা নেই-----নেই কোনো সংঘবদ্ধ সশস্ত্র বাহিনীর (ফোর্স ) অস্তিত্ব !

জামুকার এ সংজ্ঞার আলোকে মুক্তিকামী সবাই মুক্তিযোদ্ধা ! এদের সংখ্যা কোটি কোটি----! এ-জন্য যখন-তখন যে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন হচ্ছেন এবং হতেই থাকবেন ।

সুতরাং মুক্তিযোদ্ধা নামের এই ধাপ্পাবাজির সংজ্ঞার বাণিজ্যিক লীলাখেলায় প্রকাশিতব্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা হলে তা কোনোভাবেই কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না ।

অতএব, সাধু, সাবধান !!!

মুক্তিযোদ্ধা তালিকা । এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্ন । এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্য বীর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বের প্রশ্ন । জাতীয় মর্যাদার প্রশ্ন । এটা নিয়ে ছলচাতুরি তালবাহানা হেলাফেলা ও জালজালিয়াতি চলবে না । এটা নিয়ে বাণিজ্যিক লেনদেন চলতে দেয়া যায় না !

এতো দাবি, এতো প্রতিবাদ ও এতো সুপরামর্শ দেয়ার পরও যদি প্রকাশিতব্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার থেকে যায় তাহলে কিন্তু খবর আছে, মন্ত্রী সাহেব ! সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকেও বলে রাখি, মুক্তিযুদ্ধের উত্থান ঘটেছিলো আপনাদের হাতে----সেটা যেনো আপনাদের হাতেই পতন না ঘটে ! আমাদের হিসেব মতে দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই দেড় লক্ষের ওপর নয় । দেখি, আপনার তালিকার সংখ্যা কতো দাড়ায় ?

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।