E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অব্যাহত

২০২০ জুলাই ১৩ ১৮:৩৬:৫২
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অব্যাহত

রণেশ মৈত্র


মনে পড়ে ১৯৬২ সনের কথা। পাবনায় তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। আমি তখন দৈনিক ‘সংবাদ’ এর পাবনাস্থ প্রতিনিধি। বর্তমানে জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তখন সংবাদ এর বার্তা সম্পাদক। কোনভাবেই পাবনার দাঙ্গার খবর যখন পাঠাতে পারছিলাম না গোয়েন্দা বিভাগের হস্তক্ষেপে তখন শহর থেকে দূরের এক পোষ্ট অফিস থেকে হাতে লেখা খবরটি পাঠিয়েছিলাম-তাও আবার ‘দাঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ না করে।

এর পরেও আরও অন্তত: দু’বার কলমের ও রাজনৈতিক চেষ্টায় পাবনাতে দু’বার দাঙ্গা থামাতে হয়েছে বুকে অনেক সাহস নিয়ে। তখন ছিল পাকিস্তান আমল। সাম্প্রদায়িক ঘটনা-দুর্ঘটনা যা-ই বলি, তা ছিল তখন নেহায়েতই স্বাভাবিক। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রটিই গড়ে উঠেছিল সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তি করে।

দেশবাসীর মিলিত শত-সহস্র সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামে আমাদের বহু স্বপ্নের স্বাধীন রাষ্ট্রটি অর্জিত হলো ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এবং গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় বুকে ধারণ করে। ঐ প্রত্যয়গুলি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭২ সালে অনুমোদিত সংবিধানের ও রাষ্ট্রের চার মৌল নীতির অন্তর্ভূক্ত হলো ঐ প্রত্যয়গুলি। স্বভাবত:ই ভাবা গেল, সাম্প্রদায়িকতার উৎপাতের হাত থেকে বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা মুক্তি পেলেন। তাই আর হয়তো এই বিষয় নিয়ে কদাপি লিখতে হবে না। কিন্তু সেই সুখস্বপ্ন ভেঙ্গে চূরমার হতে বেশি দিন লাগে নি।

বাহাত্তরের পর স্বল্পকালীন বিরতি দিয়ে আবার ফিরে এলো দূষিত আবহাওয়া। সকল সংখ্যালঘযুর জীবন হতে থাকলো বহুমুখি অত্যাচার-নির্য্যাতনে জর্জরিত। তাই কলম ধরতে হচ্ছে প্রতি বছরই কমপক্ষে একবার-এবং তা কোন কোন বছর ৪/৫ বারও।

সংবাদপত্রগুলিকে ধন্যবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। ক্লান্তিহীনভাবে তাঁরাও নিয়মিতই সংখ্যালঘু নির্য্যাতনের খবর এবং তার প্রতিবাদে লিখিত নিবন্ধগুলি ছেপেই চলেছেন। কিন্তু ফলাফল? কখনোই সরকারি মহলের টনক নড়ে না।

১৯৯১ সাল থেকে আজ দুই দশকব্যাপী আমি দেশী-বিদেশী নানা পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছি-প্রকাশিতও হয়েছে। এই ত্রিশ বছরের নানা সময়ে নানা দলের সরকার ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু কোন সরকারের লজরেই লেখাগুলি পড়েছে বলে হয় নি যদিও ঐ নিবন্ধ স মূহের সংখ্যা সাকুল্যে কম পক্ষে ৮০/৯০টি হবে।

বুঝে নিয়েছি কিছুই হবে না। তবুও লিখতে হবে-নইলে নানা বর্ণের নানা সাম্প্রদায়িক মহল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সকল ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়িকে উগ্র সাম্প্রদায়িক চিন্তার খপ্পড়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লেখাটা আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই আজ আবারও লিখতে বসেছি-সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যে ঘটনাগুলি ২০২০ সালের জুন মাসে ঘটেছে এই ভয়াবহ করোনাকালেও তার একটি তালিকা আমার হাতে আসার ফলে। তালিকাটি দীর্ঘ হওয়ায় পাঠক-পাঠিকাদের হাতে তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরছি না। তাই অতি সংক্ষেপে ঘটনাগুলির উল্লেখ করছি মাত্র।

১। বিগত ১ জুন কিশোরগঞ্জে সরকারি গুরুদয়াল কলেজের এইচ.এস.সি প্রথম বর্ষের একজন হিন্দু ছাত্রী প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ফিল্ম ষ্টাইলে অপহরণ করেছে মো: আজিজুল হক সানি ও তার সঙ্গীরা। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মেয়েটির গ্রামের বাড়ী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার আচমিতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আশ পাশের লোকজন মেয়েটির চীৎকার শুনে ছুটে আসার আগেই অটোরিকসা যোগে তারা পালিয়ে যায়।

২। পহেলা জুন সিলেট নগরীর শ্রী শ্রী বিশ্বেশ্বর জিউর আখড়ায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে বাসা নির্মাণ করছেন আলহাজ্ব আবদুল মুক্তি চৌধুরীর ছেলে মো: আজহারুল কবির চৌধুরী সাজু।
মন্দির কমিটি এ ব্যাপারে কোতোয়াক্ষী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে এবং পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

৩। বিগত ২ জুন তারিখে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থানার এ এস আই শামীম ও পুলিশের সোর্স রেজাউল দুপুরে রামশীল গ্রামে উপস্থিত হয়ে তাস খেলাকে ইস্যু করে নিখিল তালুকদারের বুকের ও মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে ফেলে। আহত অবস্থায় নিখিলের পরিবার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে নিখিলকে ভর্তি করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষ ঢাকায় রেফার করলে ঢাকায় নেওয়া পথেই নিখিলের মৃত্যু ঘটে।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর পুলিশ কর্মকর্তা ও সোর্স উভয়কেই গ্রেফতার করা হয় তবে মামলার অগ্রগতি বা আসামীদের চাকুরীচ্যুতি সম্পর্কে জানা নেই।

৪। জুনের ২ তারিখে গাইবান্ধা জেলখানায় ৩১ মে সারাদিন পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে বিকেলে দুপুরের খাবারের জন্য ভুটু বাসফোর বাইরে যায়। ফিরতে কয়েক মিনিট বিলম্ব হলে মো: মোমিন নামের এক পুলিশ অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিক নির্য্যাতন করে। জেল সুপারের কাছে বিচার চাইতে গেলে তিনিও স্যুইপারের আবার কিসের বিচার বলে ভুটুকে রড ও জুতা দিয়ে পেটান। এর প্রতিবাদে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও লিখিত অভিযোগসহ স্মারকলিপি প্রদান করেন হরিজন ঐক্য পরিষদ।

৫। একই তারিখে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঠাকুরের মাটি গ্রামের বাসিন্দা প্রজ লাল রায়ের বসতভিটা ও জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ল-ন প্রবাসী বশির উদ্দিনের ছেলে জুনাইদ আহমদ জাহাঙ্গীর সন্ধ্য ৬.৩০ মি. এ প্রজ লাল বাজার থেকে ফেরার পথে চাপাতি দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় জাহাঙ্গীর। স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় প্রজ লালকে উদ্ধার করে কানাইঘাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

৬। জুন ৪ তরিখে বাগেরহাটের চিতলমারীতে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হরবিলাস পোদ্দারের জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে মৃত নওয়াব আলীর ছেলে ইলিয়াস সেখ বহিরাগত লোকদের নিয়ে হরবিলাস পোদ্দারের ছেলে উজ্জ্বল পোদ্দার (২৮), স্ত্রী সবিতা ঘোষ (৫৫), মেয়ে আঁখি স্বর্ণকার (২৮), নাতি রান্দুল স্বর্ণকার মিলে বাধা প্রদান করায় ইলিয়াস ও ভাড়াটিয়া মাস্তানরা তাদেরকে হামলা করে, ভারী অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ও মালামাল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

৭। ঐ তারিখেই কক্সবাজারের রামুতে ডা: উল্লাস ধরের বাসায় ঢুকে বিকেল তিনটার দিকে চম্পা ধরের শ্লীলতা হানি করে অতর্কিতে হামলা চালায় মাদক কারবারী ও ভূমি দস্যু আবদুস শুকুর ও তার দলবল। গুরুতর জখম হন উল্লাস ধরের ছোট ভাই এর স্ত্রী চম্পা ধর, বরীন ধর, সুভাষ ধর ও বিলাস ধর। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় চম্পা ধর বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
৮। জুনের চার তারিখে গাজীপুর কালিয়াকৈর পৌরসভা ৬ নং ওয়ার্ডের কালামপুরের সনাতন ধর্মের আদিবাসী সম্প্রদায়ের কামাখ্যা মন্দিরটি ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

৯। ঐ একই দিনে দিবাগত রাতে লংদু উপজেলার বগাচতর মৌজার মৃত ভূলসিং চাকমার ছেলে নবীনচান চাকমার বন্দোবস্তকৃত তিন একর ভূমি জবরদখল করে বগাচতর ইউনিয়নের রাঙ্গুপাড়ার মৃত লজু মিয়া চৌধুরীর ছেলে আলী আহমদ চৌধুরী ও মজনু সরকারের ছেলে আবদুল আলিম সরকার।

১০। জুন ৫ তারিখে কক্সবাজার জিলার উথিয়া উপজেলার মোচাখোলা গ্রামের অধিবাসী মংপু চাকমা তার ১৬ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাস যোগে কক্সবাজার ফিরছিলেন। বাসটি কক্সবাজারের সন্নিকটে লিংক রোডে পৌঁছালে উথিয়ার গাড়ী ধরার জন্য বাবা মেয়ে এক অটোরিক্সায় উঠেন। এসময় এ অপরিচিত লোক ঐ গাড়ীতে উঠে। অটোরিক্সাটি কক্সবাজার শহরের কস্তুরিঘাট এলাকায় পৌঁছালে কাজের কথা বলে বাবাকে নামিয়ে দিয়ে মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। এ নিয়ে থানায় মোকর্দমা দায়ের হয়েছে।

১১। জুনের ৬ তারিখে নওগাঁর মান্দা থানার চৌবাড়িয়া বাজারে অবস্থিত বউ বাজার ফার্নিচার ব্যবসায়ী অমল চন্দ্র প্রামানিকের স্ত্রী দুলিরানীকে পার্শ্ববর্তী উপজেলার মালশিরা হাইস্কুলের সভাপতি আলাউদ্দিন প্রামানিক দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব এবং ধর্মান্তরিত করার কথা বলে আসছিল কিন্তু দুলি রানী তা প্রত্যাখ্যান করায় তার জের ধরে একদিন তার স্বামীর দোকানে সাইন বোর্ড লাগাতে এলে তাতে বাধা দিতে গেলে জোরপূর্বক দোকানের ভেতরে ঢুকে শ্লীলতা হানির চেষ্টা করে। নাপেরে সংঘবন্ধভাবে দুর্বৃত্তরা দোকানের সামনে থেকে সাটারিং নামিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে মীমাংসা করে।

১২। একই তারিখে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আবদুল জলিল, আবদুর রহিম, সফিকুল ইসলাম, মামুন ও মোছাম্মত লাকি খাতুন তাদের সাঙ্গপাঙ্গ মিলে দুই বছর ধরে একের পর এক হিন্দুদের পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল করলে তার প্রতিবাদ করায় তাদেরকে মিথ্যে মামলায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন। পুলিশকে জানালেও তারা নির্বিকার।

১৩। জুনের সাত তারিখে বগুড়ায় শেরপুর পৌরসভায় ২৮ মে তারিখে বিপুল মোহান্তের ছোট ছেলে পাশের বাড়ীর গফুর শেখের ছেলের সাথে কথা কাটাকাটির রেশ ধরে ঐ দিন সন্ধ্যায় সোহেল শেখ ও তার দলবল দেশীয় অস্ত্র লাঠি সোটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে বিপুল মোহান্তের মিষ্টান্ন তৈরীর কারখানায় অতর্কিতে হামলা করে। এতে বিপুল মোহান্ত, তার স্ত্রী রমা রানী, মেয়ে বর্ষা রানী ও ছেলে জয় মোহান্ত গুরুতর জখম হয় এবং দুর্বৃত্তরা ড্রয়ার ভেঙ্গে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। বিপুল মোহান্ত মামলা দায়ের করেছেন।

১৪। জুনের সাত তরিখে খুলনার দাকোপ উপজেলায় বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া কলেজের গ্রন্থাগারিক শিক্ষক সুকুমার বস্তানের একমাত্র ছেলে নীলোৎপালকে এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইমন শেখ বাড়ীতে ঢুকে নীলোৎপলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়ীর পাশে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে।

নীলোৎপলের চীৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে ইমন শেখকে ধরে বেঁধে ফেলে এবং নীলোৎপলকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এলাকাবাসী ইমনকেও পিটুনি দিলে সেও মারা যায়। নীলোৎপল বি এল কলেজ থেকে এম.এস.সি পাশ করেছে।

১৫। একই তারিখে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মাদরা গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ২০/২৫ জনের একটি দল লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল প্রভৃতি সহ ১৪টি মোটর সাইখেলে মাদরা শ্মশানের পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে থাকা শান্ত, কুমারেশ ও সুমনকে এলোপাথারি পিটিয়ে জখম করে। বাহিনীর নেতা মো: আলমগীরের নেতৃত্বে ঘটনা বারবার ঘটলেও সমগ্র সংখ্যালঘু সমাজ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। ঐ ভয়ংকর অপরাধী খোবরাখালি গ্রামের কল্যাণ ম-লের স্ত্রীকে নির্য্যাতন করে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে মেরে ফেলে।

১৬। ৮ জুন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে বিজয় বর্মন রাত ১০টার দিকে বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে কতিপয় সন্ত্রাসী তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন প্রতিবেশীরা।

১৭। একই দিন বাঁশখালিরর পূর্ব চাম্বল নাথ পাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে বিমল কান্তি নায়ের মন্দিরে মল ছিটিয়ে দেয়।

১৮। ঐ দিন খাগড়াছড়ি পাবর্তত্য জেলার গুইমারা উপজেলার তৈকর্মার পিলো কুমার ত্রিপুরা নামের এক যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

১৯। জুনের ১০ তারিখে কেরানীগঞ্জে রাত ১১টায় যুবলীগ নেতা মাদক সেবী শহীদুল ইসলাম বুলু ডাক্তারের ছেলে শ্যামল কান্তি সরকার (৬০) কে বাড়ী থেকে নিয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারপিট করে বাড়ীর জমির দলিল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ৪০/৫০ জনের সশস্ত্র বাহিনী সহ বাড়ীতে হামলা চালায়। থানা জানায়, তারা কিছু করতে পারবে না। পরিবারটি গভীর আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।

২০। একই তারিখে নোয়াখালির সোনাপুর ইউনিয়নের মুরাদপুরের সুবাস বণিক ও নান্টু বণিককে অজানা নম্বর থেকে ফোন করে চাঁদা দাবী করে। তাতে অস্বীকৃত চানালে তাঁরা অতর্কিত হামলার শিকার হন।

২১। জুনের ১০ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার আমির পাড়া গ্রামের বিমল চন্দ্র দাশের স্ত্রী কল্পনা দাসের মোবাইলে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ২৫০০ টাকা যাওয়ার কথা থাকলেও তা তিনি পান নি। স্থানীয় মেম্বর ৫০০ টাকা দিতে চান। এতে রাজীন না হওয়ায় মেম্বর খোরশেদ আলম ঐ মহিলার হাত ভেঙ্গে দেন।

এ যাবত জুন মাসে সংখ্যালঘু নির্য্যাতনের ২১ টি ঘটনার উল্লেখ করলাম মাত্র। আরও প্রায় ৩০টি অনুরূপ ঘটনার বিবরণ আমার হাতে থাকলেও কলেবরের দিকে তাকিয়ে সেগুলির উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও জাতিগত সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এবং আদিবাসীরা এমন নির্মম অত্যাচারে বহুকাল যাবত জর্জরিত। অনেক দিনই নানাস্থানে ৪/৫ টি করে ঘটনা ঘটছে কখনও বা একটি, দুইটি বা দিনটি।

পুলিশী ব্যবস্থা নেই। এ যাবত অসংখ্য ঘটনা ঘটলেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগে আজতক কারও শান্তি হয় নি। তবু আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ-অসাম্প্রদায়িক দেশ-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দেশ।

কবে হবে এর সমাধান?
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে
এমন প্রশ্ন রাখতেই পারি।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test