E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জঙ্গীরা কি তিন দেশেই মিলিত ছক করছে?

২০২০ জুলাই ২৯ ১১:৫০:১৯
জঙ্গীরা কি তিন দেশেই মিলিত ছক করছে?

রণেশ মৈত্র


গোটা পৃথিবীর মানুষ করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন। এশিয়ার দেশগুলি বিশেষত: বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশ তো এই ভাইরাস সংক্রমণে একেবারে জর্জরিত। লাশের মিছিল প্রতিদিনই বিশাল হয়ে উঠছে। প্রকৃত পক্ষেই বিগত ৪/৫ মাস যাবত করোনা-সংক্রান্ত বিষয়াদি ছাড়া মানুষ অন্য কোন বিষয়কে তাঁদের ভাবনায় স্থান দিতে পারছেন না।

এই সংকটজনক পরিস্থিতিই কি এই অঞ্চলে জঙ্গী উত্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে? তেমনটাই মনে হলো সম্প্রতি দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছয় কলাম ব্যাপী ব্যানার শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে। ফলে জঙ্গী সংকটও যেন সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিল। স্মরণ করিয়ে দিলো এই দুটি ব্যাপারেই বিন্দুমাত্র শিথিলতা ও আত্মতুষ্টির কারণ নেই। শিথিলতা ও আত্বতুষ্টি দেখা দিলে তা হবে আত্মঘাতি।

“ক্রিদেশীয় জঙ্গী নেটওয়ার্ক সক্রিয়ঃ বড় নাশকতার ছক” শিরোনামে প্রকাশিত ঐ খবরে বলা হয়:

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় জঙ্গী নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করেছে জঙ্গী সংগঠনগুলি। গ্রেফতার এড়িয়ে জঙ্গী তৎপরতা চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী জঙ্গীদের। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জে এম বি, আনসার আল ইসলাম ও নব্য জে এম বি ছয় বছর ধরে এ কাজ করছে। পুরুষ জঙ্গীদের পাশাপাশি চলছে নারী জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক তৈরীর কাজ। নারী জঙ্গীদের সমন্বয়ে গঠিত আত্মঘাতী স্কোয়াড নিয়ে দেশে বড় ধরণের নাশকতা ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সম্প্রতি এক নারী জঙ্গী গ্রেতার হওয়ার পর তদন্তে এমন ভয়াবহ তথ্য বের হয়ে এসেছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, সর্বশেষ সদরঘাট থেকে এক নারী জঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার পর পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। ঐ নারী জঙ্গী একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরিক বলে জানা গেছে। তাকে জ্ঞিাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ইনভেষ্টিগেশন বিভাগ। এই নারী জঙ্গীসহ গত চার বছরে গ্রেফতারকৃত ৩৭ জন নারী জঙ্গীর মধ্যে ৩৩ জনই জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মধ্যে ২৪ জন আত্মঘাতি মানসিকতা পোষণ করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার প্রকৌশলী ওয়ালিদ হোসেন পত্রিকাটিকে বলেন, গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুত তাসলিম ওরফে প্রজ্ঞা দেবনাথ (২৫) নামের যে নারী জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে সে নব্য জে এম বির (জামায়তুল ইসলাম, বাংলাদেশ) নারী শাখার অন্যতম সদস্য। তার কাছে ভারতীয় পাসপোর্ট, বাংলাদেশের একটি জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট, একটি বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র ও জঙ্গীবাদের আলামত সমৃদ্ধ দুটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ- ইনভেষ্টিগেশন বিভাগ এই নারীকে গ্রেফতার করেছে।

সূত্র জানায়, এই নারী একই সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিক। সে আরও কোন দেশের নাগরিকও হতে পারে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই নারী কি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছে তা স্পষ্ট নয়। ধারনা করা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সে জঙ্গী তৎপরতা শক্তিশালী করতেই এখানে এসেছে। আবার ভারতে সে মোস্ট ওয়ান্টেড হয়েও এদেশে পালিয়ে আসতে পারে। এ ব্যাপারে ভারতীয় হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ চলছে। পাশাপাশি তার বাংলাদেীশ জন্ম সদন সঠিক কি না তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশে পুরুষ জঙ্গীদের তৎপরতা থাকার বিষয়টি আগাগোড়াই জানা ছিল। নারী জঙ্গীদের তৎপরতা পুরুষ জঙ্গীদের চেয়েও কোন কোন ক্ষেত্রে যে আরও বেশী তা জানা যায় ২০১৪ সালে। ঐ বছরের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে জে এম বির আস্তানায় বিস্ফোরনে জে এম বি জঙ্গী শাকিল গাজী ও সোবহান ম-ল ওরফে গোসবাহন শেখ নিহত হয়। ঐ বাড়ী থেকে গ্রেফতার হয় শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া বিবি ও সোবহান সেখের স্ত্রী আলিমা বিবি। তারা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে রীতিমত পিলে চমকানোর মত তথ্য দেয়। পরর্বতীতে ভারতীয় আইন শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সে তথ্য আদান প্রদান হয়।

প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক দুই নারী জানায়, শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও জঙ্গীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরীর কাজ চলছে।

বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, এমন তথ্যের সত্যতা মেলে জঙ্গীদের আরও বক্তব্যে। তারা বলেছে, ঐ নেটওয়ার্ক তৈরীর ধারাবাহিকতায় জে এম বি জঙ্গীরা ভারতে গিয়ে আস্তানা গাড়ে। সেই আস্তানায় তৈরী করা শত শত শক্তিশালী গ্রেনেড স্থল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরবরাহ করা গেনেটড দিয়ে বড় ধরণের হামলার প্রস্তুতিও চলছে।

পুলিশের ঐ বিশেষ সূত্র বলছে, এমন তথ্যের সত্যতা মেলে পাকিস্তান থেকে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরার পর তাদের হাতে জে এম বির কারাবন্দী আমীর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য মুফতি মওলানা সাইদুর রহমান জাফরের ছোট মেয়ের জামাই সখাওয়াতুল কবির গ্রেফতার হওয়ার পর।

সূত্রটি জানায়, মহাখালি সরকারি তিতুমীর কলেজে পড়ার সময় ইজাজ ওরফে কারগিলের মাধ্যমে তার জে এম বি আমির মুফতি মওলানা সাইদুর রহমান জাফরের সঙ্গে পরিচয় হয়। ইজাজ তিতুমীর কলেজের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র ছিল। ইজাজ মুফতি মওলানা সাইদুর রহমানের বড় মেয়েকে বিয়ে করে। ইজাজের মাধ্যমে সখাওয়াতুল কবির সাইদুর রহমানের ছোট মেয়েকে বিয়ে করে।

পরে ইজাজ ও সখাওয়াতুল কবির দু’জনেই জঙ্গী প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানে চলে যায়। সখাওয়াতুল কবির দেশে ফিরে জঙ্গী কর্মকা- পরিাচালনা করতে থাকে। ইজাজ পাকিস্তানেই থেকে যায়।

সূত্রটি বলছে, ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পেশোয়াবের সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে ৬ জঙ্গী সশস্ত্র বোমা হামলা করে ও গুলি চালায়। এক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সামনে ক্লাসের ভেতর গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যা করে। শিক্ষার্থীদেরকে ঐ দৃশ্য দেখতে বাধ্য করে। শিক্ষক মারা যাওয়ার পর ক্লাসে থাকা ১৪২ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষককে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে জঙ্গীরা।

এমন ঘটনার পর থেকে পাকিস্তানে জঙ্গী ঘাঁটিগুলিতে সাঁড়াশি অভিযান চলতে থাকে। ধারাবাহিক অভিযানে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের জে এম বির আমির সাইদুর রহমানের মেয়ের জামাই ইজাজ ওরফে কারগল সহ ৪ বাংলাদেশী জঙ্গী মারা যায়। ইজাজের স্ত্রী এখনও পাকিস্তানেই আছে। সে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নিহত অপর তিনজন বাংলাদেশী জঙ্গী হচ্ছে জে এম বির আমির সাইদুর রহমানের আর এক মেয়ের জামাই পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার পর গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী সখাওয়াতুল কবিরের ভাগ্নি জামাই অভি, পাকিস্তানে অবস্থানরত বাংলাদেশী নারী জঙ্গী ফাতেমার স্বামী সায়েম ও সায়েমের বোন জামাই শামীম।
সাখাওয়াতুল কবীরের ভাগ্নি, নিহত সায়েমের স্ত্রী ফাতেমা ও সায়েমের বোন এখনও পাকিস্তানেই রয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঐ দেশ দুটিতে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায় পাকিস্তানে থাকা নারী জঙ্গীদের সঙ্গে ভারতে গ্রেফতার হওয়া দুই নারী জঙ্গী এবং বাংলাদেশে সর্বশেষ প্রজ্ঞা দেবনাথ সহ এ যাবত ৩৭ জন নারী জঙ্গী গ্রেফতার হলো। এদের মধ্যে প্রথম সারির অন্তত: ১০ নারীর সঙ্গে দেশ-বিদেশের বহু জঙ্গী সংগঠনের যোগাযোগ ছিল। এই তথ্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশে নারী জঙ্গীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলে আসছে। অভিযানে ২০১৬ সালে ১৫ আগষ্ট ঢাকার মগবাজারে ও গাজীপুরে সাঁড়াশি অভিযান চালালে গ্রেফতার হয় নারী জঙ্গী স্কোয়াডের সদস্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ইসতিসনা আকতার ঐশী (২৩), জামায়াতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী বিভাগের ছাত্রী ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌ (২২) , খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা (২৩) ও আকলিমা রহমান ওরফে মনি (২৩), গ্রেফতারকৃতরা সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুভা ওরফে তাহেরা, সায়লা ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে রানী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলেয়া ওরফে তিন্নী ওরফে তিতলি, মনিরা জাহান ওরফে মিলি ও ছাবিহা ওরফে মিতু নামে দশ নারী জঙ্গীর তথ্য দেয়।

এভাবে ২০১৬ সাল থেকেই নারী জঙ্গীরা গ্রেফতার হওয়া সুরু হলেও তাদেরকে দলে ভেড়ানো হচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে। জে এম বি যেসব জঙ্গীদের দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে, তাদের দিয়ে জে এম বি নারী স্যুইসাইডাল স্কোয়ার্ড গঠন করে দেশে বড় ধরণের নাশকতা চালাতে চায়। আর আনসার আল ইসলামের চাহিদা হলো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টার্গেট করে সুনির্দিষ্ট হত্যাকান্ড চালানো এবং এ জন্যে তারাও নারী জঙ্গীদের স্যুইসাইডাল স্কোয়াড গঠন করে চলেছে।

চলতি বছরে পরিচালিত অভিযানে নব্য জে এম বি, আনসার আল ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আল্লাহ্র দলের অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এ যাবত এ বছর ১১ জন নারী জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। তারা সবাই আত্মস্বীকৃত জঙ্গী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাও আছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা জঙ্গীবাদে মদদ জোগানোর পাশাপাশি অর্থ সহায়তাও করে থাকে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার, তার স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা আছে। তারা পল্লবীর নিজ বাড়ীতেই জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলেছিল।

বিস্তারিত এই প্রতিবেদনটি তিনটি দেশেরই বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মোট প্রায় ১৫০ কোটি শান্তিকামী মানুষের জন্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়। সন্ত্রাসমুক্ত রাজনীতি যাঁরা চান তাঁদের জন্যেও মারাত্মক উৎকণ্ঠা বিষয়।
বিশ্বজোড়া করোনা সংক্রমণ বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশের দেশগুলিতে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ মানুষকে যেভাবে অসহায়ত্বের শিকারে পরিণত করেছে-সেই অসহায় পরিবেশটি ধর্মান্ধ মতবাদ প্রচারের যতার্থই অনুকূল এবং সন্দেহ নেই, নানা নামে নামান্বিত জঙ্গীরা সেই সুযোগটা গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়েছে ত্রিদেশীয় নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে। পাকিস্তান তার গণতন্ত্রহীনতা ও নানাভাবে দীর্ঘকাল যাবত সেদেশের মানুষের মনে বিরাজমান ক্ষোভ এবং অস্ত্রে চোরাকারবারীর অবাধ বিস্তৃতি সে দেশে বহুকাল যাবত জঙ্গী প্রশিক্ষণ, জঙ্গী উৎপাদন প্রভৃতির অবাধ লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়ে আছে।

আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান হাজার হাজার মাইল সীমান্ত ও জঙ্গীদের এ দেশ থেকে সে দেশে, সে দেশ থেকে যাতায়াতের বহুলাংশে নিরাপদ সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছে। এদেশে বিপদে পড়লে ওদেশে গিয়ে পালানো আবার ওদেশে বিপদে পড়লে এ দেশে এসে পালানোর সুযোগটিও তারা হামেশাই ব্যবহার করে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে অথবা ম্যানেজ করে।

তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরন্তর দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্য্যন্ত নানাভাবে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের নিয়মিত উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকে ও বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো প্রয়োজন।

আমাদের র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় তাদের জঙ্গী বিরোধী তৎপরতা এবং জঙ্গীবাদে নারী সংশ্লিষ্টতা ও ত্রিদেশীয় নেটওয়ার্ক গঠনের তথ্য উদঘাটনের জন্য। তবে, মানতেই হবে, জঙ্গীবাদ একটি আদর্শকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম বিশ্ব জঙ্গীবাদ ও জঙ্গী উৎপাদনের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে যদিও ক্ষেত্র বিশেষে কোথাও কোথাও ব্যতিক্রমী ঘটনাও আছে-তবে তা অনুল্লেখ্য ব্যতিক্রম।

পুলিশী তৎপরতা জঙ্গী ক্রিয়াকলাপ দমিয়ে রাখতে পারে, কিছু ঘটে গেলে দায়ীদের পাকড়াও করে জেলে পাঠাতে পারে কিন্তু জঙ্গীবাদের আদর্শের রোধ করতে পারে না।

জঙ্গী আদর্শ প্রতিরোধে রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন

জঙ্গী আদর্শের উৎখাত না ঘটাতে পারলে বঙ্গী উত্থান, উৎপাদন ও ক্রিয়াকলাপের মূল্যোৎপাটন সম্ভব না। তার একমাত্র প্রতিরোধক হলো অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষরাজনীতির প্রসার। এটা কিন্তু সম্ভব হয়েছিলো পাকিস্তান আমলের ২৩ বছর ব্যাপী পাকিস্তানী আদর্শের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এবং ঐ পশ্চাৎমুখী আর্দশকে পরাজিত করেই আমরা চাঁদ-তারা খচিত পতাকা রক্তের উত্তাপে পুড়িয়ে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় বিজ্ঞান মনস্ক চেতনা বা প্রত্যয় নিয়ে একাত্তরে লাল-সবুজ পতাকা উড্ডয়ন করেছিলাম-বাহাত্তরের সংবিধানে স্পষ্টাক্ষরে তা লিখিতও হয়েছিল চার রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি হিসেবে।

আজ পুনর্বার তেমন আদর্শিক প্রতিরোধ, সংবিধানের বাহাত্তরে প্রত্যাবর্তন, পাঠ্যপুস্তকের অসাম্প্রদায়িকীকরণ, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামী এবং ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধকরণ বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান ঘটনানোর জন্য অপরিহার্য্য। বিষয়টি গণতান্ত্রিক ও বাম প্রগতিশীল শক্তিসমূহ যত দ্রুত উপলব্ধি করে ঐক্যবন্ধ হবেন ততই মঙ্গল।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test