E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বিজয়া’ নাটকের পেছনে অন্য কোন ‘নাটক’ নেই তো? 

২০২০ অক্টোবর ১৪ ১৪:৩৫:১০
‘বিজয়া’ নাটকের পেছনে অন্য কোন ‘নাটক’ নেই তো? 

শিতাংশু গুহ


বাংলাদেশে পূজার নাটক ‘বিজয়া’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক চলছে। বয়কটের ডাক দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি ‘লাভ-জ্বিহাদ’-কে উস্কে দিচ্ছে। ঘটনা সেই পুরানো, হিন্দু নায়িকা, প্রেমিক নায়ক মুসলিম। দেশের বিনোদন জগতে এর চাহিদা ব্যাপক। নিন্ম মানের নির্মাতারা এ ধরণের ‘কাতুকুতু দেয়া’ নাটক বা সিনেমা তৈরী করে ‘টু-পাইস’ কামান। ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এনিয়ে একটি স্টোরি করেছে, এতে বলা হয়েছে, নাটকের নাম ‘বিজয়া’। নির্মাণ করছেন আবু হায়াৎ মাহমুদ। বাংলাদেশের নাটক ভালো, সুনাম আছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ‘শো-বিজ’ প্রতিবেদকের ভাষায় নাটকের মূল বক্তব্য হচ্ছে: বিশ বছর বড় প্রভাবশালী স্বামী হরিদাসের নিষ্ঠূর আচরণে বিজয়া ভেঙ্গে পড়লেও একসময় জীবনকে সহজভাবে মেনে নেয়। এরমধ্যে তার ভালবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যায়। বিজয়াকে নিজের করে না পেলেও নায়ক রাশেদ তাকে নুতন করে বাঁচতে শেখায়। নির্মাতা সূত্রে জানা যায়, নাটকটি বাংলাভিশনের জন্যে নির্মিত হচ্ছে। 

এই নাটকের লেখক শোয়েব চৌধুরী। তিনি কি সাপ্তাহিক ব্লিজ সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ওরফে শোয়েব চৌধুরী, বা সালাহ চৌধুরী? ধারণা করি এঁরা সবাই একই ব্যক্তি এবং যদি তাই হয়, তবে বুঝতে হবে, ঢাকার নাটকের বারোটা বাজতে আর বেশি বাকি নেই? আমি তাঁকে চিনি। ২০০১-র পর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে পরিচয় ‘উইকলি ব্লিজ’ সম্পাদক হিসাবে। তার সাথে ছিলেন ডঃ রিচার্ড বেঙ্কিন, এই ভদ্রলোকের ঘাড়ে ভর করে শোয়েব চৌধুরী অনেকটা উপরে উঠে যান, যদিও এখন এদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। কেন? এর কারণ উইকিপিডিয়া থেকে বলছি। নাটক নিয়ে পরে কথা বলবো, শুধু এটুকু বলা যায়, শোয়েব চৌধুরী যেই নাটকের রচয়িতা সেটি সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণা থেকে উৎসারিত, তা বলা বাহুল্য। আর যদি এই শোয়েব চৌধুরী ব্লিজ সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী না হ’ন, তবে তার সম্পর্কে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। ভালো খবর যে, বাংলাভিশন নাকি নাটকটি দেখাবে না?

উইকিপিডিয়া বলছে, সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ২৯ নভেম্বর ২০০৩’এ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হ’ন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও অন্যান্য চার্জ গঠন করা হয়। মামলায় বলা হয় তিনি ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ এজেন্ট। ৯ই জানুয়ারী ২০১৪ আদালত তাকে ৫০৫(এ) ধারায় দণ্ডিত করে। ২০১১’র মার্চ মাসে ‘দি রুট্ এন্ড ব্রাঞ্চ এসোসিয়েশন’ যা ইসরাইল ও অন্যান্য জাতির সাথে সহযোগিতা করে থাকে, এই সংগঠন এদের ‘ইসলাম-ইজরাইল’ ফেলোশীপ পদ থেকে শোয়েব চৌধুরী-কে বহিস্কার করে? কারণ, ইতিমধ্যে বিভিন্ন রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, শোয়েব চৌধুরী ইহুদী মহিলা থেকে হাজার হাজার ডলার আত্মসাৎ করেছেন। ৭ই নভেম্বর ২০১২ ঢাকা কোর্ট আর এক আত্মসাৎ মামলায় তাকে জেলে পাঠায়। এই মামলাটি করেন তারই পার্টনার বাংলাদেশ সেন্টার অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন। ২০১৫ সালে এই মামলায় তিনি চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হ’ন।

শুধু কি এসব কারণেই বলছি যে, ‘শোয়েব চৌধুরী যেখানে, সাম্প্রদায়িকতা সেখানে’? না! মামলার ব্যাপারে শোয়েব চৌধুরী নিজেও বলেছেন, এসব নাকি উদ্দেশ্য প্রনোদিত? উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, শোয়েব চৌধুরী ছিলেন ‘ইনকিলাব টেলিভিশন’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তিনি দৈনিক ইনকিলাবের করসপন্ডেন্ট ছিলেন। ইনকিলাব টেলিভিশন বিক্রি হয়ে গেলে শোয়েব চৌধুরী ৩০% মালিকানার দাবিতে মামলা করেছিলেন, যার মূল্য প্রায় এক মিলিয়ন ডলার। এত টাকা তিনি কোথায় পেয়েছিলেন? ২০০১-র সংখ্যালঘু নির্যাতনের পর তাঁর ভূমিকা দেখেছি। ড: রিচার্ড বেঙ্কিন তাঁকে ‘এন্টি-জ্বিহাদী’ এবং ‘প্রো-ইহুদী’ ভাবমুর্ক্তি গড়ে দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে ‘হাউস রিজুলিউশন ৬৪’ পাশ হয়েছিলো। তাঁর একটি মামলা বিচারকালে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ‘পর্যবেক্ষক’ পাঠিয়েছিলো। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ১৪ নভেম্বর ২০০৬ তাঁর পক্ষে প্রস্তাব পাশ করেছিলো। অনেক দেশের বিভিন্ন সংস্থা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলো। এখন আর কেউ নেই, সবাই কেটে পড়েছেন। শোয়েব চৌধুরী কি তাই নাট্য জগতের ওপর ভর করলেন? দেশে নাট্যাঙ্গনে লেখকের কি এতই অভাব?

এবার দেখা যাক ‘বিজয়া’ নাটকটি কি? বলা বাহুল্য, নাটকটি এখনো প্রর্দশিত হয়নি। কিছু মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে যেটুকু এসেছে, তাই থেকে বলা যায়, এর কাহিনী একটি হিন্দু মেয়ের সাথে একটি মুসলিম ছেলের প্রেম। বলতে মানা নেই, বিজয়া’র বেশে তিশা-কে চমৎকার মানিয়েছে। বিজয়ার হিন্দু স্বামীকে মদ্যপ, বয়স্ক, নিষ্ঠূর, বোকা হিসাবে দেখানো হয়েছে। নায়ক রাশেদ চরিত্র-কে দেখানো হয়েছে দেবতা-তুল্য! কিছু হিন্দু বলছেন, এটি ‘লাভ-জ্বিহাদ’ উস্কানী? এঁরা নুসরাত ইমরোজ তিশা-কে নাটক থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছেন। এরা প্রশ্ন করছেন, ঈদের অনুষ্ঠানে কি একটি হিন্দু ছেলের সাথে একটি মুসলিম মেয়ের প্রেম দেখাতে পারবেন? প্রশ্ন উঠছে, ‘ক্রাউন এন্টারটেনমেন্ট’ কি সরকার ও হিন্দুদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইছেন? স্মর্তব্য যে, ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে কিন্তু ‘শেখ হাসিনা বিরোধী’ কর্মকান্ড দেখা গেছে। ‘বিজয়া’ নাটকের পেছনে অন্য কোন নাটক’ নেই তো? নির্মাতা, প্রযোজক, পরিচালক কি দায় এড়াতে পারেন? আপনাদের কেন ‘সাম্প্রদায়িক বলা হবেনা?

সাপ্তাহিক ব্লিজ-এ ৯ই অক্টবর একটি নিউজে বলেছে, ইস্কন ও রেডিকেল হিন্দুরা ‘বিজয়া’ নাটক বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। এখানে ইস্কন আসলো কোত্থেকে? ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’? এই পত্রিকাটি এ ধরণের নিউজ সচরাচর কোন হিন্দু মহিলার নামে প্রকাশ করে, ২০০১-র পরও তাই দেখেছি। প্রশ্ন হলো, ঐসব মহিলা কি আদতেই আছেন, না সম্পাদক প্রয়োজনের তাগিদে এদের সৃষ্টি করেন? সময়নিউজটিভি একটি ফালতু সংবাদ প্রকাশ করে বলেছে, কারা নাকি প্রযোজক, নির্মাতা, নায়ক-নায়িকাকে হুমকি দিচ্ছে? এই নাটক নিয়ে উকিল নোটিশ হয়েছে। হয়তো মামলাও হবে। সাংস্কৃতিক জগতের মানুষগুলোকে একটু উদার হতে হয়! সবাই অনন্ত জলিল হলে কি চলবে? বাংলাদেশের বিনোদন জগৎকে টিকে থাকতে বা সামনে এগিয়ে নিতে হলে এটি ‘ধর্ম-মুক্ত’ রাখা দরকার। সবশেষে বলা যায়, যেহেতু নাটকটি এখনো প্রদর্শিত হয়নি, তাই সুযোগ আছে, এটি সামান্য এদিক-ওদিক করে, কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে, একটি নির্মোহ, আনন্দঘন পূজার নাটক হিসাবে প্রদর্শন করার। এতে আখেরে সবার লাভ। করোনা-কালে দেশে এনিয়ে আবার একটি ঝামেলা বাধুক তা কেউ চায়না।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test