E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে মোল্লাদের বিতাড়িত করতে হবে

২০২০ ডিসেম্বর ১১ ২৩:২০:১১
রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে মোল্লাদের বিতাড়িত করতে হবে

আবীর আহাদ


অর্দ্ধশিক্ষিত মোল্লাদেরকে ধর্মের কারণে সমাজে সম্মান দেয়ার ফলে তারা ভেবে বসেছে যে, তারা খুব জ্ঞানী, আর সবাই অজ্ঞ ! তাই তারা নিজেদের একপেশে সীমিত জ্ঞান দিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে সবাইকে তাদের অধীনস্থ ভাবে । তাদের একটা বিশাল অংশ ধর্মের আলখাল্লা পরে যাবতীয় ব্যভিচার ও হিংসার বিষবাষ্প ছড়িয়ে সমাজকে কলুষিত করে চলেছে । তারা পরজীবী । দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এদের কোনোই ভূমিকা নেই । তাদের একমাত্র পুঁজি ধর্মব্যবসা । তারা ধর্মান্ধ । তারা তাদের এই অন্ধত্ব দিয়ে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষের ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সমাজে তাদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চায় । পবিত্র কোরআনের কিছু সুরা ও মছলা মুখস্থ করে তারা বিজাতীয় ভাষার কিছু কবিতা আউড়ে প্রমাণ করে যে, তারা বড়োই ধর্মীয় পণ্ডিত । অথচ তাদের চেয়ে সাধারণ মুসল্লিরা অনেক বেশি ধর্মপ্রাণ । তারা নিজেদেরকে সবজান্তা ভাবতে গিয়ে সমাজ ও যুগের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ধর্মের বস্তাপচা ফতোয়া মেরে গোটা দেশকে তারা তাদের করায়ত্তে নিতে চায় । সমাজ ও দেশকে পিছিয়ে দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করতে চায় । ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষের ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায় । অথচ যে দেশটার ওপর দাঁড়িয়ে তারা আজ দেশটাকে করায়ত্ত করতে চাচ্ছে, সে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ভাষা, জাতীয়তা, মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও মূলনীতি কোনোকিছুই তারা মানে না ।

তাদের একটি বিশাল অংশ মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মসজিদ কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ছাত্র বলৎকার, নারী শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ব্যভিচারে লিপ্ত থাকলেও এসবের বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ নেই; ফতোয়া নেই ! দেশের মধ্যে দুর্নীতি ও লুটপাটের যে মহোৎসব সংঘটিত হচ্ছে, এসবের বিরুদ্ধেও তাদের কোনো বক্তব্য বা ফতোয়া নেই । কারণ যারা মনের দিক দিয়ে নষ্টা, তারা নষ্টাচারের বিরুদ্ধে লা-জবাব থাকবে, এটাই স্বাভাবিক !

তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ অংশ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিবাহিনীর সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, আলমুজাহিদ প্রভৃতি বাহিনীর সশস্ত্রযোদ্ধা হিশেবে তারাই হানাদার বাহিনীকে গ্রাম গঞ্জ শহর নগর বন্দর প্রভৃতি জনপদে নিয়ে এসেছিলো । তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ গণহত্যা নারীধর্ষণ অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজে অংশগ্রহণ করেছিলো । শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বাঙালি নারীদের 'গণিমতের মাল' ফতোয়া দিয়ে তাদেরকে ভোগ করা ইসলামসম্মত বলে ফতোয়াও দিয়েছিলো । ৩০ লক্ষ মানুষকে নিধন ও পৌনে ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হরণযজ্ঞে তারা তাদের প্রভূ পাকিবাহিনীর সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো । সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরেও তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়নি । কী পরিতাপের বিষয় এই যে, তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মসমূহকেও তাদের একই মতাদর্শে দীক্ষিত করেছে । মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত স্বাধীন দেশে পাকিচেতনা নিয়ে তাদেরকে সগৌরবে অবস্থান করতে দেয়া যায় না ।

সুতরাং এহেন অর্দ্ধশিক্ষিত দেশ ও জাতিদ্রোহী, পাষণ্ড একপেশে ও ধর্মের আচ্ছাদনে ভালোমানুষের ছদ্মবেশধারী অসভ্য এক কিংভূতকিমাকার প্রজাতিকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মাটিতে ধর্মের নামে এভাবে বিচরণ করতে দেয়া যায় না । তাদেরকে দেশের প্রচলিত আইনের নিয়ন্ত্রণে এনে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করে ধর্মীয় অঙ্গনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি ।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test