E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিজয় দিবস ও হালের রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ

২০২০ ডিসেম্বর ১৬ ০০:৩২:৩২
বিজয় দিবস ও হালের রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ

রণেশ মৈত্র


১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর ও ২০১৮ সালের অত্যাসন্ন ১৬ ডিসেম্বর। দিন দু’টি সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ। এক অসাধারণ জাতীয় আন্তর্জাতিক তাৎপর্য্যবহ দু’টি দিনের মধ্যকার ব্যবধান নয়। কিন্তু এরই মধ্যে বাংলাদেশে কতই না পরিবর্তন ঘটে গেলা এবং তা আমাদের অগোচরে নয় রীতিমত আমাদের সকলের চোখের সামনেই বিন্দুমাত্র আড়ালে আবডালে নয়।

সব চেয়ে বড় পরিবর্তনের সূচনাটি অবশ্য ঘটেছিল একটি মর্মান্তিক হত্যালীলার মাধ্যমে ১৫ আগস্ট রাতের গভীরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের সপরিবারে নিধনের মাধ্যমে। সমগ্র জাতি সেদিন হয়েছিল হতচরিত ও বমূঢ়-সমগ্র বিশ্ব স্তম্ভিত। বাঙালি জাতি শোকাচ্ছন্ন। এই হত্যালীলার মাধ্যমে শুধুই একটি ব্যক্তি বা একটি পরিবারই নিহত হলেন তা নয় নিহত হলো মুক্তিযুদ্ধ ও তার পূর্ববর্তী কয়েকটি দশকব্যাপী সংঘটিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি মননে গড়ে ওঠা মহামূল্যবান আদর্শ। সে ও তো আজ ৪৩ বছর আগের কথা। কিন্তু ঐ হত্যালীলার জন্য দায়ী অপরাধীদের এই সময়কালের মধ্যে বিচার ও শাস্তি প্রদানের সুকঠিন ঘটনাটি ঘটলেও “আদর্শ হত্যার জন্য কাউকে সনাক্ত করা হয় নি, করার কথা রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্তত: ভাবাও হয় নি।

এ এক দুঃসহ পরিস্থিতি বটে। আর এই পরিস্থিতির দীর্ঘস্থায়ীত্বের দুর্লভ ও অপত্যাশিত সুযোগে বিপুল পরিমান আবর্জনা রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নিদারুণ ও অব্যাহতভাবে আক্রমন করে ঐ কাঠামো এবং ঐতিহ্যবাহী গৌরবোজ্জল আদর্শসমূহকে বিধ্বস্ত করেই চলেছে।

বারবার আদর্শ ‘আদশ্য’ বলে উল্লেক করলেই তা প্রিয় পাঠক পাঠিকাদের কাছে স্পষ্ট নাও হতে পারে। তাই সেগুলির উল্লেখ এবং পটভূমিকাসহ সাধ্যমত তার ব্যাখা দিতে চাই। ইংরেজ আমলে আমরা ছিলাম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন। সে পরাধীনতাকে জাতি ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে কেউই আমরা মেনে নিই নি। তাই তদানীন্তন অখন্ড ভারতবর্ষের সকল অঞ্চলের মানুষই সুদীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই শত বছর পরে বৃটিশ সাম্রাজ্যবদকে পরাজিত করে বিকালঙ্গ হলেও স্বাধীনতা অর্জন করি রাজনৈতিক স্বাধীনতা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থেকে যায় অনর্জিত। সেটি অর্জন তো দূরের কথা যে বিকলাঙ্গ স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালে অর্জিত হলো তা ছিল বহু রোগে রোগাক্রান্ত।

প্রথমত: ভারত বর্ষকে খন্তিত করে জন্ম নিল দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। তার মধ্যে পাকিস্তানের জন্ম সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। রাষ্ট্রটি জন্ম নেয় “ইসলাম” কায়েমের অঙ্গীকার নিয়ে। পাকিস্তানের সপক্ষে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোট পড়েছিল অবিভক্ত বাংলায়। অর্থাৎ তদানীন্তন সাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব দিব্যি প্রবাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন জনগণের মধ্যে। বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে।

পাকিস্তান রাষ্ট্রর জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং অপরাপর বাঙালি অবাঙালি মুসলিমলীগ নেতৃবৃন্দ সমস্বরে বলতে লাগলেন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। বাংলা ভাষা ইসলাম বিরোধী, মুসলিম-বিরোধী এবং পাকিস্তান বিরোধী হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাষা এবং সে কারণে বাংলা কদাপি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতে পারে না। এমন প্রচারে তারা ছিলেন ক্লান্তিহীন। এমনকি, না। এমন কি, রাষ্ট্রের জনক মুসলিমলীগ প্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রদত্ত ভাষণে সদম্ভে বলে ওঠেন “ঊর্দু এবং একমাত্র ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।” সেদিনকার ছাত্র সমাজ তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠেন “না’ বলে। বিষ্মিত ক্ষুব্ধ জিন্নাহ তৎক্ষণাৎ হল ত্যাগ করে চলে যান ব্যাপক প্রহরাধীনে।

অত:পর সীমা থেকে অসীমে শহর-নগর থেকে গ্রামে গ্রামান্তরে সমগ্র পূর্ববাংলা ব্যাপী গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মানুষ বিক্ষোভে হয়ে ওঠে উত্তাল-বিশেষত: ছাত্র ও যুব সমাজ। এই বিক্ষোভ দমনে পাকিস্তানের শাসক শোসক হয়ে ওঠে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য। চলতে থাকে জেল জুলাুম-গ্রেফতার অভিযান। কিন্তু জন বিক্ষোভ তাতে থেমে যায় নি-বরং হয়ে পড়েছে আরও বিস্তৃত। নিরন্তর পশ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হতে থাকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পূর্ববাংলা। পরিণত হাজারে হাজারে গ্রেফতার ও কারা নির্য্যাতন। ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ঐ নির্য্যাতনের মুে জনচিত্তে এতই স্থান করে নিলেন যে কার্য্যত: তাঁরা পরিগণিত হলেন জাতীয় বীর এ। অর্জন করলেন বিপুল শ্রদ্ধা ও আস্থা।

গড়ে উঠতে শুরু হলো অসাম্প্রদায়িক নানা সংগঠন। পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গড়ে উঠেছিল আগেই ১৯৪৮ সালে বামপন্থী প্রগতিশীল অসম্প্রদায়িক যুব সংগঠন হিসেবে। সংগঠনটি ১৯৪৮ ও বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করলেও ইতিহাসে তা যেন অনেকটাই বিষ্মৃত।

যা হোক, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী সময় গড়ে তোলা হয় বন্দীমুক্তি আন্দোলন এবং সেই সাথে দাবী উত্থাপিত হয় “মুসলিম লীগ গদী ছাড়” খুনী নূরুল আলম বাংলা ছাড়ো” ইত্যাদি। পরিণতিতে দেশজোড়া সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকায় অবশেষে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর আংশিক নতি স্বীকার। পূর্ব বাংলায় (মাত্র একটি) সাধারণ নির্বাচনের দাবী মেনে নিয়ে দিন তারিখ ঘোষণা করা হলো। ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ দাবীতে গড়ে উঠলো মুসলিমলীগ বিরোধী যুক্তফ্রন্ট হক-ভাসানী-সোহরাওয়াদীর নেতৃত্বে। শতভাগ মানুষ মুসলিমলীগ শাসনে ত্যক্ত বিরক্ত। তাদের তত্ত্ব ধর্মীয় দ্বিজাকতত্ত্ব মুসলমানের রাষ্ট্রের ধারণা পরিত্যক্ত হয়ে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার শক্তিশালী মানষিক আদর্শবোধ। বাঙালি জাতীয়তাবাদের (মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিপরীতে) পুনরুন্মেষ ঘটলো। ফলে আদর্শ হিসেবে দ্বিজাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান হলো পরিত্যক্ত।

এর পরে বাঙালি আর পিছু হটে নি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পর্য্যন্ত।

নির্বাচনে মুসলিমলীগের শোচনীয় পরাজয় ও যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয় বাঙালীকে নতুন নতুন বিজয় অর্জনে উৎসাহিত করলো। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠিত হলেও ঐ সরকারকে বে-আইনী ভাবে মাত্র ৫৮ দিনের মাথায় অপসারণ করে গভর্ণরী শাসন তথা কেন্দ্রীয় সরকারের তথা মুসলিমলীগের শাসন চাপিয়ে দিয়ে হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার ও বিনা বিচারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটকের অভিযান শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গণে কেনাবেচা শুরু হয় যার দুর্ভাগ্যজনক শিকারে পরিণত হয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দীকেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীসভায় আসন গ্রহণ করেন। পূর্ব বাংলায় থাকলো গভর্নরী শাসন।

কিন্তু জনতার পর্য্যায়ে ঐ আতœসমর্পণ ধিকৃত হয়-৯২(ক) ধারায় প্রবর্তিত গভর্ণরী শাসনের প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের নি:শর্ত মুক্তি ও বিনাবিচারে আটক রাখার এবং যাবতীয় নিবর্তনমূলক আইন ও বাক ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধকারী কালাকানুন বাতিলের দাবীতে ব্যাপক আন্দোলন শুর হলে এক পর্য্যায়ে সরকার আংশিক নতি স্বীকার করে গভর্ণরী শাসন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যুক্তফ্রন্টে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে আবু হোসেন সরকারের ও কৃষক শ্রমিক পার্টির নেতৃত্বে খ-িত যুক্তফ্রন্টের সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের এক পর্য্যায়ে আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদিত হলে আওয়ামীলীগ নেতা আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ কংগ্রেস গণতন্ত্রী পার্টি কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা পূর্ববাংলার ক্ষমতাসীন হন। এই মন্ত্রীসভা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনাবিচারে আটক বন্দীদের মুক্তির নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান স্বয়ং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে সেখানে আটক সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করে আনেন।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর দাবী উঠেছিল পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশের জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও অপরাপর প্রাদেশিক সরকার বাতিল করে, দেশব্যাপী নতুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রনীতি ও পূর্ববাংলার স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহী সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে তীব্য মতদ্বৈধতার ফলে কাগমারীতে ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগ সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের একাংশ ঐ সম্মেলন বর্জন করে ঢাকায় পাল্টা কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ও তাঁর অনুসৃত তাবৎ নীতির অনুমোদন দান করলে প্রতিবাদ স্বরূপ আওয়ামীলীগের বৃহত্তর অংশ দল থেকে পদত্যাগ করেন।

পরিণতিতে ১৯৫৭ সালের ২৬-২৭ জুলাই ঢাকার সদরঘাট এলাকার রূপমহল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে এক নতুন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী এক নতুন প্রগতিশীল দল গঠিত হয়। পাকিম্দান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পূর্বপাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশে নবগঠিত দলটির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী নেতাদের নেতৃত্বে। নতুন বাতাবরণ সৃষ্টি হয় পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতা কেন্দ্রীক রাজনীতির সমাধিক রচনা প্রত্যয়ে।

তারপর থেকে ন্যাপ এ দেশের রাজনীতিকে অসম্প্রাদায়িকতার পথে আনতে দৃঢ়ভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিদেশের মাটিতে মৃত্যুর পর একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু ও দৃঢ়তার সাথে অসম্প্রদায়িকতা ও বাঙালির সার্বিক স্বার্থে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন জেল, জুলুম, নানা নির্য্যাতনকে উপেক্ষা করে। ৬-দফা/এগার দফার প্রবল জোয়ারে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি দূড়ান্তভাবে পিছু হটতে শুরু করে। বাঙালি তরুণ-তরুণীরা অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় দীক্ষিত হয়ে আপোসহীন ভাবে বাঙালির স্বার্থে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এসে যায় ৭০ এর নির্বাচন বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একচ্ছত্র বিজয়। সামরিক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শহীদ তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় এবং সমগ্র ভারত ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সার্বিক সহযোগতায় নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন, বাঙলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের যুগান্তকারী ঘটনার পটভূমিতে ১৯৭২ এর সংবিধান এবং তার চার মৌলিক নীতি সংবিধান এবং তার চার মৌলিক নীতি ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র মুক্তিযদ্ধের আজর্শিক বিজয় ঘটলো চূড়ান্তভাবে ঐ সংবিধান গ্রহণের মাধ্যমে। পতন ঘটলো পাকিস্তানী দ্বিজাতিতত্ব নামক সাম্প্রদায়িক চেতনা ও আদর্শের।

কিন্তু দিনে দিনে দিব্যি আমরা পরিবর্তিত হয়ে আর কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি ? ঠিক বাহাত্তরের সংবিধান বর্ণিৃত মৌলিক রাষ্ট্রীয় আদর্শের বিপরীত অব্স্থানে যা একমাত্র পাকিস্তানেরই মানায়-বাংলাদেশের মানায় না। কারণ স্বাধীনতার মৌলিক সর্বজনীন চেতনা ধারণকারী বাহাত্তরের মূল সংবিধানে “বিসমিল্লাহ” জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলির বৈধতা ও রাষ্ট্রধর্ম প্রভৃতি বিভেদাত্মক-বৈষম্যমূলক বিষয়াদি নিষিদ্ধ ছিল। আজ তা দিব্যি বৈধ।

এখানেই কিন্তু থামি নি আমরা। প্রতিদিনই আরও এগুচ্ছি তবে নিশ্চিতভাবেই তা পিছনের দিকে পাকিস্তানি ধারায়।
নতুন নতুন আতংকজনক ঘটনাও দিব্যি ঘটে চলেছে। হেফাজতে ইসলামের প্রকাশ্য দাবিতে তাৎক্ষণিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে জাষ্টিসিয়া নামক ভাস্কয্যের অপসারণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকোর্সের সাম্প্রদায়কীকরণ এবং কওমী মাদ্রাসার শেষ ডিগ্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে বিন্দুমাত্র পরামর্শ ব্যতিরেকেই তাদের সর্বোচ্চ কওমী ডিগ্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রীর সমতুল্য বলে বিবেচনা করে সংসদে আইন পাশ করা হলো-যা সভ্যতা-বিধ্বংসী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশী ও বঙ্গবনন্ধুর আদর্শেরও পরিপন্থী।

তালিকা দীর্ঘ করবো না শুধু দাবী করবো অবিকল বাহাত্তরের সংবিধান পুনরুদ্ধার করা হবে বলে সকল রাজনৈতিক দল জাতির কাছে অঙ্গীকার করুণ নিজ নিজ নির্বাচনী কর্মসূচি ও প্রচারনায় এবং দলীয় মেনিফেষ্টোগুলিতেও।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test