E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

হেফাজতে ইসলামকে আর বাড়তে দেয়া যায় না

২০২১ এপ্রিল ১৭ ১৩:২৮:৩৩
হেফাজতে ইসলামকে আর বাড়তে দেয়া যায় না

আবীর আহাদ


যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি : গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত বিশ্বাস করে না---এমন পুরনো ও নব্য মানুষরূপী জানোয়াররা হলো রাজাকার । এসব রাজাকাররা ইসলামী লেবাসধারী । এরা ধর্মের আলখাল্লা পরে সরলপ্রাণ মনুষ্য সমাজে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ধর্ম প্রচারের ছলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতিকে পথভ্রষ্ট করে আসছে । তাদের আচার আচরণ ও কার্যকলাপ দেখলে সত্যিই মনে হয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের বুকের মধ্যে একটি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত করে তারা ইসলামের সেবা করছে ।

ধর্মের মৌলিক ও মানবিকতার শিক্ষার স্থলে তারা অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে ধর্মের আবরণে যাবতীয় অনাচার বিকৃতি বর্বরতা পৈশাচিকতা ও দ্বন্দ্বসংঘাত সৃষ্টি করে বাঙালি সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে যাচ্ছে । এরা বিশেষ করে সাবেক মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রসংঘ (ছাত্রশিবির), নেজামে ইসলাম, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খিলাফত মজলিস, জেএমবি, বিএনপি, কতিপয় চৈনিক-বাম রাজনৈতিক দল প্রভৃতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সর্বশেষ একত্রিত মোর্চা "হেফাজতে ইসলাম" নামে আত্মপ্রকাশ করেছে ।

সর্বস্বাধীনতাবিরোধী এই হেফাজতে ইসলামের পেছনে আবার আন্তর্জাতিকভাবে যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় মুসলিম রাষ্ট্র । অপরদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহযোগী ভারতের সাথে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বাণিজ্যিক আধিপত্যকে কেন্দ্র করে একাত্তরের পাকি-বন্ধু চীনও বাংলাদেশের এ স্বাধীনতাবিরোধী মোর্চাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ।

দেশীয় দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের এমন পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে হেফাজতে ইসলাম স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে প্রতিহত করার নামে তারা মূলত: দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গত কিছুদিন আগে সারা দেশব্যাপী যে পৈশাচিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ জ্বালাও পোড়াও করেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর আক্রমণ, ব্রাক্ষণবাড়িয়কে তছনছসহ বিভিন্ন প্রান্তে তাণ্ডবীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে----এসবই ছিলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের অঘোষিত যুদ্ধের উন্মাদনাময় মহড়া । যে মহড়ায় পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশকিছু তাজাপ্রাণ ঝরেছে, বহু লোকজন আহত হয়েছে । বিশেষ করে তারা ব্রাক্ষণবাড়িয়কে এক টুকরো আফগানিস্তানে পরিণত করেছে ।

এই নারকীয়তার ক্ষত শুকাতে-না-শুকাতেই এরই মধ্যে হেফাজতী তাণ্ডবের অন্যতম জঙ্গি রাজাকার শাবক তথাকথিত মাওলানা আল্লামা মামুনুল হক পরনারী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে ব্যভিচার করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা খেয়েছে, এর মধ্য দিয়ে তাদের আইএস ও তালিবানি বর্বর চরিত্র উন্মোচিত হয়ে পড়েছে । একে একে আরো উন্মোচিত হচ্ছে মামুনুল হকসহ মোল্লাদের ব্যভিচার ও যৌন বিকৃতির বিস্ময়কর খবরাখবর । মামুনুল হকের ব্যভিচারকে ধর্মের নামে ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্যে হেফাজতি রাজাকারচক্রের বিকৃত উন্মাদনা আবারো প্রমাণ করছে যে, ধর্মকে ঢাল বানিয়ে যাবতীয় মানসিক বৈকল্য, প্রতারণা, মিথ্যাচার ও পৈশাচিকতার পক্ষে দাঁড়াতে তাদের বিবেকে বাঁধে না । তারা গায়ের জোর ও ধর্মীয় ফতোয়া দিয়ে অন্যায় ও অপরাধকে ঢাকা দিতে চায় । ধর্মকে পুঁজি করে তারা দেশের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধকল্পে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায় । তারা যেনো বাংলাদেশের মাটিতেই আরেকটি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সাজিয়ে ধর্ম চর্চা করে চলেছে !

অতএব দেশ, জাতি ও মানবতাবিরোধী অন্ধকারের অপশক্তি হেফাজতে ইসলামকে আর বাড়তে দেয়া যায় না । তারা আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা , গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে দুমড়ে মুচড়ে পদদলিত করে চলেছে । এদের ক্ষমা নেই । তাদেরকে এখন শিক্ষা দিতে হবে যে, এটা মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত বাংলাদেশ । রাষ্ট্র মহাপরাক্রমশীল । দেশ, জাতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনো অপশক্তির অস্তিত্ব স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে থাকতে পারে না । এখন রাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে কোন প্রক্রিয়ায় এ অপশক্তিকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে ।

তাদের বিরুদ্ধে চলমান গ্রেফতার অভিযান যেনো তামাশায় পর্যবসিত না হয় । তাদের প্রতিটি কার্যক্রম রাষ্ট্রদ্রোহিতাকে ছাপিয়ে গেছে । কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে যে, তারা হয়তো কিছুদিন পর ছাড়া পাবে । আর ছাড়া পেয়েই তারা সমাজে মজলুম ও বিপ্লবী ধর্মীয় নেতা হিশেবে আত্মপ্রকাশ করবে । জনগণও বুঝে নেবে এসব হুজুরেরা নির্দোষ । আওয়ামী লীগ ধর্ম তথা মুসলিম বিদ্বেষী সরকার । ইসলাম ও হুজুরেরা আওয়ামী সরকারের প্রতিহিংসার শিকার । এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মানুষ ধর্মীয় অনুভূতিতে তাড়িত হয়ে হেফাজতী হুজুরদের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে যাবে । এ সুযোগে হেফাজতে ইসলাম আরো দুর্বার গতিতে তাদের মিশন বাস্তবায়নে আরো বিপ্লবাত্মক ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধ অথবা কোনো বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপের মধ্যে ফেলে দেবে । এভাবেই তারা তাদের একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবে । সুতরাং কালসাপের যেমন মাথা গুড়িয়ে দিতে হয়, তেমনি হেফাজতে ইসলাম নামক কালসাপেরও মাথা গুড়িয়ে দিতে হবে, যাতে কোনোদিন কোনোকালে মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র বাংলাদেশকে নিয়ে তারা আর কোনো চক্রান্ত করতে না পারে ।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test