E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধাদের মনোকষ্ট ও অভিমান

২০২১ মে ২৩ ২৩:১৬:৫৪
মুক্তিযোদ্ধাদের মনোকষ্ট ও অভিমান

আবীর আহাদ


স্বাধীনতার সূর্যসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ জীবনের শেষ প্রান্তে অবস্থান করছে । অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন । তারা নানান রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত । প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত । অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই । পরিবার-পরিজনসহ তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন । আর্থিক কারণে অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেননি । যদিও বা কষ্টের ভেতরে থেকেও কিছু মুক্তিযোদ্ধা সন্তান উচ্চশিক্ষা নিতে পেরেছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি হিংসায় আক্রান্ত আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিশাল অঙ্কের ঘুষ দিতে না-পারার কারণে সবরকম যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাদের অনেকের চাকরি হয়নি । কোনো সরকার এমনকি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারও মুক্তিযোদ্ধা কোটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করেননি । উপরন্তু হৃদয়বিদারক বিষয়টি হলো, তাদের হাতেই বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি বাতিল হয়েছে ! পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত । জাতীয় সংবিধানে তাদের অবদানের স্বীকৃতি নেই । বিশাল সংখ্যক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অকারণে তাদের বীরত্বে ভাগ বসিয়ে চলেছে; রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ সবরকম সুযোগ সুবিধা সবার আগে তারাই ভোগ করছে ! ফলশ্রুতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সার্বিকভাবে চরম মনোকষ্ট নিয়ে আহাজারি করে মরছেন ! কোনো সরকার ও রাজনৈতিক দল এসব বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি ! মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্ট স্বাধীন দেশের আলো-বাতাসে বেঁচে থেকে অনেকে অনৈতিক পন্থায় শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে দেশবিদেশে চরম সুখের জীবনযাপন করছে, অনেকেই দেশের রাষ্টপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব, জেনারেল, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি প্রভৃতি হচ্ছেন, অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতাবোধ নেই ! শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু-কন্যা দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা মনে রেখেছন । আর সবার ক্রিয়াকলাপ ও হাবভাব দেখে মনে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সবাই একধরনের হীনমন্যতায় ভুগছেন !

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তর সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকার-আলবদরদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী জাতীয় সংসদে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন । অপরদিকে একনাগাড়ে চলমান এক যুগের উর্দ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা এড়িয়ে গোঁজামিলের সংজ্ঞায় যাকেতাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েই চলেছেন । আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেড় লক্ষের নিচে । কিন্তু বিদ্যমান তালিকায় সংখ্যাটি দু'লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজারের মতো । অর্থাত্ তালিকায় আশি/পঁচাশি হাজারই অমুক্তিযোদ্ধা ।

আমাদের এতো অনুনয় বিনয় যুক্তি, আন্দোলন ও লেখালেখি সত্বেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জামুকা এবং সরকারের উচ্চমহল একেবারেই নির্বিকার । তারা তাদের ইচ্ছা মাফিক মুক্তিযোদ্ধা তালিকাকরণ তো বটেই, এতো হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান দিয়ে প্রকৃত বীরদের মর্যাদার ওপর আঘাত হেনে চলেছেন । এটা কোন ধরনের সভ্যতা ও নৈতিকতা যে, ভুয়াদের বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করার পাশাপাশি তাদেরকে জনগণ তথা সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি দিতে হবে ? এটা যেনো তেল আর জলকে একত্রে মেশানোর সামিল ।

অনেকেই বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অতীতে যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে তার মূল কারিগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিভিন্ন সময়ের ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ । কথাটি অস্বীকার করার উপায় নেই । এবং সত্যিকার তদন্ত করলে কারা সেসব ভুয়ার কারিগর তা বের করা মোটেই কঠিন নয় । কিন্তু মূল কথাটি কিন্তু অন্যত্র । সরকার যখন বঙ্গবন্ধু সরকারের সংজ্ঞাটি এড়িয়ে নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞা ও নির্দেশিকায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই -বাছাইয়ের নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন সে-নীতিমালার ফাঁকফোকর দিয়েই সুযোগসন্ধানী চক্র অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দিয়েছে । যে অপকর্মটি আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা করতো, এখন সেই অপকর্মটি করে চলেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা), আওয়ামী লীগ সরকারের নেতা এমপি ও মন্ত্রীরা ! এখানে তো মূল অপরাধী ঐসব গোঁজামিল সংজ্ঞার প্রণেতারা । তথা সরকার নিজেই !

প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের জন্য দরকার ছিলো সরকারের সদিচ্ছা । বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার যখন বঙ্গবন্ধু সরকারের----- "মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি যেকোনো একটি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য হিশেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন"-----সংজ্ঞাটি পাশ কাটিয়ে অন্য একটি গোঁজামিলের সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের আয়োজন করে তখন আমাদের দু:খের অন্ত থাকে না । যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ, সেই মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধাদের তালিকা করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগই যখন বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা মানে না তখন কী বলার থাকে ? যখন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এমএনএ, এমপিএ, আওয়ামী লীগ-ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, মুজিবনগর সরকারের সচিব, কেরানী, বিদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গীতিকার-গায়ক-দোহার, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ফুটবলারসহ মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র যুদ্ধের সাথে সম্পর্কহীনদেরকেও তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা নামে অভিহিত করা হয় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি তাদের অবদানকেও অবমূল্যায়ন করা হয় ।

আমি আগেই বলেছি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বিশিষ্ট শ্রেণীর অবস্থান ছিলো । এরা হলো, মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী । তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ, এমএনএ, এমপিএ, উচ্চপর্যায়সহ জেলা মহকুমা ও থানার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রভৃতিরা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক । মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও রণাঙ্গনে যারা বিভিন্ন ছোট-বড় ফোর্সের কমাণ্ডে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা । মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে অ-সশস্ত্র যেসব ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন তারা মুক্তিকামী বলে অভিহিত হতে পারেন । এ-প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব শ্রেণীকে এভাবে মূল্যায়ন করা হলে কারো কিছু বলার থাকে না । কারণ এখানে সবার ভূমিকাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে ।

আর সবচে' দু:খের বিষয়টি হলো, মুক্তিযুদ্ধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রাজনৈতিক সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী ও সিংহভাগ বাঙালির সমর্থিত যে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সেই মুক্তিযুদ্ধের কথাটি আমাদের জাতীয় সংবিধানের মূলস্তম্ভ 'প্রস্তাবনা'য় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত । অপরদিকে শহীদ ও জনগণের প্রাণোৎসর্গের কথাটি উল্লেখ করা হলেও যাদের মহা শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বে অর্জিত স্বাধীনতা----সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথাও সংবিধানে অনুপস্থিত ! সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্থান না পাওয়ায় একটি স্বাধীনতাবিরোধী মতলববাজ মহল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ না বলে একাত্তর সনটিকে গণ্ডগোলের বছর, গৃহযুদ্ধ, ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইত্যাদি অপবিশেষণে ভুষিত করে মুক্তিযুদ্ধের মহিমাকে ম্লান করে ইতিহাস বিকৃতি করার সুযোগ পাচ্ছে । অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে । এ-প্রক্রিয়ায় আজ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় প্রায় আশি/পঁচাশি হাজার অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে স্বীকৃত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করার পাশাপাশি তারা রাষ্ট্রের অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করে আসছে ।

এ-বিষয় দু'টির কুফল দূরীকরণের লক্ষ্যে আজ থেকে প্রায় তিন বছর পূর্বে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে আমিই সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ শব্দ দু'টির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার ভিত্তিতে ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের জন্য নানান সভা সমাবেশ পদযাত্রা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপির মাধ্যমে আমাদের সুপারিশ ও দাবি পেশ করেছি । এমনকি একদা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের সামনাসামনি অবস্থান নিয়ে তা তাঁর কাছে দাবি দু'টি তুলে ধরেছি । পাশাপাশি অনবরত এ-বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করে চলেছি । বিষয় দু'টি আজ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে । কিন্তু আমাদের দু:খ, আমাদের ক্ষোভ, আমাদের দাবি দু'টির ব্যাপারে সরকার কোনো ভ্রুক্ষেপই করছেন না, উপরন্তু জামুকা নামক দানবটি সেই গোঁজামিল সংজ্ঞায় যাকে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় মর্যাদা ও গরিমা ভুলুণ্ঠিত করে চলেছে !

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি মূলত: তিনটি । এক. মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, দুই. বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদ এবং তিন. মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত আর্থসামাজিক জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা । অথচ এসব দাবি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপই লক্ষণীয় নয় । বরং মুক্তিযোদ্ধাদের নানাবিধ বিড়ম্বনা নিয়ে মনে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মন্ত্রী মহোদয় কেবল তামাশাই করে যাচ্ছেন ।

জাতীয় পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বুঝা যায় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কতিপয় ন্যায্য মানবিক দাবি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রজন্ম এবং জনগণের মধ্যের একটি সচেতন মহল কীভাবে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছেন ।

বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হওয়া ও ন্যায্য দাবি-দাওয়া সরকার বাস্তবায়ন না করা এবং সাম্প্রতিক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর মহলবিশেষের হত্যা, বাড়ি দখলসহ নানাবিধ অত্যাচারের ফলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যার ওপর একধরনের চাপা অভিমান বর্ষণ করে চলেছেন । বঙ্গবন্ধু-কন্যা হিশেবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের শেষ ভরসাজ্ঞান করলেও, এটা দু:খের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, তিনি ক্রমান্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন ! মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা সম্পর্কে তাঁর কোনো নির্দেশনা আছে বলে মনে হয় না ! তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে অনেক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের ব্যাপারে তিনি নীরবতা পালন করে চলেছেন যা খুবই বেদনাদায়ক । মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তথা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) মুক্তিযোদ্ধা তালিকার মধ্যে প্রায় ৮০/৮৫ হাজার অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে এনেছেন । আর কী দু:খ ও দুর্ভাগ্য যে, সেই বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাটি অনুমোদন দেবেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা ! কিন্তু বঙ্গবন্ধু-কন্যার হাত দিয়ে এ কলঙ্কজনক অপকর্মটি সংঘটিত হোক তা আমরা চাই না ।

সেজন্য শেষবারের মতো তাঁর কাছে আমাদের নিবেদন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্রতার স্বার্থে আরো কিছুটা সময় নিয়ে হলেও, বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে তিনি একটি 'বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিশন' গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের দিকনির্দেশনা দিয়ে এ কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারেন । 'মুক্তিযোদ্ধা' আওয়ামী লীগের সৃষ্টি । সেই সৃষ্টির যথাযথ মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বও তাই আওয়ামী লীগ সরকারের । আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারকে মহিমান্বিত করার এ ঐতিহাসিক উদ্যোগটি গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সর্বজনগ্রাহ্য তালিকা প্রণয়ন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মনোকষ্ট ও অভিমান লাঘব করবেন ।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test