E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শোষক-শোষিত : কেউ নিরাপদ নয়

২০২১ জুন ০২ ১৪:২০:৫৮
শোষক-শোষিত : কেউ নিরাপদ নয়

আবীর আহাদ


দেশে দেশে শাসকরা দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে । আমলারা শাসনযন্ত্রের চারদিকে বাঁধার শক্ত দেয়াল দাঁড় করিয়ে দেয় । ফলে আমলাতন্ত্রের শক্ত দেয়াল পেরিয়ে শাসকদের কাছে দেশ ও জনগণের চাহিদা, অভাব ও অভিযোগের খবরাখবর সঠিকভাবে পৌঁছে না । এখানেই শাসকদের চরম ব্যর্থতা যে, তাঁরা আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না; উপরন্তু তাদের কাছেই শাসকরা বন্দী হয়ে পড়ে । এর মূলে রয়েছে শাসকদের প্রধানত: দু'টি দুর্বলতা । এক. শাসকরা নিজেরাই দুর্নীতিবাজ, দুই. রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা অদক্ষ । ফলশ্রুতিতে প্রকৃতিগত কারণেই তাঁরা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । আমলারাও এ-সুযোগটাই ষোলো আনা লুফে নেয় । ফলে দেশের আর্থসামাজিক তথা তথাকথিত উন্নয়নের নামে শুরু হয় শাসকশ্রেণী ও আমলাতন্ত্রসহ দেশের বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর ফ্রিস্টাইল লুণ্ঠনযজ্ঞ ।

দেশে দেশে রাজনীতিনির্ভর শাসকগোষ্ঠীর দুর্নীতি অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাই যথোপযুক্ত ব্যক্তি যথাযথ স্থানে ঠাঁই পায় না । অর্থাত্ শাসকগোষ্ঠী তাদের লুণ্ঠনমিশ্রিত শাসন প্রবহমান রাখার লক্ষ্যে তাদেরই সমর্থিত ও মনঃপূত ব্যক্তিদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসায় । তাইতো দেখা যায়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অবস্থান করছে শাসকগোষ্ঠীর আস্থাভাজন এমনসব ব্যক্তি যারা হয় চরম দুর্নীতিবাজ অথবা অপদার্থ, যাদের মধ্যে মেধা সততা কর্মনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের লেশমাত্র নেই ! অপরদিকে অতি যত্নের সাথে প্রশাসনের সৎ মেধাবী, ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক মানুষদের দূরে সরিয়ে রাখা হয় ! কারণ এদের দিয়ে দুর্নীতিবাজ লুটেরা শাসকদের অসৎকর্ম সম্পাদন করা সম্ভব নয় । ফলে সমাজের এসব মানুষগুলো মনের দুঃখে নীরবে জীবনযাপন করেন, কেউ কেউ সুযোগ পেলে বিদেশে পাড়ি জমান ।

এভাবেই দেশে দেশে শাসকগোষ্ঠী তাদের লুণ্ঠনকর্ম চালিয়ে দেশের মানুষকে শোষণ করে আসছে । সমাজের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনের সাধ-আহ্লাদ, আশা-স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যয় । সাধারণ মানুষ চরম হতাশা ও নৈরাশ্যের মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয় । সমাজে নৈমিত্তিকতার অধ:পতন ঘটে । আত্মিক পারিবারিক সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক তথা সব সম্পর্ক নির্ধারণ হয় আর্থিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে । ত্যাগ সততা ও মেধার মূল্য থাকে না । শাসক ও দলীয় আনুগত্য, স্তাবকতা ও লুণ্ঠনের ভাগাভাগির ওপর নির্ভর করে ব্যক্তির দলীয় ও প্রশাসনিক অবস্থান । ফলে নিরীহ মানুষের অধিকার এখনে স্থান পায় না । যদিও দেশ ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের নামে চোখ ধাঁধানো বিশাল বিশাল পুল-ব্রিজ, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, রিভার টানেল, সুউচ্চ ইমারত, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র আমদানি প্রভৃতি দিয়ে দেখানো হয় যে, এর মধ্য দিয়ে অনেক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তার মধ্যে যতোটা না দেশের উন্নয়ন ঘটছে, তারচে' হাজার গুণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটছে দুর্নীতিবাজ শাসক, আমলাতন্ত্র ও বণিকগোষ্ঠীর । তারা নানান উন্নয়ন প্রকল্প ও কেনাকাটার মধ্য দিয়ে সাগরচুরি ঘটিয়ে থাকে । যেমন ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ও কেনাকাটার ব্যয়মূল্য দেখানো হয় ১০ হাজার কোটি টাকা । এভাবে বাড়তি মূল্য শাসকগোষ্ঠী তাদের বশংবদদের নিয়ে আত্মসাত করে থাকে । অপরদিকে সাধারণ মানুষ নানান চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখে আর আঙুল চুষে !

তবে এটাই শেষ কথা নয় । দেশে দেশে অতীতে বহুদেশের শোষিত ও প্রতারিত জনগণ তিলে তিলে পলে পলে একদিন ঠিকই জেগে ওঠে । অবশেষে সেসব দেশের জনগণের জাগরণের সুযোগ নিয়ে দেশী-বিদেশি শক্তির চরম কোনো হস্তক্ষেপে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা সামরিক বাহিনীর দ্বারা তছনছ হয়ে যায় শাসক-শাসকগোষ্ঠীর পেয়ারে সিংহাসন ! অনেক ক্ষেত্রে প্রচুর রক্তপাত ও জীবননাশের ঘটনাও ঘটে । এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বহু দেশে এসবের জ্বলন্ত উদাহরণ রয়েছে ।

পাদটীকা : যে সমাজে ব্যাপক মানুষের নিরাপত্তা থাকে না, সে-সমাজের ক্ষুদ্র শোষকগোষ্ঠীও নিরাপদ নয় ।

লেখক :চেয়ারম্যান একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test