E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণাময় জীবনের ইতিকথা 

২০২১ জুন ৩০ ১৫:৩৫:০৫
মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণাময় জীবনের ইতিকথা 

আবীর আহাদ


মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের পর তৎকালীন রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক চরম দূরাবস্থা ও দৈন্যতার কারণে বঙ্গবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন পুনর্বাসন করতে পারেননি। তারপরও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে প্রায় ত্রিশটি জাতীয়করণকৃত লাভজনক বিশাল বিশাল শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ন্যস্ত করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ঢাকার চিড়িয়াখানা পাশে কয়েক একর জমি বরাদ্দ রেখেছিলেন। সামরিক বাহিনী, বিডিআর, জাতীয় রক্ষীবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ সিভিল প্রশাসনে বেশকিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাকে পুনর্বাসন করেছেন। তিনি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০% কোটাও প্রবর্তন করেন। অপরদিকে এক বিরাট সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। অবশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধারাও বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রীয় আর্থিক অসহায়ত্ততা অনুধাবন করে কোনো কিছু দাবি না করে, জাতির পিতার উপদেশ অনুযায়ী যে যার অবস্থানে ফিরে যান। তবে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় গণ্য করে তাদেরকে আদর করে 'আমার সোনার ছেলে' ও 'আমার লালঘোড়া' অভিধায় আখ্যায়িত করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভবিষ্যতে তাঁর আরো অনেক পরিকল্পনা ছিলো যার কিছু কিছু জানার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিলো।

১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে আগস্টের ১৩ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার কয়েকবার সাক্ষাত ঘটে। এসময় নবঘোষিত বাকশাল কর্মসূচি নিয়ে একটা প্রশ্নমালা তৈরি করে আমি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য গ্রহণ করি।আমার এসব কাজের নেপথ্য মন্ত্রণাদাতা ছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির অনুসারী, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এটিএম সৈয়দ হোসেন। তিনি তাঁর দাপ্তরিক প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার সুযোগে মাঝে মাঝে আমাকে বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে যেতেন। আমি বঙ্গবন্ধুর নিকট থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর গ্রহণ করতাম। এসময় একদিন আমি সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা' শব্দ দু'টি না থাকার ফলে ভবিষ্যতে এসব নিয়ে নানান বিতর্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবিধান রচনা করে দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে এগুলোসহ আরো কিছু বিষয় বাদ পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমাকে তোরা একটু সময় দে, বাকশাল চালু করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও গণবিরোধী আমলাতন্ত্রকে খাঁচায় বন্দী করে, সবকিছু ঠিকঠাক করে তোদের মুক্তিবাহিনীকে নিয়েই আমি এদেশ চালাবো'।(বঙ্গবন্ধুর হত্যা পরবর্তীতে তাঁর ঐসব সাক্ষাতের বক্তব্যকে একত্রিত করে ১৯৯১ সালে "বঙ্গবন্ধু: দ্বিতীয় বিপ্লবের রাজনৈতিক দর্শন" নামক আমার একটা বই প্রকাশিত হয়, যেটি প্রকাশ করেছিলো ঢাকার বনেদী প্রকাশনা সংস্থা জ্যোৎস্না পাবলিশার্স, যে বইটি গ্রন্থবাজারে সমহিমায় এখনো অবস্থান করছে)। কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট তাঁর মর্মান্তিক তিরোধানের মধ্য দিয়ে সবকিছু ভেস্তে যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধারাও সে-সাথে বিস্মৃতির অতল তলে তলিয়ে যান।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পালাবদলে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা-নিজামী সরকার প্রায় আড়াই যুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোই মূল্যায়ন করেননি। আদর্শ ও চেতনাগত দিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও সেসব সরকারের নিকট থেকে কিছু আশাও করেননি। তবে এটাও সত্য যে, সেসব সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নানান চক্রান্তের জালবুনে বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ও চাকরিচ্যুত করলেও প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কোনো কটুবাক্য বর্ষণসহ লাঞ্ছিত ও অমর্যাদা করার দু:সাহস দেখাননি।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা আওয়ামী লীগের বাইপ্রডাক্ট বিধায় দলটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তাদের প্রতি দায়বদ্ধতার নিরিখে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি একটানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রচলন করে আসছেন যা তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিলো বঙ্গবন্ধুর উপহার----যেটি জিয়া-এরশাদ, খালেদা-নিজামী সরকার বাতিল করার দু:সাহস দেখাননি, সেটি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী দলের সরকার রাজাকার প্রজন্মের কিছু ছেলেমেয়ের আন্দোলনের কারণে বাতিল করে দিতে দ্বিধা করলেন না----এটা মুক্তিযোদ্ধাদের মনে একটি বিরাট ক্ষতচিহ্ন হয়ে রয়েছে! তবে এটাও সত্য যে, এ সরকারই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে একটু অন্ন তুলে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারাও একটু স্বস্তি পেয়ে আজ নিজেদের গরিমা প্রকাশ করতে পারছেন। সম্প্রতি সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নামের পূর্বে 'বীর' অভিধা প্রদান করায় আমরা বঙ্গবন্ধু-কন্যার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এর সাংবিধানিক ভিত্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছি। কারণ প্রশাসনিক প্রজ্ঞাপনের কোনো শাশ্বত স্বীকৃতি ও মান্যতা নেই ।

কিন্তু দুঃখটা অন্যখানে। মুক্তিযোদ্ধারা তো কারো করুণা চাননি। আওয়ামী লীগই বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ওপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। মুক্তিযোদ্ধারা চান তাদের ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতি। তারা রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের কাছ থেকে ন্যূনতম সম্মান ও মর্যাদা চান। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে মুক্তিযোদ্ধারা কি সেই সম্মান ও মর্যাদা পাচ্ছেন ? তাদেরকে যৎসামান্য ভাতার মাধ্যমে একটু ভাতের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদেরকে উঠতে বসতে চলতে ফিরতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ তার পরিচালিত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অবজ্ঞা ও অপমানের শিকার হতে হবে, এটা কোন ধরনের নৈতিকতা ? এ যেনো, কাউকে ভাত খাইয়ে তার মুখে চড় বসিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা! সারা দেশের বুকে আজ মুক্তিযোদ্ধারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত, অপমানিত, হত্যা, অত্যাচার অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন !

এসব অতি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এসেছে রাজাকার ও দালাল পরিবার থেকে। তারা আওয়ামী লীগে অবস্থান নিয়ে তাদের রাজাকার বাপ-দাদা-নানাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ওপর। যার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ওপর হত্যা, অত্যাচার, ঘরবাড়িজায়গা দখল, অগ্নিসংযোগ ইত্যাকার আঘাত হানা হচ্ছে। এসবের প্রতিকারে প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। আর ক্ষমতাসীন দল হিশেবে তাতে আওয়ামী লীগের কোনোই প্রতিক্রিয়া নেই। তাদের আচরণে মনে হয় যেনো, মুক্তিযোদ্ধাদের একটু অসম্মান করতে পারলেই তারা আনন্দ অনুভব করেন! এর কারণও আছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিশাল এক একশ্রেণীর লোক যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে থেকে অর্থের বিনিময়ে এ দলে অনুপ্রবেশ করেছে। তারাই সরকারি ছত্রছায়ায় নানান দুর্নীতি ও লুটপাটের সাথে জড়িত। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তি এখানেই। ফলে তারা তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে সদা উচ্চকণ্ঠ হওয়ার কারণেই এসব আওয়ামী দুর্বত্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর খড়গহস্ত ।

মুক্তিযোদ্ধারা আওয়ামী লীগকেই তাদের আদর্শিক দল মনে করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা আওয়ামী লীগসহ তার সহযোগী সংগঠনের পদপদবী পান না। তাদের শিক্ষিত সন্তানেরা সরকারি চাকরি পয় না। অথচ রাজাকার, রাজাকার সন্তান, বিএনপি, জামায়াত, শিবির এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার কামলা ফারুক-রশিদের ফ্রিডম পার্টির লোকজনসহ ব্যাঙ্ক ও শেয়ারবাজার লুটেরা চক্র, দুর্নীতিবাজ লুটেরাগোষ্ঠী টাকা-পয়সা দিয়ে আওয়ামী রাজনীতি কিনে নিয়েছে; প্রজাতন্ত্রের চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছে। তাই বলা চলে, বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না। তারাই এখন দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিশেবে আবির্ভূত হয়েছে যা চরম বেদনায়ক ।

একথা বলতে আজ দ্বিধা নেই, আওয়ামী লীগের হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের যৎকিঞ্চিত মূল্যায়ন হওয়ার পাশাপাশি, সেই তাদেরই হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের বেদনাদায়ক অপমান সংঘটিত হচ্ছে অনেক বেশি! মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবমূল্যায়নের বীজ নিহিত রয়েছে আমাদের জাতীয় সংবিধানের মধ্যে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই । পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা পাশ কাটিয়ে নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞা ও নির্দেশিকার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেয়ার অপরিণামদর্শি কার্যকলাপের দায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারও মুক্ত নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বমোট সংখ্যা দেড় লক্ষের নিচে । আজ সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দু'লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজারের মতো। চলমান যাচাই বাছাই অন্তে মুক্তিযোদ্ধাদের যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাতে হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা থাকবে সন্দেহ নেই!

জাতীয় সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকার ফলে একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে, অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে ও গোঁজামিলের আশ্রয়ে যে কেউ মুক্তিযোদ্ধা বনে যাচ্ছে ! এ বিষয়টি অনুধাবন করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আমরা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার দাবিতে একটি আন্দোলন গড়ে তুলি । নানান সভা সমাবেশ, আলোচনা, মতবিনিময় সভা, ধারাবাহিক লেখালেখি ইত্যাদি করার পর ৩রা জুলাই বঙ্গবন্ধু-ভবন প্রাঙ্গণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক পদযাত্রা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি । সেই আন্দোলনটি আজ ব্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে । আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, আমাদের স্মারকলিপির বক্তব্যের ওপর প্রধানমন্ত্রী সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন । তবে বর্তমানে অমুক্তিযোদ্ধা উচ্ছেদের যে কিছুটা তৎপরতা পরিলিক্ষত হচ্ছে, সেটা অবশ্যই আমাদের একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আমাদের অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত প্রয়াস ও কিছু মুক্তিযোদ্ধার আন্দোলন ও লেখালেখির ফলশ্রুতি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।

আমাদের এসব নানান প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমিক যাচাইয়ের পর এখন সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বশেষ একটি তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে । প্রাথমিক পর্বে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেটি মুক্তিযোদ্ধাদের চরমভাবে আশাহত করেছে । যে তালিকাটা একেবারেই স্বচ্ছ তাহলো মুক্তিযোদ্ধারদের ভারতীয় তালিকা। প্রথম পর্বে সেই তালিকা পুরোপুরি আসেনি । শেষপর্বে তা আসবে কিনা তা কে জানে ? অথচ চরম বিতর্কিত লাল মুক্তিবার্তা যার মধ্যে অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি হাজার হাজার রাজাকার ঢুকে বসে আছে, সেগুলো চূড়ান্ত তালিকা হিশেবে প্রকাশিত হয়েছে। অপরদিকে বেসামরিক গেজেট ও অন্যান্য প্রমাণক তালিকায় যেসব ভুয়া আছে, সেগুলো প্রকাশিতব্য তালিকা থেকে বাদ যাবে কিনা তা কেউ হলফ করে বলতে পারছে না । সব মিলিয়ে চূড়ান্ত তালিকাটি সঠিকতা পাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ।

আমাদের দুঃখ, আমরা এমন একজন মন্ত্রী মহোদয়কে পেয়েছি, যিনি নিজে যেমন কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে একটি স্বচ্ছ তালিকা করা যায়, সেবিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না, অন্যদিকে যারা এসব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন ও সহযোগিতা করতে চান, তাদের জ্ঞান ও সহযোগিতা কাজে লাগাতেও পারেন না । যেখানে বড়োজোর ৬ মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন সম্ভব সেখানে তিনি কাজটি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছেন ! তারপরও আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি যে, এবার একটা স্বচ্ছ তালিকা পেতে যাচ্ছি । তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়কে আমরা জানিয়ে রাখছি, যদি মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকাররা বহাল তবিয়তে থেকে যায় বা প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ তালিকা বহির্ভূত থাকেন, তাহলে তাঁর তথাকথিত চূড়ান্ত তালিকার বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযোদ্ধারাও শেষবারের মতো একটি চূড়ান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে বাধ্য হবো, যার পরিণতি কী হবে সেটা আমরাও জানি না । অতএব আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘকাল ধরে চলে-আসা যন্ত্রণাময় জীবনকে আরো যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে না দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি । এ-অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার দাবিতে আমাদেরকে আরো সজাগ ও সোচ্চার থাকতে হবে।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test