E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : শেখ হাসিনার দেশপ্রেম

২০২১ আগস্ট ২১ ১৫:৩৬:১৪
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : শেখ হাসিনার দেশপ্রেম

আবীর আহাদ


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। উপর্যুপরি ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ গোটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রচ্ছন্ন নীলনক্সার বাস্তবায়ন ঘটাতে এক বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। সেই পৈশাচিক হামলায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মানবঢাল রচনা করে কোনোমতে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারলেও তিনি তাঁর একটি কানে প্রচন্ড আঘাত পান।

কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপর্যুপরি গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে ঝাঝরা হয়েও মানবঢাল বেষ্টন করে নেত্রীকে পরম মমতায় নিরাপদ রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু বিশিষ্ট নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ চব্বিশ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ প্রায় পাঁচশতাধিক নেতাকর্মী মারাত্মক আহত হন। তাদের অনেকেই আজ দুনিয়াতে নেই। আজো যারা বেঁচে আছেন, তারা এখনো তাদের দেহের ভেতর স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা, আমরা জানি যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অন্যতম মারণাস্ত্র গ্রেনেড কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে থাকে।

পরের দিন। ২২ আগস্ট। সন্ধ্যায় আমরা প্রায় পঁচিশজন মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ করে মাহবুবউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, শাহজাহান কবীর বীরপ্রতীক, প্রয়াত আবু সাঈদ, প্রয়াত এড. হাবিবুর রহমান শওকত ও আমি আবীর আহাদ ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে তাঁর সাথে দেখা করতে যাই। শেখ হাসিনা আঘাতজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ। তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীদের সাফ জবাব, নেত্রীর সাথে দেখা করা যাবে না, তিনি ডাক্তারের পরামর্শে পূর্ণবিশ্রামে আছেন। বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা একে একে যখন সুধাসদন থেকে বের হচ্ছি, তখনি তাঁর বিশেষ সহকারী ড. আওলাদ হোসেন দ্রুত বাইরে এসে আমাদের জানালেন যে, নেত্রী আমাদের ডেকেছেন। আসলে কীভাবে যেনো তিনি জেনেছিলেন যে, মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছেন।

আমরা সুধাসদনে তাঁর বসার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলাম ছলছল চোখে নেত্রী আমাদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। তিনি আমাদের হাত ইশারায় বসতে বললেন । বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখাবয়ব দেখে আমরাও কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠি। সবার চোখে জল। আমরা কেউ বসলাম না। তিনিও দাঁড়িয়ে আছেন। কারো মুখে কোনো কথা নেই। একখন্ড নীরবতায় আমরা আচ্ছন্ন। নেত্রী এবার অশ্রুভেজা চোখে আমাদের সবার দিকে একবার তাকালেন। সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমরা একে অপরের দিকে তাকাতে থাকি। তাঁকে কী সান্ত্বনা দেবো। সব নীরবতা ভেঙে আমিই মুখ খুলি : বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে একাত্তরে অস্ত্র ধরেছিলাম, দেশ স্বাধীন হয়েছে। গতকাল যে পৈশাচিক বর্বর ঘটনা ঘটে গেলো, তার প্রেক্ষিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছ থেকে একটি নির্দেশ চাচ্ছি!

শেখ হাসিনা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে সবার উদ্দেশে শান্তকন্ঠে বললেন : আপনাদের নির্দেশ দেয়া মানে তো যুদ্ধ গৃহযুদ্ধ ! আইভি রহমানসহ আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী নিহত-আহত হয়েছেন। আমি ডান কানে কিছুই শুনতে পাই না। হয়তো আমিও নিহত হতে পারতাম। তাই বলে আমি আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশটাকে ধ্বংস করে দিতে পারি না! আমার বাবা-মা-ভাই ও অন্যান্যরা রক্ত দিয়ে এদেশকে পবিত্র করে গেছেন, সেই দেশকে, কোটি কোটি নিরীহ মানুষের দেশকে যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে আমি প্রতিশোধ নিতে পারি না! প্রয়োজনে এদেশের মানুষের কল্যাণ ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমিও প্রাণ বিসর্জন দেবো, কিন্তু দেশের বিনিময়ে নয়; প্রতিশোধ নয়, হত্যার বদলে হত্যা নয় ! আপনারা শান্ত থাকুন ।

কালের আবর্তে আমাদের স্মৃতিতে সেই বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট ফিরে এসেছে। ২০০৪ সালের সেদিনের সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে পরের দিনের নেত্রীর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিও মনে পড়ে গেলো। ১৯৭৫ সালের পর থেকে একের পর এক মর্মান্তিক আঘাতের পর আঘাত সয়েও বঙ্গবন্ধুকন্যাই কেবল বলতে পারেন : 'আমি আমার বাবার স্বাধীন দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারি না!'

এটাই দেশপ্রেম । একথাটি কেবল শেখ হাসিনাই বলতে পারেন। তিনি যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সন্তান।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test