E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যাংকিং ভাবনা : পর্ব-১

সংকট নিরসনে যাদুর ছোঁয়া 

২০২১ আগস্ট ২৬ ১৪:৩২:০৯
সংকট নিরসনে যাদুর ছোঁয়া 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


অতঃপর, সোনালী ব্যাংকের সর্ব বৃহৎ শাখা মতিঝিলের লোকাল অফিসে আমার পোষ্টিং, এজিএম হিসেবে শিল্প ঋণ বিভাগের দায়িত্বে। রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী শিল্পঋণ গ্রহিতাদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হয় এ বিভাগের কর্মকর্তাদের।এখানে সকলেই ভিআইপি গ্রাহক।

ব্যাংকের বিধান মেনে কাজ করা এবং একই সাথে গ্রাহক-সন্তোষ্টি অর্জন করা বড় দুরূহ ব্যাপার, গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে কোন কর্মকর্তার নামে অভিযোগ করলে তার দূর দুরান্তে বদলি নিশ্চিত, এখানে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার সময় ও সুযোগ দুই ই কম। আজ এমন এক অভিযোগের কথা বলি, সরাসরি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে অভিযোগ।

একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক, অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র নিজে অভিযোগ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে উপস্হিত।তার একটি সমুদ্রগামী জাহাজে লোকাল অফিসের ফাইনান্স রয়েছে। জাহাজটি বিদেশে কোন এক সমুদ্র বন্দরে কয়েকদিন আটকা থাকা জনিত কারণে উদ্ভুত জটিলতায় ব্যাংকের ভূমিকার বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তার এই অভিযোগ।

তলব পেয়ে আমাদের জেনারেল ম্যানেজার মিজান স্যারের পিছু পিছু ফাইল নিয়ে চেয়ারম্যান মহোদয়ের তৃতীয় তলার চেম্বারের সামনে আমরা, জেনারেল ম্যানেজার এস এম আমিনুর রহমান স্যারও এদিকে আসছেন। আমরা এক সাথেই ভিতরে প্রবেশ করলাম। সালাম বিনিময়ের পর আমিন স্যারের প্রথম উচ্চারণ : “ আপনাকে তো আমরা শুধু টেলিভিশনে দেখি, আজ এক সাথে চা খাওয়ার সৌভাগ্য হলো আমাদের ।”

আমিন স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন—“ ফাইলটা আমার চেম্বারে রেখে আপনি যেতে পারেন ।”

আমি স্বস্তি পেলাম এই ভেবে যে, এবার ক্ষোভের আগুন প্রশমিত হতে বাধ্য।শত সমস্যা সমাধানে এস এম আমিনুর রহমানের দক্ষ হাতের ছোঁয়া সুবিদিত ।

কি সমস্যা বা কীভাবে সাবেক মেয়রের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছিল সেটাএখানে বড় কথা নয় , বড় কথা হলো—কীভাবে আন্তরিকতাপূর্ণ কথা দিয়ে মানুষের ক্ষোভ তাৎক্ষণিকভাবে প্রশমিত করা যায় !

যে কোনো বড় সমস্যা মোকাবেলায় শীর্ষ নির্বাহীগণ জেনারেল ম্যানেজার জনাব আমিনুর রহমানের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা করতে দেখা গেছে, তাঁর বিভাগ সম্পর্কিত না হলেও ।

এস এম আমিনুর রহমানের কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে কথা বলা ধৃষ্টতা হবে, তবে লোকাল অফিসে শিল্পঋণে কাজ করার সময়কালে আমাদের প্রতি তাঁর প্রসারিত সহযোগিতার হাত যেভাবে পেয়েছি, সে বিষয়ে কিছু বলতেই পারি ।
শিল্পঋণের নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা সফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ সমসাময়িক কালে ব্যাংকিং খাতে আর কাউকে দেখা যায়নি।

সরকারও তাঁর যোগ্যতার মূল্যায়ন করেছিল, পরবর্তীতে তাঁকে দেশের সর্ব বৃহৎ দুটি ব্যাংক , সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্হাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিল। চাকুরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরও ব্যাংকিং খাতের বর্তমান দুরবস্হায় তাঁর মতো স্বনামধন্য ব্যাংকারদের সার্ভিস বড় প্রয়োজন ছিল। ব্যাংকিং খাতের বর্তমান দুর্দশা নিরসনের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞগণ নানা পরামর্শ দিচ্ছেন,সর্বশেষ পরামর্শ “ব্যাংক কমিশন“ গঠন।

এ বিষয়ে সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ( বর্তমান মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং বর্তমান মন্ত্রীপরিষদে সর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ) এম এ মান্নান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন—“ ব্যাংকিং কমিশনের দরকার নেই, এই কমিশন গঠনের মাধ্যমে বলা হবে গাড়ি দাও, বাড়ি দাও , টাকা দাও। এটা তাদের চাকুরি ছাড়া কিছু হবে না, এই কমিশন সম্পর্কে সন্দেহ আছে ।”

অন্যদিকে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন— “এখন থেকে ব্যাংকিং বিষয়ে যারা বুঝেন না, তাদেরকে আর সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসতে দেয়া হবে না কেননা ব্যাংকের পর্ষদ কোনো খেলার জায়গা নয় ।”

সম্মানিত দুই মন্ত্রীর ভাবনা প্রণিধানযোগ্য। সেক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে উপনিত হওয়া ব্যাংক খাতকে রক্ষা করার একটি পথ হতে পারে এমন— রাজনৈতিক বিবেচনায় আর ব্যাংক পরিচালক নিয়োগ নয়-এ নীতি বজায় রেখে অবসরে যাওয়া সুনামধারী শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাংকার এবং আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে । এই উপলব্ধিটা যত দ্রুত আসবে, ততই মঙ্গল ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test