E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বৈরশাসক ও তাদের সহযোগীরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না

২০২১ নভেম্বর ১০ ১৪:১২:১৭
স্বৈরশাসক ও তাদের সহযোগীরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না

আবীর আহাদ


দেশে দেশে স্বৈর ও লুটেরা শাসকরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েই তাদের ক্ষমতা আরোহনের সিঁড়ি নিবেদিতপ্রাণ সৎ ত্যাগী কর্মীবাহিনী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভুলে যায়। তদস্থলে দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথ গাঁটছড়া বাঁধে। এসবচক্রও স্বৈরশাসকদের যাবতীয় নিরাপত্তা দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়ার অপকর্মে লিপ্ত হয়। স্বৈরশাসক ও তাদের এসব সহযোগী তাদের অপশাসন ও শোষণ-প্রতারণার বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন, তখন তারা তাদের ওপর নানান অত্যাচার, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, এমনকি গুম-খুনের মতো ঘটনা ঘটায়। এ-অবস্থায় দেশের যাবতীয় অর্থসম্পদ স্বৈরশাসক ও তাদের সহযোগী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে যায়। অপরদিকে দেশের বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে নিপতিত হয়ে পড়ে। এ-প্রক্রিয়ায় সাধারণ জনগণের মধ্যে সরবে না-হলেও নীরবে স্বৈরশাসক ও লুটেরাদের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

একটা সময় পর্যন্ত অবশ্য রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে শাসক ও শোষকগোষ্ঠী তাদের শাসন ও শোষণ প্রবহমান রাখতে সক্ষম হলেও একটা সময়ে এসে জনগণের ক্ষোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জাগ্রত জনগণের বৈপ্লবিক কর্মযজ্ঞের কাছে অবশেষে স্বৈরশাসক ও তাদের সহযোগী লুটেরা দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরাজয় ঘটে। হয় রক্তাক্ত পথে অথবা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সে-পরাজয় সূচিত হয়। পৃথিবীর দেশে দেশে এধরনের বহু উদাহরণ রয়েছে।

এসব উদাহরণের কথা স্বৈরশাসক ও তাদের সহযোগী দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ও ধর্ম ব্যবসায়ীদেরও অজানা নয়। তবে মূল কথা হলো, অবাধ ক্ষমতা ও বল্গাহীন লুটপাট তথা অর্থলিল্পায় আক্রান্ত হয়ে তারা নীতি-নৈতিকতার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে একধরনের অন্ধত্বে ডুবে যায়। ফলে তারা অতীত বা ইতিহাস থেকে কোনোই শিক্ষা গ্রহণ করেন না।

পাদটীকা : যেসব দেশের স্বৈরশাসকদের হাতে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, সেসব দেশের স্বৈরশাসকদেরও নিরাপত্তা থাকে না!

(২) ধ্বংসের প্রক্রিয়া !!

যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র অপদার্থ দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াচক্র জেঁকে বসে; যখন শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের কষাঘাতে মানুষের মনে হতাশা বাসা বাঁধে; যখন দারিদ্র্য ও ক্ষুধার কবলে পড়ে মানুষের উদ্যম সুকুমারবৃত্তি ও মননশীলতা লোপ পেতে থাকে; যখন মানুষের মন থেকে স্নেহ মমতা ভালোবাসা শ্রদ্ধা ও ভক্তি উবে যায়; যখন অর্থই হয়ে ওঠে সবপ্রকার সম্পর্কের মূলভিত্তি; যখন ত্যাগী সৎ মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করে অসৎ ও স্তাবকদের মূল্যায়ন করা হতে থাকে; যখন জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকৃতি ঘটানো হয়; যখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্থলে ধর্মান্ধতা ছড়িয়ে দেয়া হয়; যখন ব্যভিচার পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতা সামাজিক ও নৈতিক আদর্শ হিশেবে পরিগণিত হয়; যখন গোঁড়ামি ভণ্ডামি অন্ধত্ব ও কূপমণ্ডকতার বিষবাষ্পে সমাজ জর্জরিত হতে থাকে; যখন মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সহনশীলতা ক্রমাগত লোপ পেতে থাকে এবং যখন সীমাহীন ব্যক্তিসত্তা ব্যক্তিস্বার্থ ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বেচ্চাচারিতা হিংসা ও লোভ-লালসার যূপকাষ্টে জাতীয় আশা-আকাঙ্খা পদদলিত হয়ে চরম নৈরাজ্য ও হতাশার মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাক -তখন দেশপ্রেম সততা নীতিকথা ও মানবিক মূল্যবোধ মুখ থুবড়ে পড়ে যায় । তখন আদর্শ ও চেতনার অপমৃত্যু ঘটে । তখন এ-প্রক্রিয়ায় সমাজ জাতি ও রাষ্ট্র ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয় !

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে বাঙালি সত্তা প্রবহমান ও যাবতীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে সেই ধ্বংসের প্রক্রিয়া থেকে উদ্ধার করতে আমাদেরকেই জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test