পর্ব-২
স্মৃতিঘেরা একাত্তর : ভীতি-আনন্দের দিনগুলি
রণেশ মৈত্র
করিমপুরে আমাদের (ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন) যুব শিবিরটি ক্রমান্বয়েই নতুন নতুন কর্মীতে ভরে উঠতে থাকে। এটি যদিও পাবনা জেলার ন্যাপ-সিপিবির প্রধান শিবির, তবুও মাত্র পাঁচ মাইল দূরবর্তী আওয়ামী লীগ পরিচালিত বিশাল যুব শিবিরের তুলনায় অনেক ছোট। তবে উভয় শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্রমেই ভাল সম্পর্ক বাড়ে উঠতে থাকে। দুটি শিবির থেকেই দেশের অভ্যন্তরের ভয়াবহ পরিস্থিতির তথ্য আদান-প্রদান করা ছিল অন্যতম কর্তব্য। উভয় তরফ থেকেই এ ব্যাপারে তাগিদও ছিল।
ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে পাক-বাহিনী জনমনে প্রবল আতংক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেই সাথে তারা তাদের কিছু বন্ধুও সংগ্রহ করে নিয়েছে। “শান্তি কমিটি” নামে মুসলিম লীগ পন্থীদের নিয়ে জেলা, মহকুমা, থানা এবং এমন কি, ইউনিয়ন পর্য্যায় পর্যন্ত ঐ কমিটির বিস্তার ঘটিয়েছিল।
ফলে মানুষের মনে আতংক আরও বেড়ে উঠছিল। শান্তি কমিটির কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ পন্থীদের তালিকা তৈরী করে পাক-বাহিনীর হাতে পৌঁছানো। এবং যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতো ঘোরতর বিপদ নেমে আসতো তাদের জীবনে। ধরে নিয়ে সেনা-শিবিরে আটক রেখে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো-গোপন তথ্য (মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে) সরবরাহ করা এবং এমন কি, গৃহস্থ বাড়ী বা পরিবার সমূহের বিবাহিতা-অবিবাহিতা যুবতীদেরও তথ্য সরবরাহ করতে তারা দ্বিধাবোধ করতো না।
ঐ যুবতীদের ধরে পাক-সেনা কর্মকর্তারা তাদের নোংরা যৌন ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে দিয়ে পর দিন, রাতের পর রাত ধরে নির্য্যাতন চালাতো সংশ্লিষ্ট যুবতীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে। অতঃপর কাউকে কাউকে মেরে ফেলতো কাউকে কাউকে ছেড়েও দিত কিন্তু এভাবে নিস্পৃহীত হয়ে ফেরত আসা মহিলাদের সমাজে স্থান করে নেওয়াও দুরুহ ছিল ফলে তাদের জীবন হয়ে পড়তো আরও দুর্বিবহ। এ জাতীয় বহু কাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসত যুব শিবিরগুলিতে। এ জাতীয় অত্যাচার নির্য্যাতনের ঘটনা জানতে পারলে তার নোট করে রাখতাম এবং ক্যাম্পের কাজে প্রতি মাসেই দু’একবার যখন কলকাতা যেতাম তখন ন্যাপের মুখপত্র ‘নতুন বাংলা’য় এবং আকাশ বানী কার্যালয়ে গিয়ে প্রণবেশ সেনের হাতে পৌঁছাতাম। আকাশ বাণী সেগুলি প্রচার করতো।
বয়োবৃদ্ধ হওয়াতে কম: অমূল্য লাহিড়ীকে মোটামুটি দায়িত্বমুক্ত রাখা হয়েছিল তবু তিনি দু’এক মাস পর পর কাউকে সাথে নিয়ে কলকাতা থেকে করিমপুরে যুব শিবিরে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত কমরেডদেরকে উৎসাহিত করতোন। ন্যাপ নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা ছিলেন কলকাতায় কংগ্রেস-সিপি.আই ও সহায়ক সমিতি সমূহের সাথে যোগাযোগ রক্ষার কাজে নিয়োজিত।
কংগ্রেস, সি.পি.আই এবং সহায়ক সমিতিগুলি সংগৃহীত দুধের পাউডার, নানাজাতীয় ভিটামিন ট্যাবলেট ও অন্যান্য ওষুধপত্র যুব শিবিরগুলিতে বিলি করতেন। পুষ্টি রক্ষায় এ দ্রব্যগুলি শিবিরগুলিতে অবস্থানরতদেরকে প্রভূত সাহায্য করতো।
নানা স্থানের বিক্ষিপ্ত লড়াই, পাক-সেনাদেরকে আক্রমণ, তাদের হত্যা বা কোন সেতু উড়িয়ে দেওয়ারমত যে সকল বীরত্বপূর্ণ কাজের খবর আমরা পেতাম-সেগুলিও যথারীতি আকাশবানী ও নতুন বাংলায় প্রচারের জন্য পৌঁছে দিতাম-যথারীতি সেগুলিও প্রচারিত হতো। মাঝে-মধ্যে সেগুলি বিবিসি ও প্রচার করতো।
পাবনা শহরের দ্বিতীয় দফা পতদন ঘটে ১০ এপ্রিল আর ১১ এপ্রিল প্রথম দফা পতন ঘটে ঈশ্বরদীর।ঈশ্বরদী ছিল পাবনা জেলার অন্যতম উত্তপ্ত থানা। সেখানকার ন্যাপ-আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ ভাবে আবার কখনও। নিজ নিজ উদ্যোগে একদিকে সভা-সমিতি-মিছিল চালিয়ে যাচ্ছিলেন-তেমনই আবার সেখানে থাকা বিহারীদের আক্রমণ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে হচ্ছিল। বিপুল সংখ্যক বাঙালী অস্ত্র সজ্জিত বিহারীদের হাতে নিহত হন।
ঈশ্বরদী বিমান বন্দর পাহারা দেওয়া কোন বিমান যাতে সৈন্য বা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নামতে না পারে সেজন্য ঐ বিমানবন্দরটির রানওয়েটিকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা বারংবার করলেও উপযুক্ত শক্তিশালী বোমা তৈরী করা সম্ভব না হওয়ায় সেটি উড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু সমগ্র থানা জুড়েরাস্তা কেটে, রাস্তায় গাছ কেটে ফেলে ব্যারিকেড রচনা করা হলেও ১১ এপ্রিল ক্ষিপ্ত পাক-বাহিনীর ঈশ্বরদীতে প্রবেশ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে নি। তাই তারাঈশ্বরদী ঢুকে বিহারীদের কাছ থেকে স্বাগত-সম্বর্ধনাও পায়। অপরপক্ষে পাকশী গিয়ে পদ্মা নদী বেয়ে হাজার হাজারে মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে থাকেন।
পদ্মা নদীর বিরাট অবদান ছিল পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধে। কুষ্টিয়ারও। ঐ নদী দিয়ে ছাত্র তরুণেরা পার হয়ে দলীয় ক্যাম্পাসগুলিতে অবস্থান নিয়ে তার মাধ্যমে অস্ত্র প্রশিক্ষণে খাবার সুযোগ পাচ্ছিল। করিমপুর ও কেচুয়াডাঙ্গা যুব শিবির দুটিতে তাই ঈশ্বরদীর ভাল সংখ্যক যুবক ভর্তি হয়ে সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়।
এভাবে বেশী বেশী রিক্রুট হওয়া যেমন যুদ্ধের জন্য সহায়ক ছিল তেমনি আবার সীমিত রদ ও অপরাপর সুবিধার অভাবে সাময়িকভাবে হলেও বেশ অসুবিধাও সৃষ্টি হতো যেমন তাদেরকে রিক্রুট করা হচ্ছে তাদের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা, নিয়মিত ডিলারের দোকান থেকে রেশন তুলে আনা, তাকবার জন্য তাঁবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম জোগার করা ইত্যাদি। ন্যাপ সিপিবির ক্যাম্পগুলিকে ভারত সরকার ও মুজিবনগর সরকারের স্বীকৃতি পেতে নানা কারণে যথেষ্ট বিলম্ব হওয়ার ফলে এই অসুবিধাগুলির সৃষ্টি হতো আবার এ গুলির সমাধানেও সেখানকার স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষের তৎপরতাও সাধারণভাবে যথেষ্ট থাকায় অসুবিধাগুলি মোকাবিলা করতে খুব একটা সময় লাগতো না।
কিন্তু একা করিমপুর শিবিরের সার্বিক দায়িত্ব যেমন, রিক্রুটিং, সামরিক প্রশিক্ষণে পাঠানো, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ, নবাগতদের রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা, তাদের আবাসন, সকল কর্মীর গতিবিধি সার্বিক নিরীক্ষণ-খুবই দুরুহ হয়ে পড়ে। কলকাতায় সিপিবি অফিসে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক কমরেড বারীন দত্তকে সমস্যাটি জানালে তিনি সহানুভূতি জানিয়ে কাকে দেওয়া যায় তা জানতে চাইরেন। বললাম কমরেড প্রসাদ রায় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ এবং আরও কিছু কাজে সহায়ক হতে পারেন। রাবীন দা বললেন, তিনি তো বেশ কিছু কাল নিষ্ক্রিয় এবং তাঁর সদস্যপদ নিজেই স্থগিত রেখেছেন। যদি তিনি স্থগিত সদস্যপদ ফিরে পেতে চান-অতীতের জন্য লিখিতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন-তা হলে তাঁকে নিতে আমাদের আপত্তি থাকবে না। কিন্তু তিনি কি ভারতে এসেছেন? ঊললাম, এসেছেন এবং কলকাতা থেকে আগরপাড়ায় তাঁর এক ভাই এর বাসায় সপরিবারে আছেন।
বারীন দা বললেন, তাঁকে নিয়ে আসুন। রাজী হলে পাঠানো যাবে। ছুটলাম আগরপাড়ায়। চিনে বের করলাম বাড়ীটি। প্রসাদ দা ২৫ মার্চের পর পরই তাঁর এক বিশ্বস্ত সুহৃদের সথে কুষ্টিয়ার এক গ্রামে যান সপরিবারে এবং কিছুদিনের মধ্যেই ভারতে চলে যান। তবে বিচ্ছিন্ন ছিলেন পাবনা জেলা সিপিবির ঈম্বরদী সম্মেলনের পর থেকে। ঐ সম্মেলনে তিনি পার্টির সম্পাদক হিসেবে যাঁর নাম প্রস্তাব হওয়ায় তিনি ঐ পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে অপর একজনের নাম প্রস্তাব করলে তিনি বাদ বাকী সকলের সমর্থনে নির্বাচিত হন। তৎক্ষণাৎ কমরেড প্রসাদ রায় তাঁর সদস্যপদ স্থগিত রাখার জন্য লিখিত আবেদন জানান।
যা হোক বাসায় পৌঁছে তাঁকে বিস্তারিত জানালে বারীনদার প্রস্তাবে প্রসাদ দা সম্মত হলে তাঁকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ কলকাতা গিয়ে উভয়েই বারীন দার সাথে সাক্ষাত করলে বারীন দা। প্রসাদ দার অবিমত জানতে চাইলে তিনি পার্টির প্রস্তাবে সম্মত আছেন বলে জানান। লিখিতভাবেও তখুনই তিনি তাঁর সদস্যপদ স্থগিত রাখাকে ভুল হিসেবে স্বীকার করে দুখ প্রকাশ করে সদস্য পদ চালু করার অনুমতি চায়। বারীন দা তাঁকে করিমপুর যুব শিবিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের পরদিনই তিনি আমার সাথে সেখানে যেতে সম্মত হন।
এবারে অনেক চাপ কমে গেল। তখন ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীদের প্রতি নজর বাড়াতে হলো। এঁরা সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্ত এবং পশ্চিম বাংলার মুসলিম সমাজ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হওয়ায় তাঁদেরকে পক্ষে আনার জন্য উদ্যোগ নিতে হয়। তাঁদের কথা ভারতে তাঁরা বিপদে পড়লে পাকিস্তানে আশ্রয় নিতে পারতেন কিন্তু পাকিস্তানই যদি না থাকে তবে তাঁদের বিপদের মুহুর্তে কোন বন্ধু থাকবে না। পাকিস্তান রাষ্ট্রটাই যে বাঙালি বিরোধী তা বুঝাতে বহু তথ্য হাজির করতে হয় এবং ২৫ মার্চ পরবর্তী অবস্থা যা আকাশবানী, বিবিসি প্রতিদিন প্রচার করছে এবং প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে আসা অসংখ্য শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা তরুণদের মুখে বাস্তব চিত্রগুলি দেখার ও জানার পর তাঁদের মনেও মুক্তিযুদ্ধার প্রতি সহানুভূতির সৃষ্টি হয়। সেটি আমাদের ক্যাম্পের পরিবেশ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জুন-জুলাই মাস। ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রথম ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধারা দেশে ঢুকতে সুরু করেছে সশস্ত্র অবস্থায় পাক-বাহিনীর ও দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই এর লক্ষ্যে। হঠাৎ জানা গেল ঐ সময়ে কোন এদিন সাতবাড়িয়া সুজানগরে পাবনা শহর থেকে কয়েক ট্রাক পাক সেনা অতর্কিতে এসে গ্রাম দুটিকে ঘিরে ফেলে। অতঃপর আতংক পুরুষেরা বাইরে নিরাপদ কোন আশ্রয়ে দৌড়ে যাওয়ার পথে তাদের আটকে ফেলে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ১২০০ মানুষকে হত্যা করে।
স্থানটি পদ্মা নদীর তীরবর্তী এবং নদীর তীরেই ঐ ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হয়। অতঃপর পাক-সেনারা ঐ দুটিসহ নিকটস্থ গ্রামগুলিতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালাতে হবে। ঐদিন দিনভর চলে ঐ ‘অপারেশন’ নামক তাণ্ডব। সন্ধ্যার আগেই প্রচণ্ড বৃষ্টি নেমে পড়ায় সেনারা দ্রুততার সাথে ফিরে চলে যায় পাবনাতে। কিন্তু রেখে যায় অগণিত হিন্দু মুসলিম নিরীহ মানুষের গুলিবিদ্ধ লাশ-যা ঐভাবেই শেয়াল-শকুনের খাবারে পরিণত হয়। অগ্নিবদ্ধ এলাকাগুলিতে শ্মশানের নিস্তব্ধতা চীৎকার করে কান্নারও সুযোগ নেই এমন কি মায়ের কোলের শিশুদেরও।
এই খবর পাওয়ার পর খুবই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়তে কারণ সুনির্দিষ্ট খবর না জানা থাকলেও মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম ঐ এলাকাতেই কোথাও না কোথাও আমার ফেলে আসা পরিবারের সদস্যরা লুকিয়ে কারও বাসায় অবস্থান করছেন। খবর সঠিকভাবে জানার জন্য ঐ এলাকায় কাউকে পাঠানোর চিন্তা করছি এবং আগেও অন্তত: দুইবার লোক গিয়ে খোঁজ করেছে কিন্তু তাদের কোন সন্ধান পায় নি।
দিন কয়েক কাটলো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে। অত:পর হঠাৎ একদিন বেলা ১২ টার দিকে দেখি সহধর্মিনী পূরবী কিন্তু সন্তান ও অন্যদের সমেত করিমপুরে আমাদের ক্যাম্পে এসে হাজির। চিনবার উপায় ছিল না কাউকেই। পূরবীর মাথায় এক ফোঁটা তেল জোটে নি বহুদিন অনাহার, অর্ধাহার, অনিদ্রার শুকিয়ে কাঠ। শিশুদেরও তাই। আসলেই যেন চাঁদ হাতে পাওয়া গেল। উভয় পক্ষের মনেই এমন ভাবনা বাসা বেঁধেছিল যে আর সম্ভবত: কেউই কাউকে পাব না। পাবনার অন্যান্য কমরেডদের পরিবার পরিজনকে অনেক আগেই নিয়ে আসা সম্ভব হলেও এদেরকে আনা যায় নি সন্ধান না পাওয়ার কারণে।
পূরবীর মুখে শুনলাম সাতবাড়িয়াতে ঐ ভয়াবহ গণহত্যা যখন চলে তার কয়েকদিন আগে থেকেই তাঁরা সাতবাড়িয়া কলেজের একজন অধ্যাপকের বাসায় আশ্রয় নেন। অধ্যাপক সম্মানের সাথেই থাকতে দেন। কিন্তু হঠাৎ ঐ গুলিবর্ষণের শব্দে পূরবী শিশুদেরকে নিয়ে (অন্যান্য সকলে সহ) ঐ বাড়ীর নিকটবর্তী একটি জল-কাদা ভরা খালে (চারদিকে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা) নেমে কানে কাপড় দিয়ে অপরপক্ষে শিশু সন্তান মালবিকা (কুমকুম) এর মুখ হাত দিয়ে চেপে সারাদিন লুকিয়ে থাকেন-যাতে কেউ কোন চীৎকার বা শব্দ না করতে পারে। সন্ধ্যায় পাক সেনারা চলে গেলে সবাই ঐ বাড়ীতে ফিরে এলেন।
কিন্তু এবার আর এক সমস্যার সৃষ্টি হলো। আশ্রয় দানকারী অধ্যাপক আর আমার পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া নিরাপদ বোধ না করায় তাঁরা একজন মুক্তিযোদ্ধা তরুণদের সঙ্গে নিয়ে নদী পার হয়ে প্রথমে রাজবাড়ী অত:পর হাঁটাপথে পশ্চিম বাংলায় চলে আসার জন্য রওনা হন। মাঠ-ঘাট-নদ-নদী পেরিয়ে সর্বস্ব ধুইয়ে রিক্ত হস্তে এক বস্তে দু’সপ্তাহ ধরে হেঁটে সীমান্তপার হয়ে কেচুয়াডাঙ্গা শিবিরে উপস্থিত হন। আওয়ামী লীগ নেতারা চিনতে পেরে একটি ছেলেকে সঙ্গে দিয়ে করিমপুর ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। লোমহর্ষক এই অভিযান যেন ঝড় বয়ে গিয়েছিল পরিবারের সকল সদস্যের উপর দিয়ে।
প্রতিবেশী একজন এসে স্বকর্ণে সব শুনে সকলকে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে স্নান আহারের ব্যবস্থা করেন গভীর আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধা সহকারে। আমিও সবার সাথে খেলাম। পরে পূরবীদেরকে ঘুমানো পরামর্শ দিয়ে আমি ক্যাম্পে চলে এসে দৈনন্দিনকাজে লিপ্ত হই।
ঐ প্রতিবেশী শেষ বিকেলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পে এলে অবশিষ্ট খবর জানলাম। সকলের ধারণা ছিল আমি বেঁচে নেই-কিন্তু কেচুয়াডাঙ্গা এসে (একটানা চার মাস পর) প্রথঞম শুনলেন আমি করিমপুর ক্যাম্পে আছি। তখনই সবাই করিমপুর অভিমুখে রওনা। আমরা দেশ থেকে এসে কি কি করেছি সেগুলিও বললাম। প্রতিবেশীটি নিজ থেকে আবার অনুরোধ জানালেন ৩/৪ দিন যেন সকলে তাঁর বাড়ীতেই থাকি। এড়ানো গেল না। কারণ উনি আমদের ক্যাম্পে এসে রোজ খোঁজ নিতেন-প্রয়োজন হলে তরীতরকারী বা এমন কি কোন কোন দিন মাছও এনে দিতেন আমাদের ক্যাম্পের সকলের জন্য। এমন একজন শুভাকাংখীকে এড়ানো অনুচিতও। তাই সকলে দিন কয়েক করিমপুরে থেকে কলকাতায় ছোট ভাই পরেশের বাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। ওখানে সকলকে রেখে ফিরে এলাম করিপমপুর।
একদিকে প্রসাদ দা ক্যাম্পে থাকলেও এক নাগাড়ে দীর্ঘদিন থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হতো না। তাই দু’তিন সপ্তাহ পরে পার্টিকে করিমপুর ক্যাম্পের পরিস্থিতি ও পূরবীদের ভারতে আসার খবর জানানোর পর দলের সভাপতি পূরবীকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে কিছু দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিলেন। পূরবীও রাজী হওয়াতে তাঁকে করিমপুর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ঐ প্রতিবেশীর বাসায় রাত্রে থাকা এবং দিনমান ক্যাম্পের নানা কাজে সম্পৃক্ত থাকার ব্যবস্থা করা হলো। ফলে প্রসাদ দা ও আমিও খানিকটা হালকা হতে পারলাম।
দেশের অভ্যন্তরে তাও অব্যাহতই থাকলো। যতই দিন যায় ততই দেশের অভ্যন্তরে অধিকতর সংখ্যক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র গোলা বারুদ নিয়ে গিয়ে পাক-বাহিনীর সাহস যুদ্ধে নতুন নতুন গতি সঞ্জার করতে থাকেন। অনেক বীরত্বপূর্ণ লড়াই পরিচালিত হয়।
গণহত্যাও চলতে থাকে ডেমরায়, সাঁথিয়ার আমবাগানে, ধূলাউড়িতে, আটঘরিয়ায় লক্ষ্মীপুর সহ বহু জায়গায়।
নয় মাস ধরে যুদ্ধ অব্যাহত থাকে।
লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, পাবনা, সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত।
পাঠকের মতামত:
- কাপ্তাইয়ে ঝড়ে চলন্ত গাড়ির ওপর ভেঙে পড়ল গাছ, আহত ২
- মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কামাল হোসেন ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- পটুয়াখালীতে সাংবাদিক-রাজনীতিক আব্দুর রশিদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- আরেক দফা কমলো স্বর্ণের দাম
- ‘দেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে’
- ‘তাপপ্রবাহে শ্রমজীবীদের বাঁচাতে সরকার কিছুই করছে না’
- ‘শাকিবের পরিবার বিরক্ত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে’
- কাপাসিয়ায় স্কাউটসের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- সাভারে পৃথক অভিযানে ৫ আসামি গ্রেফতার
- ৩ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার
- ‘ছাঁটাই ছাড়া চাল বাজারজাতে মিলারদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে’
- বদিউজ্জামানের ওপর হামলা চালিয়ে থানায় ঢুকে উত্তাপ ছড়ালো আমিনুল সমর্থকরা, সুষ্ঠ নির্বাচনী পরিবেশ ফেরানোর দাবি
- কালিগঞ্জে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির হাড়গোড় উদ্ধার, আটক ১
- মৌলভীবাজারে শিল্পায়নের নামে হাওর ধ্বংসের প্রতিবাদ ও পরিবেশের হৃৎপিণ্ড কাউয়াদিঘি রক্ষার দাবি
- তীব্র তাপদাহে ফরিদপুর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির শরবত বিতরণ অব্যাহত
- আগৈলঝাড়ায় ভোটযুদ্ধে ১৩ প্রার্থী
- ‘পঁচাত্তরের পর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’
- লোহাগড়ায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ
- রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে ২ নারীর মৃত্যু
- পাংশায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নাগরিক সমাজের মতবিনিময় সভা
- ভোটে প্রভাব বিস্তার করবেন না: মন্ত্রী-এমপিদের ইসি
- সোনা রপ্তানিতে বাংলাদেশে উজ্জ্বল সম্ভাবনা
- বশেমুরবিপ্রবিতে ইনোভেশন শোকেসিং বিষয়ক কর্মশালা
- পাংশায় বিদেশি পিস্তল সহ সাবেক মেম্বার গ্রেফতার
- পোশাক শ্রমিকদের নিপীড়ন নিয়ে অ্যামনেস্টির মিথ্যাচার
- নিজেদের করা পাপ নিজেদেরই মোচন করতে হবে
- বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় ৮০টি সৌদি কোম্পানি
- শৈলকুপায় একজনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা
- মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে খসরু চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন
- উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে প্রায় ৫ হাজার পর্যবেক্ষক
- ভৈরবে তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং, জনজীবন অতিষ্ঠ
- গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
- ভৈরবে ভ্রমণতরী ডুবে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বাল্কহেডের চালক গ্রেপ্তার
- দাম কমলো এলপি গ্যাসের
- ভৈরবে নূরানী কয়েল ফ্যাক্টরীতে আগুনে অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
- ধানে ভরপুর ভৈরবের মোকাম, দাম নিয়ে হতাশ কৃষক-ব্যবসায়ীরা
- বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আপিল বিভাগের নতুন ৩ বিচারপতির শ্রদ্ধা
- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বর্তমান সরকারের ভূমিকা
- আশুলিয়ায় স্বামীর পিটুনিতে গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যু
- জাবি উপাচার্যের নামে ভুয়া মেইল আইডি, তথ্য আমলে না নেওয়ার আহ্বান
- মহম্মদপুরে মহান মে দিবস উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- 'ফরিদপুর সদর উপজেলার জনগণ মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিতে ৮ তারিখের অপেক্ষা করছে'
- গোপালগঞ্জে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলেজ ছাত্র নিহত
- ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে কোন লাভ হবে না’
- দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াবে পিএসজি, আশাবাদী এনরিক
- শনিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা
- উপজেলা ভোটের দ্বিতীয় ধাপের প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচার শুরু
- ‘মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে সব অপকর্ম বের করবো’
- কক্সবাজারে বজ্রপাতে দুই লবণচাষী নিহত
- ওমরাহ পালনে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !