E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ার নেপথ্য কারণ

২০২২ মার্চ ২৩ ১৯:৩২:০২
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ার নেপথ্য কারণ

আবীর আহাদ


যে যা-ই বলুন ও ভাবুন, মুক্তিযুদ্ধের একজন ছোটোখাটো অধিনায়ক হিশেবে যুদ্ধ ও সামরিক কৌশলের অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন একাই লড়ছে না। তাকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো প্রকাশ্যে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে, পাশাপাশি অঘোষিতভবে তাদের কেউ কেউ ইউক্রেনীয় সামরিক পোষাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা আরো একটা কৌশল নিয়েছে, সেটা হলো মানবঢাল। ইউক্রেনের অধিকাংশ শহর ও জনপথ রাশিয়ার করতলগত হলেও, বিশেষ করে রাজধানী কিয়েভ ও ২য় বৃহত্তম নগরী মারিওপোলিতে এসে রুশবাহিনী ঐ মানবঢালে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন ও তার মিত্ররা কয়েক লক্ষ নিরীহ ইউক্রেনীয়কে রুশবাহিনীর আক্রমণের অজুহাতে নিজেরাই কার্ফু জারি করে এ দুটি শহরের ঐ লক্ষ লক্ষ জনসাধারণকে কার্যত: গৃহবন্দি করে তাদেরকে মানবঢাল বানিয়ে রেখেছে, যাতে রুশবাহিনী তাদের ওপর হামলা না চালায়। কারণ রুশবাহিনীর সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ না চালানোর নীতিগত অবস্থানে থাকার এ সুযোগটা গ্রহণ করছে ইউক্রেন ও তার মিত্রবাহিনী। এ বিষয়টি না ঘটলে, ইউক্রেন ও তার মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে মহা পরাক্রমশালী রাশিয়ার বিজয় অনেক আগেই সম্পন্ন হতো।

অপরদিকে ইউক্রেনের মাটিতে যুদ্ধ সংঘটিত হলেও এ যুদ্ধে ইউক্রেন বাহিনীর নেপথ্য কমান্ডার-ইন-চীফ স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রকাশ্যে শুধু কৌতুকি অভিনয় করে চলেছেন। জেলেনস্কি ব্যক্তিজীবনে একজন সফল কৌতুক অভিনেতাও বটে। ইউক্রেনীয় কমাণ্ডার-ইন-চীফ জো বাইডেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর অপাড়ে বসে খেলছেন। তার অশুভ খেলার যুপকাষ্ঠে ইউক্রেন জ্বলুক পুড়ুক মরুক, তাতে বাইডেনের কিছুই যায় আসে না। তার প্রয়োজন সুযোগ বুঝে আকাশচুম্বি দরে ইউক্রেনের কাছে তার গুদামজাতকৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা। অন্যদিকে ইউক্রেনের কৌতুক অভিনেতা-প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হয়তোবা ক্ষমতায় আসা ও থাকার লোভে বিপুল পরিমাণ মার্কিন অর্থ ও শর্তের মধ্যে এমনভাবে আটকা পড়ে আছেন যে, তার পক্ষে ইউক্রেনের স্বার্থে স্বাধীনতাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না! এ অবস্থায় ইউক্রেনের মানুষ ও সহয়সম্পদ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও পেছন থেকে বাইডেন যা বলবেন তাকে রোবোটের মতো তা-ই করে যেতে হবে। অবস্থা বেগতিক দেখলে জেলেনস্কিকে ছুঁড়ে ফেলতে বাইডেন এক মিনিটও দেরি করবেন না।

তবে সম্ভবত: ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটা বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছেন। সেটি হলো, তিনি যুদ্ধ প্রলম্বিত করে দেখতে চাচ্ছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো রাষ্ট্র কি কি সমরাস্ত্র নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয় কিনা। হলে তিনি সবাইকে চিহ্নিত করে তার তরুপের দাসটি খেলবেন। কারণ সমগ্র শত্রুদের মোকাবিলা করার শক্তি ও কৌশল ইতোমধ্যে তিনি অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। তাছাড়া এধরনের যুদ্ধের মাঠে তিনিও একা নন। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যেমন চীন, ভারত, ইরান, সৌদি আরব, তুরস্ক, সিরিয়া, হাঙ্গেরি, উত্তর কোরিয়াসহ দক্ষিণ আমেরিকার কতিপয় রাষ্ট্রে তাঁর বন্ধু রয়েছে।

উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের নিরীহ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর অশুভ বলয় গুড়িয়ে দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্লাদিমির পুতিন তথা মানবিক পৃথিবীর নেতৃত্ব রাশিয়ার বিজয় ঘটুক, এটাই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের একান্ত প্রত্যাশা।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test