E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেয়া-নেয়া ও লুটপাটের অর্থনীতি

২০২২ এপ্রিল ০৪ ১৪:৫৮:৪০
দেয়া-নেয়া ও লুটপাটের অর্থনীতি

আবীর আহাদ


জেনারেল জিয়া একটা দর্শনের প্রচলন করেছিলেন। সেটা হলো: "Money is no problem"! সেই দর্শন চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি সেটি ক্ষমতার সাথে জড়িতদের কাছে একটা আদর্শিক প্রক্রিয়া হিশেবে গণ্য হয়ে আসছে। সেই প্রক্রিয়ায় অনেক উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিক মন্ত্রী এমপি আমলা ব্যবসায়ী ঠিকাদার প্রকৌশলী শিল্পপতিসহ সরকারের আত্মীয়-স্বজন সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট করে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের কাছে টাকা আসলেই কোনো সমস্যা নেই। টাকা দিন পদপদবী নিন, অবাধ লুটপাট করুন, কমিশন দিন! এই দেয়া-নেয়ার ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে দেশে লুটপাটের অর্থনীতি। এমনই অঢেল টাকা যা দেশের মধ্যে রাখার জায়গা না-থাকাতে বিরাট অংশ নানান অনৈতিক পন্থায় সুইস ব্যাংক, পানামা ব্যাঙ্কসহ আমেরিকা কানাডা দুবাই ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া মালায়েশিয়া সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশে পাচার করে সেসব দেশের ব্যাঙ্ক ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে।

কারা এসব অবৈধ অর্থের মালিকসহ পাচারের সাথে জড়িত তাদের খবর অবশ্যই সরকারের নখদর্পণে রয়েছে। তাছাড়া বিগত কিছুদিন পূর্বে সুইস ও পানামার ব্যাঙ্কে কাদের অর্থ রয়েছে সে-বিষয়ে পানামা পেপার্স নামক মিডিয়ায় খবরও প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দুদক এসবের খবর অবশ্যই জানে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এ যাবতকালের মধ্যে ১২/১৫ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এসব অর্থে লণ্ডন, দুবাই, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন বড়ো বড়ো শহরে বাঙালি/বেগমপল্লীও গড়ে উঠেছে। অনেক লুটেরা আছে, যারা বিদেশে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের রাজকীয় জীবন যাপনে রেখে নিজে একলা দেশের মাটিতেও রাজকীয় জীবনযাপন করছে এবং লুটপাট করে চলেছে। এসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াদের কার্যকলাপ দেখে মনে হয়, তারা বাংলাদেশকে অবাধ লুটপাটের ক্ষেত্র বলে গণ্য করে।

আসলেই বাংলাদেশ এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, যেখানে অর্থের বিনিময়ে রাজনীতি ও প্রশাসনের পদপদবী লাভ করে সেখান থেকে শত শত কোটি টাকা কামাই করা যায়! চরম অসৎ উপায়ে এমনতর অর্থ লুটপাট করলেও তারা ধরাছোঁয়ার উর্দ্ধে থেকেই যায়! এমন এক অর্থলিপ্সুতায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে যে, দশ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়মূল্য একশো কোটি এক কোটি টাকার মালামাল ক্রয়মূল্য দশ কোটি একটা পাঁচশো টাকার বালিশ ছয় হাজার টাকা, একটা দশ হাজার টাকার নারকোল গাছ নয় লক্ষ টাকা, একটা কম্পিউটার মেরামতে পঁচিশ লক্ষ টাকা, একটা বিশ হাজার টাকার পর্দা পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা এমনিভাবে হাজার হাজার সরকারি ছোট বড় ও মেগা প্রকল্প ও মালামাল ক্রয় খাতের মূল্য শত/হাজার গুণ বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে এসবের সাথে জড়িতরা রাতারাতি বিরাট ধনিকে পরিণত হচ্ছে! যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে অতি দ্রুততম সময়ে ধনিকশ্রেণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এছাড়া ব্যাঙ্ক ও শেয়ারবাজার লুটসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাত থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ।

এসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াদের লুটপাটের কিছু কিছু খবর প্রকাশিত হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথবা বলা চলে লুটেরাদের সাথে ভাগাভাগির প্রক্রিয়ায় সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে ।

বাংলাদেশে এই যে অর্থের অবাধ গতিপ্রকৃতি সেটাই হলো জেনারেল জিয়াউর রহমানের আর্থসামাজিক দর্শন, যার ওপর নির্ভর করে আমাদের দেশে লুটপাটের অবাধ রাজত্ব গড়ে উঠেছে। আর এভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সযতনে দূরে সরিয়ে দিয়ে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দর্শন সার্থকভাবে অনুসরণ করে চলেছে!

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test