E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার

২০২২ এপ্রিল ১৬ ১৪:৪৩:০৭
মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার

এম. আব্দুল হাকিম আহমেদ


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৭ ই এপ্রিল এক অবিস্মরনীয় দিন। এদিন ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। তাই মুজিবনগর দিবস বাঙালী জাতির ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে, জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী শুরু হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। প্রাথমিক প্রতিরোধের এক পর্যায়ে  ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিবৃন্দ এক সভায় সমাবেত হয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে মন্ত্রী সভার সদস্য করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন এবং স্বাধীনতার সাংবিধানিক ঘোষণাপত্র গ্রহণ ও অনুমোদন করেন। যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭২ এর সংবিধানের মূল ভিত্তি। এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। 

১৯৭১ সালের ১০ ই এপ্রিল সরকার গঠনের পর মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১১ এপ্রিল এক বেতার ভাষণে বলেন- “স্বাধীন বাংলাদেশের বীর ভাই বোনেরা, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তিপাগল গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদেরকে আমার সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি তাঁদের, যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের মূলবান জীবন আত্মাহুতি দিয়েছেন। যতদিন বাংলার আকাশে চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-তারা রইবে, যতদিন বাংলার মাটিতে মানুষ থাকবে, ততদিন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামের বীর শহীদদের অমর স্মৃতি বাঙ্গালির মানসপটে চিরঅম্লান থাকবে।”

১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলার আ¤্রকাননে বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। বিপুল উৎসাহ ও প্রচন্ড বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মেহেরপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক তৌফিক এলাহী চৌধুরী ও ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে দেবদারু কচিপাতার তরণ নির্মাণ করা হয় এবং ছোট্ট একটা মঞ্চ সাজানো হয়। তরণের দুই পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবিও ঝুলানো হয়। নেতাদের গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন ১২ জন চৌকস আনসার। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। আনসার অভিভাদন গ্রহণ শেষে একে একে নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উঠেছিলেন। প্রথমে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তার পিছনে তাজউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলি ও জেনারেল এম.এ.জি ওসমানি। নেতৃবৃন্দের আসন গ্রহণের পর অনুষ্ঠানসূচি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে ১৭ বছরের ছাত্র বাকের আলি। নতুন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দলিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন চীফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী পদে তাজউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে খন্দকার মোশতাক আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পদে এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান ও অর্থমন্ত্রী পদে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল এম.এ.জি ওসমানী। সেনাবাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ পদে ঘোষণা করেন আব্দুর রবের নাম। সেদিন মুজিবনগরে কয়েক হাজার উৎসুক জনতা এবং দেশী বিদেশী সাংবাদিক, কুটনৈতিকবৃন্দ ছাড়াও মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও এম.এন.এ জনাব ছহিউদ্দীন বিশ্বাস, এম.পি জনাব নুরুল হক, কুষ্টিয়ার এমপি ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম সহ আওয়ামী লীগের গণপ্রতিনিধিবৃন্দ, এসডিও জনাব তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় মেহেরপুর ও মুজিবনগরবাসী উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ‘মুজিবনগর’ নাম করণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশি-বিদেশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জনাব তাজউদ্দিন সাহেব সেদিন বলেছিলেন যে, এই সরকার যেখানেই তার অফিস পরিচালনা করবেন তার নাম হবে “মুজিবনগর” এবং সে হিসেবে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের ভবনটি মুজিবনগর নামে পরিচিত হয়। সেদিন থেকে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার এই বিশাল আ¤্রকানন রাতারাতি মুজিবনগর নামে খ্যাতি লাভ করে। ১৭ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সরকার পরিচালনার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। এর মাধ্যমে জন্ম হয় নতুন এক রাষ্ট্র, যার নাম ‘বাংলাদেশ’ এবং সারা পৃথিবীকে তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ শেষে বাংলাদেশ সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করে বলেন-“আজ এই মুজিবনগরে একটি স্বাধীন জাতি জন্ম নিল। নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে স্তব্ধ করা যাবে না। পৃথিবীর মানচিত্রে আজ যে নতুন রাষ্ট্রের সংযোজন হল তা চিরদিন থাকবে। এমন কোন শক্তি নেই যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিশে^র মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে পারে।” এই অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী সাংবাদিক, বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সরকার ও জনগণের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদও একটি লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। মুজিবনগর সরকারের অধিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় ছিল কোলকাতায়।

একটি নিয়মিত সরকারের মতো এর ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কেবিনেট সচিব ও অন্যান্য সচিব, স্থায়ী ও বেতনভুক্ত বেসামরিক-সামরিক সরকারি কর্মচারী। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক সেক্টরে একজন করে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতো তাঁরাও ছিলেন বেতনভুক্ত। রাষ্টপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কমান্ডার-ইন-চিফ। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী ছিলেন প্রধান সেনাপতি। সরকার বাংলাদেশকে ১১ টি সাময়িক সেক্টরে বিভক্ত করার পাশাপাশি সমগ্র দেশকে কয়েকটি জোনে বিভক্ত করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে বেসামরিক প্রশাসন-ব্যবস্থা গড়ে তোলে। দেশের মুক্ত অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের অনুশাসন পালিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন এ সরকার গঠন অত্যন্ত জরুরি ছিল। অন্যথায়, মুক্তিযুদ্ধে দেখা দিত সমূহ বিপর্যয়। সরকার গঠনের ফলে একক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রথম বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকারের বৈধ ভিত্তি ছিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। ঐ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক “আমাদের বাঁচার দাবী” ৬-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় অর্জন করে (৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন ও ৭২.৫৭% প্রদত্ত ভোট)। পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল আরো নিরষ্কুশ। জাতীয় পরিষদে পূর্ব বাংলার জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি (৭টি মহিলা আসনসহ) লাভ করে। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদেও আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল অবিস্মরণীয়। ৩১০ টি প্রাদেশিক পরিষদ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসন ও প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৮৯ ভাগ লাভ করে। ৭০-এর নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শুধু মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবেই আবির্ভূত হননি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃত হন বাঙালিদের একমাত্র মুখপাত্র বা ‘সোল স্পোকস্ম্যান’ হিসেবে। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মতো বঙ্গবন্ধু ও যদি তাঁর দল নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ‘এল এফও’ (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) খড়গের কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত থাকতেন, তাহলে তা হতো আত্মঘাতী। ৭০-এর নির্বাচনে গণম্যান্ডেট ব্যতীত বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের (১৯৭১) স্বাধীনতা ঘোষণা চিহ্নিত হতোUDI (Unilateral Declaration of Independence) বা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন (Secessionist Movement) হিসেবে, যে-পথ বঙ্গবন্ধু সর্বদা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিহার করে তাঁর লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন। তাঁর সম্মুখে উদাহরণ ছিল কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী জনগোষ্ঠীর মুক্তিসংগ্রাম সঠিক রাজনৈতিক পন্থা ও নেতৃত্বের অভাবে বিপর্যস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। আফ্রিকার দেশ নাইরেজিরয়ার বায়াফ্রা’র উদাহরণ তো ছিলই।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কাছাকাছি সময়ে (১৯৬৭-১৯৭০) দেশটির দক্ষিণ অঞ্চল বায়াফ্রা’র এক সেনাকর্মকর্তা কর্নেল ওজুকু নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনটি রাষ্ট্র স্বীকৃতিও দেয়। কয়েক বছর তাদের সশস্ত্র যুদ্ধ চললেও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগে আমেরিকা, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ব্রিটেনসহ বৃহৎ শক্তিগুলোর সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে বায়াফ্রা’র ঐ স্বাধীনতা সংগ্রাম ধ্বংস হয়ে যায় । বঙ্গবন্ধুর জন্য ৭ মার্চ ছিল এক যুগ-সন্ধিক্ষণ। একদিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত জনগণের অদম্য আকাঙ্খা, অন্যদিকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা (ইউডিআই)-র মারাত্মক পরিণতি। তিনি তাঁর ১৮ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরে বাঙালির ওপর পাকিস্তানিদের শাসন- শোষণ ও জাতি-নিপীড়নের বিবরণ তুলে ধরে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্ততি গ্রহণের নির্দেশনা দান করে বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে শেষে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা’- বলিষ্ঠ কন্ঠে এ- কথা উচ্চারণ করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। ২৫ মার্চ ১৭৯১ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়লে একদিকে শুরু হয় মানবজাতির ইতিহাসে এক বর্বর গণহত্যা, যা ৯ মাস ধরে চলে, অপরদিকে সৃষ্টি হয় সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রতীক্ষিত ক্ষণ। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

ঐতিহাসিক এই দিনে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ জাতীয় চার নেতা যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশনার প্রতি অবিচল থেকে বঙ্গবন্ধুকে ধ্যানে-জ্ঞানে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করে, মুজিবনগর সরকার গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর সফল কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন; ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেম্বর নির্মম জেল হত্যার শিকার সেই চার নেতা উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতিও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মুজিবনগর শুধু স্থানের নাম বা সাধারণ দিবস নয়, এটি অরুণণোদয়ের ইতিহাস, আমাদের নিরন্তর প্রেরণার উৎস। ১৭ এপ্রিল একইসাথে দ্রোহ অর্জন ও শপথ নেবার দিন। বছর ঘুরে ১৭ এপ্রিল আসে চেতনার সেই বহ্নিশিখা নিয়ে। তাই এদেশের মানুষের কাছে তথা বাঙ্গালি জাতির কাছে ঐতিহাসিক মুজিবনগর এক সংগ্রামী ও স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাই দ্বিধাহীনভাবে বলা যায় যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এদেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হতোনা, ঠিক তেমনি মুজিবনগর সরকার তাদের উপর অর্পিত ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন না করলে স্বাধীনতা লাভ করাও সম্ভব হতোনা।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দুইটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি স্বাধীনতা, যেই স্বাধীনতার ডাক তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যা পূর্ণতা লাভ করেছে ১৬ ডিসেম্বর। আর একটি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা, সেই লক্ষ্যে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবায়ন করে যেতে পারেন নি। আজ বঙ্গবন্ধু নেই, টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় সাহিত আছেন। আর কোন দিন আসবেন না। কিন্তু তার রক্ত ও চেতনার উত্তরসূরী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকা যার হাতে বাংলার জনগণ তুলে দিয়েছিলেন, সেই পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে, সততার সাথে দল পরিচালনা করে, চার বার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন; তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সুতরাং সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী- শোষণমুক্ত, ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। আজকের মুজিবনগর দিবসে এই হোক আমাদের শপথ।

লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test