E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বপ্নের পদ্মা সেতু আস্থার প্রতীক  

২০২২ জুন ২৪ ১৬:০৭:৩১
স্বপ্নের পদ্মা সেতু আস্থার প্রতীক  

প্রভাষক নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


পদ্মা সেতু কেবল একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইল ফলক স্থাপন করেছে এটি বলেই শেষ করা যাবে না। এ পদ্মা সেতু বদলে দিয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার শক্তি দেখিয়েছে শক্তিশালী মনোবল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের গুন যে প্রবল তা প্রকাশিত হয়েছে কানায়কানায়। শুধু মাত্র নেতৃত্বের গুন ও দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে দেশকে যে এগিয়ে নেওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ। পৃথিবীতে বাংলাদেশ আজ যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে শিরোনাম হয়েছে তার অন্যতম কারন আজকের এ পদ্মা সেতু। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যত কাজ হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। একসময় যারা এর বিরোধিতা করেছে তারাই আজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গুনগান করছেন। উদ্বোধন হওয়ার আগেই চলে যাচ্ছেন পদ্মা সেতু দর্শনের জন্য। আসলে বিষয়টা এরকমই ।

আমাদের ‘হবে না’ শব্দটির প্রতি একটা দূর্বলতা তৈরি হয়েছে যে না বুঝেই নিমিষেই সব শেষ করে দেই। সময় সুযোগে বিভিন্ন স্থানে প্রায়সময়ই লেখালেখি করি কিন্তু এ বিষয়ে একটা লেখাও হয়নি এ পর্যন্ত। ভেবেই নিয়েছিলাম এ বিষয়ে আর লিখবো না। কিন্তু উদ্বোধনের আগ মুহূর্তে মনের মাঝে এমন একটা আগ্রহবোধ জন্ম নিয়েছে যে এ বিষয়ে কিছু না লিখে মন কে মানানো যাচ্ছে না। আর বেশি আগ্রহ দেখা দিয়েছে যে বিরোধিতাকারীদের দেখে যার একসময় এমন কিছু বলতে বাদ দেয়নি তাদের চরিত্রিক মনোভাব দেখে। আমরা এমন অবস্থানে দাঁড়িয়েছি যে বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করে যাচ্ছি সবসময় হউক সে দেশের বিরুদ্ধে। মুখে দেশের স্বার্থের কথা বলে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের অপরাধকে আঁড়াল করার চেষ্টায় সময় অতিক্রম করছি। দেশের স্বার্থ নিয়েও মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছি অনবরত। কিন্তু কেন এত কথা বলা হচ্ছে আমাদের সেতু নিয়ে ? আসলেই কি এত কথা হওয়ার কথা ?

পরিবেশ পরিস্থিত আমাদের এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে কথা না হয়ে উপায় নেই। আমার মনে হয় বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে এই সেতু হলে আজ এত আওয়াজ হতো না যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আজকের যে আওয়াজটা শুনা যাচ্ছে তাতে বেশি অবদান রেখেছে বিরোধিতাকারীরা। তাদের এ বাঁধার ফলেই প্রধানমন্ত্রী এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। আর তাই এটা একটা যুদ্ধ জয়ের মতোই লাগছে আওয়ামীলীগ ও সাধারণ মানুষের মাছে। বিরোধিতাকারীরা মানে বিএনপি ও বিএনপিপন্থী সুশীল কে আরেকটি পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তাই এটি একটি রাষ্ট্রীয় ইস্যুর বাইরে দলীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বললে এর কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে না বললে এ অপূর্ণই থেকে যায়। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে যুক্ত হবে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার।

পদ্মা- ব্রহ্মপুত্র- মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২ টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যর ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কি.মি. এবং প্রস্ত ১৮.১০ মিটার। অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ৯শ ১৮ হেক্টর। মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে। যদিও ২০০৮-০৯ সালে প্রকল্পের সাথে যুক্ত কিছু লোকদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠায় বিশ্ব ব্যাংক ১শ ২০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্যান্য দাতারাও বিশ্ব ব্যাংকের পথে হাটে। বিশ্ব ব্যাংকের এ কাজটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ যদিও পরে তা প্রমাণিত হয়েছে। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সচিব মোশারফ হোসেন ভূইয়াকে জেলে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ায় মামলাটি বাতিল করে দেয় কানাডীয় আদালত।

বিশ্ব ব্যাংকের নাটক শেষে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু তৈরি করার মহাপরিকল্পনা করে। কম মন্তব্য এবং হাসাহাসি হয়নি এনিয়ে। সমালোচনার কোন অভাব ছিল না। সরকারকে কিছু সুশীল সমাজের মানুষ ও বিরোধী দল এমনভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছে যে এর ফলে সরকারের শক্তি আরো দ্বিগুণ হয়েছে এবং সরকারের মানসিক দৃঢ়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু যেন সরকারের অগ্রাধিকার খাতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি পিলার যখন স্থাপতি হয়েছে তা যেন একটি স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছে। দুই পাড়ের মানুষ ও এলাকায় বসবাসকারীদের কাছে পদ্মা সেতু কেবল একটি সেতুই নয় এ যেন আত্মার বন্ধন। কারন এ সেতুকে ঘিরে এলাকায় মানুষ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের যে স্বপ্ন দেখছে তা যেন আকাশের সীমাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে হৃদয়ে।

সত্যিকার অর্থে এই অঞ্চলের মানুষের যে প্রয়োজনীয়তা এ সেতুর তা দেশের অন্যান্য মানুষের কাছে সে গুরুত্ব বহন করে না। এ সেতুকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধির যে পরিবর্তনের সূচনা হচ্ছে তা বাস্তবায়িত হলেই বুঝা সম্ভব। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ প্রান্তে এসে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার প্রস্তাব করে ও তার অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করেন। ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই টোলকে ঘিরেও সমালোচকরা বিভিন্ন প্রশ্নের জাল তৈরি করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু আশার বিষয়টি হলো ভালো যখন একটি জিনিষ তৈরি হয় তখন কোন ষড়যন্ত্রের জাল কাজে আসে না। সাধারণ মানুষের সমর্থনে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। সমালোচনাকারী তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

পদ্মা সেতু তা প্রমান করে। সরকারের কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে সবকিছুই সফলতা আসবে তা কিন্তু নয় তবে পদ্মা সেতুর যে সফলতার গল্প তৈরি হয়েছে তা দেশবাসী মনে রাখবে আজীবন। কারন এ সফলতার গল্পে ছিল অসীম বাঁধা তৈরি হয়েছে সাহসিকার ভিত্তিতে এজন্য গল্পের সফলতা দীর্ঘস্থায়ী। এ সেতু দিয়ে যেসব মানুষ সরাসরি সুফল পাবে তাদের সফলতার জায়গাটা আরো বেশি হবে সবসময়। আর যারা সরাসরি সফলতার সাথে যুক্ত হবে তা তাদের ভালোবাসাটাও গভীরে পৌঁছাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারন এ থেকে সারা দেশে অর্থনৈতিক সফলতার যে দ্বার উম্মোচন হবে তার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

আর এলাকার মানুষের জীবনমানের উপর প্রভাব পড়বে প্রত্যক্ষভাবে। সেতুতে শুধু সড়ক পথের পরিবহনই নয় চলবে রেলগাড়ীও। সহজ হবে বিদ্যুৎ , গ্যাস স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও। সারাদেশের সাথে দক্ষিণ- পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের সরাসরি সংযোগ তৈরি হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ৩ কোটিরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের জিডিপি ১.২ শতাশ বৃদ্ধি পাবে পদ্মা সেতু চালু হলে। সার্বিক বিচারে দেশের মানুষের জন্য আর্শীবাদ হয়েছে এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। স্বপ্নের পদ্মাসেতু আস্থা জাগানোর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে আজ।

লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test