E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শহীদ শেখ কামাল: প্রতিভার দশ দিগন্তে ছিল যাঁর অবাধ বিচরণ

২০২২ আগস্ট ০৬ ১৫:২৮:০৪
শহীদ শেখ কামাল: প্রতিভার দশ দিগন্তে ছিল যাঁর অবাধ বিচরণ

মানিক লাল ঘোষ


মাত্র ২৬ বছরের জীবন! এই অল্প বয়সে দেশ ও সমাজ ভাবনায় বাঙালির সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে এক বিরল প্রতিভাবান সংগঠক ও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে অসামান্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। ক্ষমতার কেন্দ্র অবস্থান, কিন্তু চলাচলে সাধারণ, আচরণে বিনয়ী। ভদ্রতা যার পারিবারিক শিক্ষা। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও যাঁর মধ্যে ছিলো না কোনো অহমিকাবোধ। অবাধ বিচরণ ছিলো প্রতিভার দশ দিগন্তে। পড়াশুনার পাশাপাশি সংগীত চর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, খেলাধুলাসহ কোন ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন না তিনি? এমন প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায় সেই যুবকের কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক লেখনীতে। আলোচনায় উঠে আসে তারুণ্যের অহংকার সেই যুবকের বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের কল্পকাহিনি। বহুমুখী সেই যুবকের নাম শেখ কামাল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জেষ্ঠ্য পুত্র ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ কামাল। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান দ্বিতীয়। ঢাকা শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ( সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।

ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং সংগঠক হিসেবে ছাত্রদের কাছে প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি। ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামালের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাত্রসমাজকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতো। বাংলার ছাত্রসমাজ সেদিন শেখ কামালের মাঝে খুঁজে পেতো বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রসমাজকে সুসংগঠিত করে দেশমাতার মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলার ফুটবল দলকে সুসংগঠিত করেন শেখ কামাল। তিনি স্বপ্ন দেখতেন দেশ স্বাধীন হলে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের চিত্র এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় বহির্বিশ্বে আসীন হবে বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা অর্জনের পর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া দেশ পুনর্গঠনে তাঁর অসামান্য মেধাকে কাজে লাগানো চেষ্টা করেন শেখ কামাল।মুক্তিযুদ্ধের পর সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন তিনি, ফিরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সম্পন্ন করেন সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী।

স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে এক জনপ্রিয় যুবকের নাম শেখ কামাল। অধ্যয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তাঁর পদচারণ ছিলো মুখর। তিনি ছায়ানট থেকে নেন সেতার শেখার তালিম। বন্ধুদের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন নাট্যদল (ঢাকা থিয়েটার) এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী।

দেশের জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠন "আবাহনী ক্রীড়াচক্র " প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে আছেন শেখ কামাল। ১৯৭২ সালে আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই সংস্থার নামে সুসংগঠিত করেন ফুটবল দল "ইকবাল স্পোর্টিং" আর ক্রিকেট ও হকির দল "ইস্পাহানী স্পোর্টিং"। এসব দলের সমন্বয়ে নব উদ্যমে যাত্রা শুরু হয় আবাহনী ক্রীড়াচক্রের।

শেখ কামালের সহধর্মিণী সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাঁর পরিচিতি ছিলো প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে। শেখ কামালের স্বপ্ন ছিলো ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার। স্বপ্ন বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা ছিলো তাঁর। ফুটবলের উন্নতির জন্য ১৯৭৩ সালে আবাহনীতে নিয়ে এসেছিলেন বিল হার্টকে। শুধু ক্রীড়াঙ্গন নয়, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতাবিরোধী ও একটি কুচক্রীমহল। নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের মাধ্যমে শেখ কামালের জনপ্রিয়তার লাগাম টেনে ধরা ও তাঁর উদ্যমতাকে দমিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করে ঐ কুচক্রীমহলটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মা ও বাবাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যদের সংগে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে মৃত্যুর শিকার হন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যাকান্ডের এই নারকীয় ঘটনায় প্রথম শহীদ শেখ কামাল।

বজলুল হুদা তার স্টেন গান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলেকে হত্যা করে। আদালতের দেয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অন্যতম পাহাড়াদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বাড়িতে প্রথমেই প্রবেশ করে ঘাতক চক্রের সদস্য মেজর বজলুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন বাড়িতে ঢুকেই শেখ কামালকে দেখতে পায়। সাথে সাথেই বজলুল হুদা স্টেন গান দিয়ে তাকে গুলি করে। শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে পড়ে যান। সেখানে গিয়ে তাকে আবারও গুলি করে হত্যা করে ঘাতক চক্র। সেই সাথে নিভে যায় ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। যারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন শেখ কামালের বিরুদ্ধে , রটিয়েছিলেন নানামুখী কুৎসা, তারা আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আজকের সাফল্য শেখ কামালের স্বপ্নের প্রতিফলন। ক্রীড়াক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে এই দেশকে তুলে ধরার যে স্বপ্ন দেখতেন শেখ কামাল, সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাঁর বড় বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের মৃত্যু নেই। স্বপ্নচারী শেখ কামাল বেঁচে থাকুক তরুণ সমাজের অহংকার হয়ে।

লেখক : সহ সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, কার্যনির্বাহী সদস্য,যুবলীগ।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test