E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানবিকতার উজ্জ্বল আলোর দ্যুতি ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বৃত্তি’

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৫:৩৭:৪৯
মানবিকতার উজ্জ্বল আলোর দ্যুতি ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বৃত্তি’

চৌধুরী আবদুল হান্নান


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনদানকারী এবং পঙ্গুত্ব বরণকারী ভারতীয় সেনা সদস্যদের সরাসরি উত্তরসূরীদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০০ শিক্ষার্থীকে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বৃত্তি” দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

পত্র-পত্রিকায় খবরটি তেমন প্রচার পায়নি কিন্ত খবরটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসেশেখ হাসিনার এ উপলব্ধি তাঁকে আর একবার “ মানবতার দূত” হিসেবে দেখা মেলে।

নিজ দেশের জন্য নয়, অন্য একটি আক্রান্ত দেশের পক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তারা, সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়েছেন যা বিশ্ব ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।

‘৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র সেনারা যখন নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাপিয়েপড়ে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী নির্যাতনে লিপ্ত হলো, অসহায় লাখো নারী-পুরুষ-শিশুঘর ছাড়া হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করলো, সহায় সম্বলের মায়া ত্যাগ করেকেবল জীবন বাঁচাতে অনিশ্চয়তার পথে তাদের অন্তহীন যাত্রা শুরু, তখন প্রতিবেশী দেশ ভারত এসকল অসহায় মানুষের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিলো, নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করলো। অচিরেই ভারতের মাটিতে এক কোটি শরনার্থীর বাড়তি বোঝা চেপে বসেছে।

তৎকালীন প্রাধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেশে আশ্রয় নেওয়া শরনার্থীদের সসম্মানে স্বাধীন দেশে ফেরত পঠানোর জন্য বদ্ধপরিকর । তবে শত্রুর মুখে তো আর বিপন্ন মানুষদের ঠেলে দেওয়া যায় না ।

তিনি বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থন দিয়ে গেরিলা যুদ্ধের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন ।এক পর্যায়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামরত মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় সৈন্য । ফলে যুদ্ধজয় ত্বরান্বিত হয় ৎ, মাত্র ৯ মাসে একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের জন্ম হয় ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক রাজনীতিরক্ষেত্রে অসাধারণ দূরদর্শিতার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন যার ফলশ্রুতিতে সহজেই জন্ম হয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আর একই সাথে পরাজয় হয়েছে একটি শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের ।ইন্দিরা গান্ধীর এ অমরকীর্তি যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধাভরে একই সাথে স্মরণ করবে ভারতবাসী এবং বাঙালি জাতি।

তবে ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে ভারতের বিজেপি সরকারের সাম্প্রতিক মনোভাব ইন্দিরা-ভক্তদের পীড়া দেবে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ৫০ বছর উপলক্ষে তাদের আয়োজিত গত বিজয়োৎসবে কোথাও ইন্দিরা গান্ধীরনাম উচ্চারণ করেনি মোদি সরকার। ইন্দিরাকে উহ্য রেখে ভারতের ১৯৭১ সালের যুদ্ধজয়ের গল্পইতিহাসকেই অগ্রাহ্য করার শামিল।

প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের রাষ্ট্রের জন্মকালীন বন্ধু, চিরদিনের বন্ধু। এবারে শেখ হাসিনা-ঘোষিত “বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বৃত্তি” ‘৭১ এ যুদ্ধে আত্মদানকারী ভারতীয় বীর সেনাসদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এক অনন্য স্মারক হয়ে থাকবে এবং দু’দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এ মহতী উদ্যোগ মুজিব-আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে এক নব অধ্যয়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test