E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফারুক হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধন্যবাদ

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৫:২২:৩৮
ফারুক হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধন্যবাদ

রিয়াজুল রিয়াজ


আসন্ন ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ফরিদপুর থেকে মোঃ ফারুক হোসেনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত ও বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে ৪৩ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন মোঃ ফারুক হোসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর যখন আওয়ামী লীগ করাই এক রকম নিষিদ্ধ ছিলো, ঠিক সেই সময়ের কিশোর মোঃ ফারুক হোসেন বঙ্গবন্ধু'র আদর্শ বুকে ধারন করে জয় বাংলা শ্লোগানের সাথে সম্পৃক্ত হন। তারই ধারাবাহিকতায় আশির দশকের শুরুতে তিনি ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরবর্তীতে উক্ত কলেজ সংসদের ছাত্রলীগ থেকে ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। 

জেনারেল জিয়ার আমলে ছাত্রলীগ করার দায়ে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেনকে ৯ মাস কারাভোগ করতে হয়। মোঃ ফারুক হোসেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন আরেক স্বৈরশাসক এরশাদ। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এরশাদ পতন আন্দোলনে বৃহত্তর ফরিদপুর তথা দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগনেতা মোঃ ফারুক হোসেন। ছাত্রলীগ অধ্যায় শেষ করে তিনি ফরিদপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি স্বৈরশাসক এরশাদের কর্তৃক কারাবন্দী হন এবং এরশাদ সরকার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

তবুও দমে যাননি শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মী মোঃ ফারুক হোসেন। তিনি জেলে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। মাঠে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহানা ফারুক (তার স্ত্রী) সহ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অনেক মিছিল করেছেন ফারুক হোসেনের মুক্তির দাবীতে। কারাগারের অন্ধকার কক্ষে বসে সব সময় ভেবেছেন প্রিয়তমা সহধর্মিণী শাহানা ফারুক, ছোট দুটি ফুটফুটে মেয়ে টসি-বৃষ্টির কথা। হয়তো নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন তবুও স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের কাছে মাথা নত করেন নি। ওই সময়ে অনেক ছাত্রলীগ /যুবলীগ /আওয়ামী লীগ নেতা আপোষ করে, খোলস বদল করে নিজের দল (আওয়ামী লীগ) ছেড়ে ফ্রিডম পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছেন কিন্তু বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা ফারুক হোসেন বঙ্গবন্ধু আদর্শের একচুলও বিচ্যুতি হননি। তার যৌবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু তিনি আওয়ামী লীগের জন্য বিসর্জন দিয়েছেন। দলের জন্য নিজের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছেন নিজ পরিবার তথা ভাই-বোন, মা-বাবা এবং ভালোবাসার প্রিয়তমা সহধর্মিণী ও কলিজার টুকরা সন্তানদের।

ফরিদপুর রাজনীতিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের পাঠ চুকিয়ে ত্যাগী কর্মী ফারুক হোসেন দায়িত্ব পালন করেছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে। এছাড়াও তিনি একাধিকবার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হিসেবে সক্রিয় থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগে ৫ম জাতীয় কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নানক-আজম কমিটি) করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মোঃ ফারুক হোসেনকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম কমিটিকে যুবলীগের সবচেয়ে শক্তিশালী কমিটি হিসেবে অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকেন। আর ওই সময়টা যুবলীগের আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন মোঃ ফারুক হোসেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের অন্যতম পরিশ্রমী নেতা মোঃ ফারুক হোসেন ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৬ষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। আলোচনার মির্জা আজম-ফারুক হোসেন থাকলেও তারা কেউ পাননি। যাহোক, ৬ষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে তাকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক থাকা কালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগের খণ্ডকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার থাকাকালীন খণ্ডকালীন কেন্দ্রীয় যুনলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। আন্দোলন সংগ্রামে অকুতোভয় নেতা মোঃ ফারুক হোসেন ২০০৩-২০১৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ৬ষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস ও ৭ম জাতীয় কংগ্রেসেও তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমী ও সফল সংগঠকের পরিচয় বহন করেছেন। যারা ওই সময় টাতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাথে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি কারো তা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নাই।

যাহোক, ফরিদপুরের নতুন প্রজম্ম ত্যাগী, আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত পরিশ্রমী ও পরিক্ষিত নেতা মোঃ ফারুক হোসেনকে কতটুকু জানেন আমি জানি না, তবে কেউ তার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে ধারণা রাখলে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোন অসুভ শক্তিকে মোঃ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রহন করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।

যাহোক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৭ম কংগ্রেসের আগে যুবলীগের সাথে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মোঃ ফারুক হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ নষ্ট হয়ে গেছে তোকে আমি ফরিদপুর পাঠাবো। শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত, বাধ্যগত ত্যাগী কর্মী ফারুক হোসেন সেদিন একটি কথাই বলেছিলেন, নেত্রী আপনি যা বলবেন তাই হবে। অথচ তার আগের দিন পর্যন্ত তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে হয়তো নেত্রী তাকে বিবেচনা করবেন।।

নেত্রী কথা মেনে ফরিদপুরের মাটি মানুষের নেতা মোঃ ফারুক হোসেন ফরিদপুর চলে আসেন। রাজধানী থেকে ফরিদপুরের মাটিতে ফেরার তিন বছর পর জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলেন।

দীর্ঘ ৪৩ বছর মাঠে থেকে জেল জুলুম, শত দুঃখ কষ্ট সহ্য করে আওয়ামী লীগ করে যাওয়া একজন কর্মীকে যখন দলীয়ভাবে মুল্যায়ন করে, তখন আওয়ামী লীগ করা সব নেতাকর্মীরই তাঁর পক্ষে কাজ করা উচিত। মোঃ ফারুক হোসেনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি এখন পর্যন্ত একদিনের জন্য নিজ দল আওয়ামী লীগের বাইরে ও নিস্ক্রিয় থাকেন নাই এবং পদ ছাড়া থাকেন নাই। বরং আজ অবদি তিনি দল দেশ ও জনগণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

যারা ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী মোঃ ফারুক হোসেনের বিকল্প খুঁজছেন, তারা মূলতঃ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অপমান করছেন শুধু তা নয়, সাথে অপমান করছেন সারা জীবন আওয়ামী লীগ করে যাওয়া একজন ত্যাগী পরিক্ষিত কর্মীকে। এমনকি নিজের অজান্তে নিজেকেও অসম্মানিত করছেন, তা বুঝার মত অবস্থা বা ক্ষমতা আছে কিনা জানি না! আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতাকারীদের আর কোন ছাড় বঙ্গবন্ধু কন্যা দিবেন বলেও মনে করার কোন কারণ নেই।

পরিশেষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা এজন্য যে, একজন যোগ্য নেতাকে ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। এবং সেই সাথে তাঁর একজন ত্যাগী বিশ্বস্ত ও পরিক্ষিত কর্মীর যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। লোভী, রাজনৈতিক ব্যবসায়ী বা ভোগীরা নয়, মোঃ ফারুক হোসেনের মতো ত্যাগীরাই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের মূল প্রাণশক্তি ও আসল সৌন্দর্য।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, ছড়াকার ও রাজনৈতিক কর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test