E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মহড়া কক্ষে ‘রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা’

২০২২ অক্টোবর ২৪ ১৮:২৬:১০
মহড়া কক্ষে ‘রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা’

পীযূষ সিকদার


মাসুদ বাবু ভাইকে দীর্ঘদিন ধরে জানি চিনি। বাংলাদেশের নন্দিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ছোট ভাই। তার সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয় আমার। তারপরও দীর্ঘ সময় তার সাথে যোগাযোগ নেই। ফেসবুকের মাধ্যমে আবার নতুন করে নতুন রুপে জানা হলো। ঢাকা নেই। ঢাকা ছেড়ে দিয়েছে। এখন ভাঙ্গাতেই নাটক নিয়ে কাজ করছেন। শুনে ভালো লাগলো। আমিও ঢাকা ছেড়ে চলে এসেছি। পড়াশোনা লেখালেখি নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকি। বাবু ভাই বললেন বাইশ তারিখ সকাল ১১টায় চলে আসেন নাটক দেখতে ভাঙ্গা স্টেডিয়ামে। আমি একবাক্যে রাজী হই। বাবু ভাই খুশী হলেন। এতো অল্পতে যে খুশী হয় সেতো সহজ মানুষ। এখন বাইশ তারিখের অপেক্ষায়। একা যাবো? আরো একজন সহজ মানুষ আমার সঙ্গী হলো। সে আমার বন্ধু ওমর ফারুক ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্স। ওর সুন্দর বাইকে চড়ে সোজা ভাঙ্গা। পথে পথে চা বিরতি ও এলাকার খোঁজ খবর নেয়া। যথাসময়ে আমরা ভাঙ্গা স্টেডিয়ামে পৌঁছে যাই। গোবিন্দ বাগচী চেচিয়ে উঠে পীযূষ পীযূষ। আমি বলি বন্ধু। গোবিন্দ বাগচী সুন্দর মনের অধিকারী। সেও কম যায় না। বিনয়ী এবং সহজ মানুষ। এই সহজ মানুষ গোবিন্দ বাগচীর গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় নাটকটি দেখে নিলাম। নাটকটির নাম ‘রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা’। অনেকদিন পর সুন্দর একটি নাটক দেখলাম। ৫৭, ৪৭, ৫২, ৬৮,৬৯, ৭১ ও ৭৫ যে চরিত্র হতে পারে আমার কাছে অবাক লেগেছে। মনে হলো বাংলা নাটকে নতুন সংযোজন। কবর থেকে বেড়িয়ে এসে চরিত্রগুলো কথা বলছে।

দেশের কথা, মানুষের কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কথা। নাটকের প্রতিটি দৃশ্য কালো কাপড় দিয়ে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। ভাঙ্গা সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীরা অপূর্ব দেহভঙ্গিমা,বাচিক অভিনয়ে অভিনয়ে দারুন দৃশ্যপট রচনা করেছে। এত অল্প বয়সে এতো সুন্দর উপস্থাপনা আমাদের নতুন করে উদ্দীপ্ত করে। নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। নাট্যজন গোবিন্দ বাগচী মৃন্ময় পারে তা আমাদের পরতে পরতে বুঝিয়ে দিয়েছে। কালো কাপড়, মানচিত্র, বডি ল্যাংগুয়েজ সব মিলে এক অসাধারণ নাট্য মুহুর্ত তৈরি হয়েছে। ছোট বাচ্চাদের অভিনয় জেসচার মন কাড়ার মতো। রক্তরঞ্জিত স্বাধীনতা নাটকে বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডটির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ মূর্ত হয়ে উঠে। নাটকটির কাহিনী ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তৈরি। শিক্ষণীয় ও শিশুতোষ। নাটকটি সব সময়ই সত্যের কথা বলেছে। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত করতে এ প্রযোজনা মূল স্রোত হিসেবে কাজ করেছে। আর স্রোতের সাথে মিলেছে ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ থেকে ১৯০৮ সালের দেশাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম ৫২, ৬৯, ৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭৫-এর বঙ্গবন্ধু হত্যা ও চার নেতার হত্যা নাটকটিতে গ্রন্থিত করা হয়েছে।

‘রক্তরঞ্জিত স্বাধীনতা’-নাটকে কথক ব্যাখ্যা করছে নাটকের কখনো অভিনয়ে অভিনয়ে মাতিয়ে তুলছেন আমাদেরকে। কখনো সঙ্গীত আমাদের সাথী করে নিয়ে যাচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধে। গা শিউরে উঠা এক প্রযোজনার নাম- ‘রক্তেরঞ্জিত স্বাধীনতা’। গোবিন্দ বাগচী তার সুনিপুণ হাতে নাটকটির মালা গেঁথেছে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যে বর্ণনা গোবিন্দ বাগচী দিয়ে গেছে তা মনহরণ মনকাড়া একটি প্রযোজনার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোবিন্দ বাগচীকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। আবার নতুন করে চিনে নিলাম। নতুন আঙিনায়। গোবিন্দ বাগচীর জয় হোক। নাটক নিয়ে মেতে থাকুক উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম। এ নাটকে যারা দৃশ্যসৃজন করেছে তারা হলো-অনন্যা, নুসরাত, সাইমা, সাদিয়া, বর্ষা, শান্তা, তানহা, সুনীতি, অবন্তী, মাহমুদা, সেঁজুতি। তাদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটুক।

মহড়া কক্ষের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি: জনাব আজিমউদ্দীন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভাঙ্গা, ফরিদপুর। বিশেষ অতিথি: জনাব জিয়ারুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন)। জনাব মোঃ আলাউদ্দীন, কালচারাল অফিসার ( অবঃ ) ফরিদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ফরিদপুর। জনাব মোসায়েদ হোসেন ঢালী, অধ্যক্ষ ( সাবেক ) কে এম কলেজ, ভাঙ্গা, ফরিদপুর। প্রফেসর আলতাফ হোসেন। বংশীবাদক সনেট। পীযূষ দ্রাবিড়, নাট্যকার, নির্দেশক, সাংবাদিক। ওমর ফারুক, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্স। মাহমুদা হোসেন। কামাল আহম্মেদ। সুভাষ মন্ডল, সমাজ,সংস্কৃতি ও সংগঠক। আবহ সংগীতে জাহিদ মিয়া। প্রযোজনা ভাবনা ও পরিকল্পনা: হাবিবুর রহমান মাসুদ বাবু। অধিকর্তা: তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রযোজনা উপদেষ্ঠা : মোহাম্মদ হায়দার হোসেন, প্রধান শিক্ষক, ভাঙ্গা সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়। কামরুজ্জামান কাফী, তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র; সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদ।

এখন তো আমরা নাটককে ভুলতেই বসেছি। সেইসময় মাসুদ বাবুর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। ভাঙ্গা থেকে শুরু হতে পারে নতুন কালের এক সাংস্কৃতিক বলয়। আমার বন্ধু ওমর ফারুক নাটক দেখছে। অসাধারণ মুগ্ধতায় তাকে পেয়ে বসে। ভালো লাগলো এই ভেবে যে ওর মূল্যবান সময় আমি নষ্ট করিনি। মহড়ায় মহড়ায় মহড়া কক্ষে আমরা নাটকটি দেখে নিলাম সুর, ভাব ও বাচিকের এক বর্নাঢ্য র‌্যালী। মুগ্ধতা নাটকের অঙ্গে অঙ্গে। চোখে আসে জল।
আরেকটি নাটকের মহড়া চলছে। নাটকটির নাম-ওরা অকারণে। এ নাটকেরও গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছে গোবিন্দ বাগচী মৃন্ময়। অসাধারণ প্রযোজনা দেখে নিজেকে স্নাত করি পূণ্যতায়-পূর্ণতায়। জয় হোক গোবিন্দ বাগচীর। জয় হোক মাসুদ বাবুর। জয় হোক নাটকের। পূণ্য হোক সবার এ নাটক দর্শনে। নাটকটি পরিবেশন করেছে-ভাঙ্গা সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়। প্রযোজনা ও ব্যবস্থাপনা তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভাঙ্গা, ফরিদপুর। পরিকল্পনা হাবিবুর রহমান মাসুদ বাবু। প্রযোজনা সহযোগি সৈয়দা রুনা মাসুদ। নাটক প্রাণ পায় দর্শকে দর্শকে। সেই দর্শকের পূণ্য হোক। মহড়ায় মহড়ায় ‘রক্তেরঞ্জিত স্বাধীনতা’ নাটক প্রতি সন্ধায় ফুল হয়ে ফুঁটুক।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test