E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মিয়ানমারে নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৫:৪১:০২
মিয়ানমারে নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার


নতুন করে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার দেশটির সেনাবাহিনী-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া। এদিন দেশটির গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা "নীরব ধর্মঘট" পালন করছেন। বিক্ষোভকারীরা জনসাধারণকে বুধবার বাড়ির ভেতরে থেকে এবং ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।  মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।‌‌বাংলাদেশ সরকারকে নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। প্রধানত আগামী নির্বাচন ও মানবাধিকার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।  

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর হাতে অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ অংশে গৃহযুদ্ধ চলছে। সেনা শাসনের কারণে ১৫ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৮০ লক্ষ শিশু আর স্কুলে যেতে পারছে না।জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় দেড় কোটি লোক চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে এসে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

রাজনৈতিক বন্দীদের পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফল পলিটিক্যাল প্রিজনার্স, বলছে, ভিন্নমত দমনে সামরিক জান্তার অভিযানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছে। অভ্যুত্থানের পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে এক বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনও বিরোধীদের সাথে কোনরকম আলোচনা রাজি নয়। সেনা শাসকেরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে অং সান সুচি কিংবা তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে হটিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।

পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো একযোগে বুধবারের বার্ষিকীকে সেনা শাসক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন দফা নিষেধাজ্ঞার দিন হিসেবে ব্যবহার করেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহ করে এমন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ব্রিটেন।

অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তার প্রথম নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ১৬ ব্যক্তিকে "মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী" করা। সেই সাথে তারা সামরিক সরকার-নিয়ন্ত্রিত দুটি প্রধান ব্যবসায়িক সংস্থা, যা সে দেশের অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তার বিরুদ্ধেও তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলির লক্ষ্য সেনা-অনুমোদিত নির্বাচন কমিশন। লাখ লাখ রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকার হয়েছে জান্তা বাহিনীর হাতে। অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরত নেয়ার কোন অগ্রগতি নেই।

এদিকে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং সংস্থাটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নানা তদবির চালাচ্ছে সরকার। এদিকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের তৎপরতা চলছে। ২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগের দুটি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ‌‌‌আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন নতুন করে কোন ইস্যু না পায় সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। এ সতর্কতা দেশ ও জাতির স্বার্থে।

লেখক : অনারেবল সোসাইটি অব লিঙ্কন ইনস ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য।

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test