E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাঘববোয়ালদের লুকিয়ে রাখা কার স্বার্থে?

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৪:৫৯:৫০
রাঘববোয়ালদের লুকিয়ে রাখা কার স্বার্থে?

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“তালিকার মধ্যে ঢাকার কয়েকশ রাঘববোয়াল ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের একটিকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি, যাদের প্রতিটির খেলাপি ঋণের পরিমান প্রকাশিত এই ২০ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি।”

২ ফেব্রুয়ারী সমকালে প্রকাশিত “কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা রাঘববোয়াল” শিরোনামে প্রকাশিত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের লেখা থেকে আলোচ্য অংশটুকু নেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি জাতীয় সংসদে যে শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন, সে বিষয়ে তিনি বিশ্লেষণমূলক মতামত রাখতে গিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি ব্যাংকিং বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে তাঁর ব্যাপক গবেষণা রয়েছে যা থেকে মানুষ ব্যাংকের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রাখা অনেক অজানা তথ্য সম্যক জানতে পারছে। ড. মইনুল ইসলাম ইতিপূর্বে তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন অবলোপনকৃত ঋণ ব্যাংকগুলো খেলাপি হিসেবে দেখায় না যা প্রতারণার শামিল।

যে ঋণ বিগত পাঁচ বছর বা আরও বেশি সময় যাবৎ খেলাপি হিসেবে দেখানো হয়ে আসছে কিন্ত যখন তা অবলোপন করা হলো তখন আর খেলাপি হিসেবে দেখানো হলো না, এভাবে খেলাপি ঋণ ধামা চাপা দেওয়ার অর্থ কি ?

তাতে একটি আপাত লাভ আছে বটে এবং তা হলো ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য সাময়িক ভালো দেখানো যায়। এমনিতেই দুর্বল ব্যাংকগুলো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ত্রাহি অবস্থা, সেখানে এভাবে লুকোচুরি করার ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়।

ব্যাংক খাতে একদিকে চলছে তথ্য গোপন করার প্রবণতা এবং অন্যদিকে চলছে বাঘববোয়ালদের তোষণ, সহযোগিতা।

ব্যাংক খাতে অনেক অব্যবসায়ী ঋণ খেলাপির দৌরাত্ম্যে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। নামে বেনামে ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া বিপুল অর্থ এখন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের পকেটে।

বলতে গেলে, ক্ষমতার বলয়ে আশ্রয় গ্রহণকারী বড় বড় ঋণ খেলাপিরাই ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে, ব্যাংকের টাকায় বিলাসী জীবন যাপন করছে, বিদেশে অর্থ পাচার করছে।

আইন অনুযায়ী কোনো ঋণ খেলাপি ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না, অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে— ব্যাংক পরিচালকরাই চার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি। (সমকাল০৫/০৩/১৮ ইং)

এ সকল ঋণ খেলাপি ব্যাংক পরিচালকদের কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আর প্রকাশ্যে আসেনি। তবে ধারনা করার যৌক্তিকতা রয়েছে যে, তাদের এ সকল ঋণ ইতোমধ্যে কার্পেটের নিচে চলে গেছে। আর বেনামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে, পুনঃতফশিল করে বা ঋণ পুনর্গঠন করে নানান কায়দা তো আছেই তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য।

ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা আর কতকাল ব্যাংক খাতকে টাকা বানানোর উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন ? ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিতে পারলে আর ফেরত দিতে হয় না, আদায় করে নেওয়ার ক্ষমতাও ব্যাংকগুলোর নেই।

আমানতকারীদের জমাকৃত টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অপাত্রে চলে যাচ্ছে, যার একাংশ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে অর্থ লুটপাট বাধাহীনভাবে অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোর কী পরিণতি হবে? আর্থিক খাতের এমন দুর্বলতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।

ঋণ খেলাপিদের প্রতি কঠোর বার্তা না দিয়ে তাদের বাড়তি সুযোগ দেওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ না করেআরও সুবিধা নেওয়ার জন্য বেশি তৎপর থাকেন তারা এবং অপেক্ষায় থাকেন অবশেষে সুদ মওকুফের আশায়।

রাঘববোয়াল ঋণ খেলাপিদের এখনই প্রতিরোধ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে, ব্যাংক ও আর্থিক খাত সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না।

লেখক : আবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test