E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে হবে

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৬:৪৯:৪৮
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে হবে

রফিকুল ইসলাম


বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকটের কথা সবারই জানা। জানা উন্নত সব দেশেরও। কিন্তু এর সমাধানে কারও আগ্রহ তেমন লক্ষ্যণীয় নয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বাড়াতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সম্মেলনে বলেন, একদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা কমছে, অন্যদিকে তাদের প্রত্যাবাসনে ধীরগতিতে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি।

এইখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমাচ্ছে দাতারা। বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য ৭২ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে নেমে এসেছে। দাতারা সাহায্য কমালে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ বা আনুষাঙ্গিক সেবা দেওয়ার বিষয়ে কোনো ত্রুটি কিন্তু পরিলক্ষিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সংকট মাথায় নিয়ে রোহিঙ্গাদের এমন সংকট সমাধানে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি প্রথম থেকেই তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ এই বিষয়ে গুরুত্ব দিলে উন্নত দেশগুলো যেন বিষয়টি যেন এড়িয়ে যাচ্ছে।

যেখানে করোনা মহামারির পর সারা পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সেই অর্থনৈতিক সংকটকে আরও প্রবলতর করেছে সেই জায়গায় বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গাদের হাত ছাড়েনি। তাদের পাশেই থেকেছে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।

সারা বিশ্বের রিফিউজিদের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা কনসার্ন-এর ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারির এক প্রতিবেদন এই তথ্য দিচ্ছে। তারাও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও এখন এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটও প্রবলতর হয়েছে। সংকটটা আসলে কোথায়? সংকট হলো, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংখ্যা এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশ এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। সেই জায়গায় নতুন ১২ লাখ লোকের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা সত্যিই কষ্টসাধ্য।

এরমধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড় কেটে বন ধ্বংস করে একের পর এক রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তোলা হচ্ছে। যে এলাকায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলো গড়ে উঠেছে, সেখানে ছিল বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বসতি। গোটা এলাকা ছিল জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এখন সেখানে রোহিঙ্গাবসতি গড়ে উঠেছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা আলোচনায় বারবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার কথা সেই বিষয়ে অগ্রগতি কম। বরং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো নিশ্চুপই থেকে, অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আরও ১১৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যেন বাংলাদেশে কাজে যোগ দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রশ্ন হলো, রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশের সাথে মিশে যায় তখন কি তাদের আর দেশে ফেরানো যাবে? তাই হয়তো বিশ্বের মোড়ল দেশগুলো চাইছে যেন সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে তাদের আরও বেশি সময় ধরে দেশে রাখা যায়।

এদিকে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে, নেপিডোতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে জানা যায়, প্রথম ব্যাচে দেশটি ভেরিফায়েড তিন হাজার রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়।তবে এর মধ্যে প্রশ্ন থেকে যায়, কবে থাকে শুরু হচ্ছে? সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মেলেনি।

আর ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ চলছে আগে থেকেই। একের পর এক হত্যাকাণ্ডে আশ্রয় শিবিরগুলো হয়ে উঠেছে আতঙ্কের জনপদ। সন্ত্রাসের পাশাপাশি এই অঞ্চল ঘিরে জঙ্গিবাদ উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। এই জঙ্গিবাদ যখন আরও বড় আকার ধারণ করবে তা কি বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যসব দেশের জন্য হুমকি হয়ে ধরা দেবে না? সেই হুমকির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের সব নাগরিক বুঝলে মোড়লদেশগুলো কেন বুঝতে পারছে না সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। মোড়লদেশগুল যখন সবার মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে তখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদের এগিয়ে না আসা বা বাংলাদেশের মাটিতে এভাবে পড়ে থাকার মধ্যে যে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেই বিষয়টি কখন তাদের নজরে আসবে? নাকি এইখানেও মানবাধিকার একপাক্ষিক বা পক্ষপাতদুষ্ট?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা। সেই বৈঠকের পর আশা করছি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত বা তাদের মানবাধিকারের বিষয়ে জোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমরাও।

লেখক : সংবাদকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১০ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test