E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘ভোটের মাঠেই কথা হোক’

২০২৪ জানুয়ারি ১০ ১৬:২১:১৬
‘ভোটের মাঠেই কথা হোক’

শিতাংশু গুহ


এবারকার সংসদ রাজাকার মুক্ত। আসলে কি তাই? একাত্তর সালের ‘রাজাকার’-এর সংজ্ঞামতে হয়তো এটি ঠিক, কিন্তু ২০২৪ সালের সংজ্ঞাটি আর একটু বিস্তৃত, ঐ নুতন সংজ্ঞায় এটি যথার্থ নয়? এরচেয়ে বরং বলা যায়, মন্দের ভাল এ সংসদ অনেকটা পরিচ্ছন্ন। ছায়া এবং কায়া, অর্থাৎ নৌকা ও আওয়ামী লীগ। এতে খুশি হবার খুব একটা তেমন কারণ নেই, এ সরকার হবে গত ১৫ বছরের ধারাবাহিকতা। যদিনা তেমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়?

গত অর্ধ-শতাব্দীর ধারাবাহিকতা অনুযায়ী হিন্দু বা সংখ্যালঘু নির্যাতন চলুক, তা কাম্য নয়, কিন্তু নির্যাতন বন্ধ হবে কিভাবে? ২০২৪’র নির্বাচনে হিন্দু নির্যাতনকারীরা সবাই বিপুলভাবে জিতেছেন। কুমিল্লার নৌকার প্রার্থী এমপি বাহাউদ্দিন বাহার জিতেছেন। তার বিরুদ্ধে ২০২১-এ নানুয়াদিঘীর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩-এ তিনি ছাত্র-যুবলীগকে ব্যবহার করে ঐক্য পরিষদের মিছিলে আক্রমন করেছেন। ঐক্য পরিষদ সরাসরি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টীর এমপি সেলিম ওসমান অনায়াসে জিতেছেন। তার হাত শিক্ষক শ্যামল ভক্তের নির্যাতনের দায়ে কলঙ্কযুক্ত। ক’দিন আগে মুন্সিগঞ্জে এমপি মৃনাল-কে যেই গোষ্ঠী ‘মালাউন’ বলে গালি দিয়েছেন, এবার তাঁরা জিতেছে। এই নির্বাচনে হিন্দু-বিরোধী একটি সূক্ষ্ণ প্রচারণা ছিলো, যার জন্যে নৌকা নিয়েও বেশ ক’জন হেরেছেন। বলা হচ্ছে, তাঁরা ‘গুডবুক’-এ ছিলেন না, তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন, বা তাঁদের হারানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ এবার সংখ্যালঘু থেকে কম মনোনয়ন দিয়েছে, এটি ভবিষ্যতে আরো কমবে, যদিনা হিন্দুরা সমষ্টিগতভাবে তাঁদের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। সামনে বাংলাদেশে ভোটের কদর বাড়বে, অর্থাৎ মানুষ ভোট দিতে পারবে। হিন্দুর এখনো কমবেশি ১০%ভোট আছে, বহু আসনে এই ভোট যেকোন প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে সক্ষম। তবে তোষামোদ করে নয়, রাজনৈতিক দর কষাকষি এবং আন্দোলনের মাধ্যমে।

এজন্যে যোগ্য নেতৃত্ব চাই। এবার নৌকা বা আওয়ামী লীগের বাইরেও বেশ কিছু হিন্দু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসাবে, বা অন্যদের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এটি শুভ লক্ষণ, অন্তত: নির্বাচন করার সাহস দেখিয়েছেন। তবে কেউই তেমন ‘ফুটিং’ রাখতে সক্ষম হ’ননি। নির্বাচন করতে জনসমর্থন দরকার, টাকার প্রয়োজন। যারা তরুণ, তারা আগামী নির্বাচনের জন্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। নেতার পিছনে না ঘুরে নিজে নেতা হবার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

বরগুনার ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভূ হেরেছেন, শুনেছি গত কোরবানীতে তিনি কর্মীদের মাঝে গরুর মাংস ভাগাভাগিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুন্সিগঞ্জে মৃনাল হেরেছেন–শোনাকথা, তিনি টুপিমাথায় কোরানের আয়াত ব্যাখ্যা করে ভাষণ দিয়েছেন। এটি তোষামোদ, এতে ভোট আসেনা। মানুষ বোঝে। মনোরঞ্জন শীল গোপাল হেরেছেন, স্রেফ হিন্দুরা তাঁকে ভোট দেয়নি, বরং হিন্দুদের যথেষ্ট অভিযোগ আছে। স্বপন ভট্টাচার্যের জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য।

নৌকা নিয়ে হিন্দু যাঁরা জিতেছেন তাদের নিয়ে হিন্দুদের উচ্ছাস নেই, কারণ তাঁরা হিন্দুদের জন্যে কিচ্ছু করেননি। যাঁরা হেরেছেন তাঁদের জন্যেও কোন দুঃখবোধ নেই, কারণ তাঁরাও হিন্দুর জন্যে একটি কথাও বলেননি। বরং জয়া সেনগুপ্তের জন্যে হিন্দুদের উচ্ছাস ছিলো। পঙ্কজ দেবনাথ জেতায় হিন্দুরা খুশি। হিন্দুরা আশা করে আগামী সংসদে এঁরা কথা বলবেন। পঙ্কজ দেবনাথ বেশি দ্রুত উঠতে চাইলে তিনি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মত ‘কালো বিড়াল’ হয়ে যেতে পারেন!

নুতন স্মার্ট সরকার ক্ষমতাসীন হচ্ছে। যত স্মার্টই হোক, এটি ধারাবাহিক সরকার। গত পনের বছরে হিন্দু’র কোন অর্জন নেই? তোষামোদ করে অর্জন হয়না। এই সরকার পুরোপুরি ভারতের সমর্থনে বলীয়ান। হিন্দু’র নুতন কৌশল নিতে হবে। হিন্দুদের এক্ষুনি একটি রাজনৈতিক দল গঠন দরকার। ভোটের মাঠেই কথা হোক। বাংলাদেশের হিন্দু’র হারাবার কিছু নেই, তবে সারা বিশ্বের হিন্দুরা পেছনে আছে। শক্ত পায়ে উঠে দাঁড়ালে ভারতও সমর্থন দিতে বাধ্য হবে। ৯ই জানুয়ারি ২০২৪।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test