গণপরিবহনে নারীর ভোগান্তি ও প্রতিকার
মোহাম্মদ ইলিয়াছ
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীর আর্থসামাজিক অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো। শিক্ষিত নারীর হার যেমন বাড়ছে, তেমনি দেশের নারী কর্মজীবীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মজীবী নারীর পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও নারীরা এখন ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও প্রতিনিয়ত ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি পরিবহন সুবিধা। বাড়েনি নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যাও, একটি বাসে নারীদের সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা থাকে ১২টি। বাকি সব আসন থাকে পুরুষদের জন্য। অনেকে ক্ষেত্রে নারীদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়। আবার অনেক সময় বসার আসন না থাকলে বা রাত একটু বেশি হলে গণপরিবহনে নারীদের তোলা হয় না। আর বাসে নারীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যে কারণে বাইরে কাজ করা থেকে অনেক নারী আগ্রহ হারাচ্ছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই অল্পসংখ্যক আসনও অনেকাংশে দখল করে নেন পুরুষরা। এছাড়া নারীদের আসনে বিভিন্ন মালামাল ও বস্তা উঠানোর ফলে সংরক্ষিত মহিলা আসনের উপযোগিতা নষ্ট হয়। এমনকি এ ঘটনা এখন প্রতিটি বাসে খুবই স্বাভাবিক যে, নারীদের সিটে পুরুষ বসে আছেন আর নারীরা সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এক্ষেত্রে বাসচালক বা হেলপারের ভূমিকা থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীবিরোধী। অনেকবার সিট ছাড়ার কথা বলা হলেও তারা ভ্রুক্ষেপ তো করেই না, উল্টো ‘এত সমস্যা হলে রিকশাতে যান’ বলে হুমকিও শুনতে হয়। কার্যকারণস্বরূপ, অধিকাংশ নারী তাই চুপ থাকাটাকেই পছন্দ করেন। দিন দিন কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাটি আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। ৪১-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারাই যৌন হয়রানির শিকার হন বেশির ভাগ নারী, যার হার ৬৬ শতাংশ। নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাব ইত্যাদি।
এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ নারী বলেছে, তারা চুপ থাকে এবং ৭৯ শতাংশ বলেছে আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যায়। বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে ৪২ শতাংশ ও পরিবহনসংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী।
আবার আরেক বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের এক জরিপ বলছে, তাদের জরিপে অংশ নেয়া নারীদের ৮৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা জনসমাগমস্থলে অশালীন মন্তব্য শুনেছে এবং পুরুষরা যৌন হয়রানি করার সুযোগ খুঁজেছিল। অর্ধেকের বেশি নারী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
আবার কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার সবচেয়ে বেশি, ৮৭ শতাংশ।
আর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোয় ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই গণপরিবহন ব্যবহার করেন। ওই জরিপে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শতকরা ৯৪ শতাংশ নারী যাত্রী গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন।
সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড এক গবেষণা রিপোর্টে জানা যায়, গণপরিবহনে শতকরা ৪১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার। যৌন হয়রানি মুক্তি পেতে শতকরা ৩১ ভাগ নারী গণপরিবহনে যাতায়াত করে না, যা নারীদের কর্ম, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাসে নয়টি আসন সংরক্ষিত রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে সেই আসনগুলো থাকে চালকের আসনের কাছাকাছি। অনেক বাসে ইঞ্জিনের ওপর নারীদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়। সেই বরাদ্দকৃত আসনগুলোও অনেক সময় পুরুষদের দখলে থাকে। তাছাড়া ইঞ্জিনের গরমে পা রাখা বা বসে থাকা কষ্টকর ব্যাপার।
নারী আসন নিশ্চিতকরণে স্টপেজগুলোয় সার্জেন্টদের তদারকির প্রয়োজন এবং নিয়ম লঙ্ঘনে জরিমানার ব্যবস্থা চালক ও ভাড়া আদায়কারীকে বাধ্য করবে মহিলা আসন সংরক্ষণ করতে। সিটিং সার্ভিস চালু করাটাও আবশ্যক। এতে করে ভিড়ের জন্য বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না নারীদের। যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে পুরুষদের আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। নারী হয়রানির ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ করার মানসিকতা তৈরি করা জরুরি। প্রতিটি বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার দ্বারা অপরাধী চিহ্নিতকরণ করার পাশাপাশি অপরাধের পরিমাণ কমিয়ে আনাও সম্ভব। সর্বোপরি একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন গণপরিবহনকে নারীবান্ধব করে গড়ে তুলতে।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে নারীদের যাতায়াত সমস্যা দূর করতে আলাদা বাসের ব্যবস্থা করা। বাসে সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর জন্য নাগরিকদের সচেতনতা প্রয়োজন। এছাড়া নারীদেরও নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে। কর্মস্থলে ও নানা কাজের ও বিষয়ের প্রয়োজনীতায় এখন নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে অতীতের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি সমান তালে তার নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা বা বাহন বাড়েনি। দেশ রাষ্ট্রসমাজের সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিরাপদ বিড়ম্বনাহীন যাতায়াত ব্যবস্থা বা বাহন নিশ্চিত না হলে নারী উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি সমর্থবানদের এগিয়ে আসতে হবে এ সমস্যা নিরসনে। আর নারীদের হতে হবে অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক।
লেখক : উপপরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
পাঠকের মতামত:
- বিদেশি উৎসবে মেহজাবীনের প্রথম সিনেমা
- ‘ব্যর্থতা আড়াল করতে মানুষকে গ্রেপ্তার করছে সরকার’
- ছাত্রনেতাদের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের আলোচনার আহ্বান
- কোটা আন্দোলনে আহতদের আয়-রুজির ব্যবস্থার আশ্বাস
- ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেফতার ২৩৫৭
- সাংবাদিকদের উপর ও বিটিভি ভবনে হামলার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় প্রতিবাদ সমাবেশ
- নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রত্যয় হয় জয়, না হয় মৃত্যু!
- মাদারীপুরে সহিংসতায় দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত
- স্কুলের জমিতে দোকান, কোমলমতি শিশুদের পাঠদান ব্যাহত
- রাজবাড়ীতে ইউপি সদস্যসহ ২ সহোদর কারাগারে
- ‘শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে’
- ‘যারা সহিংসতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’
- সেমিফাইনালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
- প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা
- ট্রাম্প কী পুনরায় হোয়াইট হাউসে ফিরছেন
- বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র, মুম্বাইয়ে রেড অ্যালার্ট
- যা থাকছে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
- আপাতত বন্ধই থাকছে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ
- ইথিওপিয়ায় ভূমিধসে ২২৯ জনের মৃত্যু
- বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে নাক না গলাতে মমতাকে নয়াদিল্লির বার্তা
- গৌরনদীতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ
- গ্রেপ্তারদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিতের আহ্বান কানাডার
- বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬ বিলিয়ন ডলার
- আশাশুনির বাহাদুরপুরে বাসন্তী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর
- সাতক্ষীরায় নাশকতার মামলায় জামায়াত বিএনপির ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
- ভাঙ্গায় মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর বেঁচে থাকার আর্তনাদ
- দুর্নীতিবাজ সিনহার বই অন্তর্জ্বালা থেকে : আইনমন্ত্রী
- সংলাপে রাজি নন আন্দোলনকারীরা
- আর্জেন্টিনার জয়ে খুশি মেহজাবীন
- ‘নতুন কারিকুলামের শিক্ষা সার্কভুক্ত দেশগুলোও ফলো করছে’
- ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য অনুদান দিলেন ইলন মাস্ক
- কালিগঞ্জ সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে যাচ্ছে বেনজীরের রূপগঞ্জের ডুপ্লেক্স বাড়ি
- কোটা বাতিলের দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ
- নাটোরের বড়াইগ্রামে ৩ দিনব্যাপী কৃষি মেলার সমাপনী
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- তিতলি-মাইকেল-লুবান : একসঙ্গে তিন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পৃথিবী
- রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থী-পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত ২
- কোটা সংস্কার ইস্যুতে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
- মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৩০, আটক ৮
- ‘পরিস্থিতি বুঝে মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে’
- নেপালে বন্যা-ভূমিধসে নিহত অন্তত ১১
- মিছিলে মিছিলে মুখরিত কোটালীপাড়া
- বোয়ালমারীতে আচরণ বিধি লঙ্ঘনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে জরিমানা