তবে কি বিএনপি ভুল স্বীকার করবে?
বিপ্লব কুমার পাল প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলাসহ নাশকতার ১০ মামলায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গুলশানের ফিরোজায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফখরুল। এছাড়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তারের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব। এর বাইরে গত ২ মার্চ গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন তিনি। যদিও তিনটি বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাদা করে কোনো কথা বলেননি তিনি।
এর বাইরে গেল ২০ দিনে বিএনপির মাঠের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে ক্লিন ইমেজের তকমা পাওয়া মির্জা ফখরুল কেন মাঠের রাজনীতিতে নেই। বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন না কেন? তবে কি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি কি তারেকের পর্যুদস্ত কৌশল মেনে নিতে পারছেন না? নাকি সরকারের সমালোচনার আগে দলকে গোছানোর কথা বলছেন? এমন নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিএনপির রাজনীতি ঘিরে। দলের কেউ কেউ মনে করছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির কৌশল একেবারে সঠিক ছিলনা।
তর্কের খাতিরে ধরেই নেয়া যাক- আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন ব্যাপক কারচুপি হবে, ক্ষমতাসীন দলকে সহযোগিতা করবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, মাঠে নামতে পারবে না বিএনপির প্রার্থীরা ইত্যাদি। কিন্তু বিএনপি তো মনে করে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে, বিপরীতে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে। জনগণের স্রোত কোনো অনিয়ম, কারচুপি ঠেকাতে পারেনা। পাকিস্তান আমলেই এর প্রমাণ দিয়েছিল বাংলার মানুষ। সত্তুরের নির্বাচনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ব্যালট বিপ্লব করে দেখিয়েছিল বাংলার মানুষ। ফলাফল আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বহু নির্বাচন হয়েছে। জনগণকে ভয় দেখানো হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ কিন্তু ঠিকই ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে সরকারকে সমুচিত জবাব দিয়েছে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট বর্জন করে সরকারের বিরুদ্ধে অসম লড়াই যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এক্ষত্রে পাকিস্তানের এবারের নির্বাচন উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়- পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ, দলকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা, নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি, ইমরান খানকে সাজা দেওয়া এবং প্রার্থীদের গ্রেপ্তার সস্ত্বেও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নির্বাচন বর্জন করেনি। পিটিআই-এর নির্বাচনী প্রতীকটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তাঁর দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে লড়েন। নানা কৌশল নিয়ে তারা নির্বাচনে লড়েছেন, যাতে ভোটাররা ব্যালট পেপারে জবাবটা দিতে পারে।
পাকিস্তানে নির্বাচনের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইল সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইমরান-সমর্থকেরা যাতে ভোটকেন্দ্রে সহজে যেতে না পারেন এবং ব্যালটে প্রার্থীদের খুঁজে না পান, সেটা নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছিল। তবে ইমরানের সমর্থকেরা অসাধারণ চাতুর্য দেখিয়েছেন। রাতারাতি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। তাঁরা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন এবং নিজেদের প্রার্থীদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি কারাবন্দী ইমরান খানের বক্তব্য প্রচার করে তাঁর দল। ইমরানের কয়েদি নম্বর নির্বাচনী স্লোগানে পরিণত হয়। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সত্ত্বেও পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হন। নির্বাচনের দিন ইমরানের জনপ্রিয়তার ঢেউ এতটাই আছড়ে পড়েছিল, যা যথারীতি কারচুপি সত্ত্বেও আটকানো যায়নি। প্রযুক্তিবান্ধব একটি প্রজন্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে সামরিক বাহিনী বিংশ শতাব্দীর কৌশল ব্যবহার করেছিল, কিন্তু তারা হেরে যায়।
বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তো পাকিস্তানের মতো ছিলনা। সরকার বরাবরই বলেছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। নির্বাচনকালীন সময়ে বিএনপিকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি গোঁ ধরে ছিল- আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারা ভোটারদের উপর আস্থা রাখতে পারেনি, আস্থা রেখেছিল অন্য দেশের উপর। তাই যা হওয়ার তা হয়েছে। ভুল কৌশলের কারণে বিএনপির এখন আগামী পাঁচ বছর অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
প্রশ্ন হলো- এতো জ্যেষ্ঠ নেতা থাকার পরও রাজনৈতিক কৌশল কেন ঠিক করতে পারেনি বিএনপি। তবে কি এতো বর্ষিয়ান নেতার মাথা কাজ করছে না, নাকি তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু বলার নেই তাদের? নিজেদের এবং দেশের স্বার্থে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারায় থাকা বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। সেটি যদি তারেক রহমানকে মানতে বাধ্য করতে হবে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের। বাংলাদেশে বসে বিএনপির নেতারা যতোটা বুঝবেন, ঠিক ততোটা বোঝা সম্ভব নয় সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে।
রাজনীতি মানেই সব সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে এমনটি নয়। পাকিস্তানের নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরও নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা দাবি করার পরিবর্তে দায়িত্ব নিতে নারাজ ছিলেন। অনেক নাটক আর দর কষাকষি শেষে গত ৩ মার্চ পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পিএমএল-এন সভাপতি শেহবাজ শরিফ। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকার গঠন করতে পারিনি কিন্তু ইমরান খান নিজেকে আপসহীন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জনতার ভোটে। পিটিআই-এর সংগ্রাম ও কৌশল থেকেও শিখতে পারে বিএনপি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভালো কৌশল যে কারও থেকে শেখা যায়, সেটি হোক পাকিস্তান কিংবা ভারত। আর ভুল হলে স্বীকার করাও দোষের কিছু নয়, দুর্বলতাও নয়।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
পাঠকের মতামত:
- অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন ৫৭৯ কর্মকর্তা
- দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের আয়-সম্পদের তথ্য প্রকাশের আহ্বান
- বিএনপির ৩ সংগঠনের লং মার্চ আখাউড়া পৌঁছেছে
- ‘পোশাক খাতে শ্রমিকদের দিয়ে সমস্যা তৈরি করানো হচ্ছে’
- ৬৬১ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
- ‘রাষ্টের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার সঙ্গে জড়িতদের ছাড় নয়’
- ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সাজা দেওয়া হবে’
- প্রীতি ফুটবল ম্যাচে জামালপুর ফুটবল একাডেমির জয়
- আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য রেজাউল ইসলাম তিন দিনের রিমাণ্ডে
- শ্রীমঙ্গলে প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা খুন, ৪ দিন পর প্রেমিক গ্রেফতার
- নগরকান্দায় কৃষক দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র্যালি আলোচনা সভা
- হযরত খানজাহানের (রহ:) ওরশে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার
- মাগুরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া উৎসব উদ্বোধন
- রাজবাড়ীতে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্তে বাধা ও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
- টাঙ্গাইলে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
- সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ
- নগরকান্দায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ
- বিজয় দিবস উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি পালন করবে সরকার
- জামালপুরে কৃষকদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
- ইসলামপুরে পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
- মৌলভীবাজারে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে জেলা ইজতেমা
- ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরুর সময় নির্ধারণ
- ‘ভারতীয় সাংবাদিকরা আমাকে আটকে জোর করে এসব কথা বলিয়েছে’
- ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার’
- আসক’র উদ্যোগে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত
- আজ বিকালে ফিলিস্তিন দূতাবাসে যাচ্ছেন খালেদা
- বেলকুচিতে থানায় ঢুকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলা, ইন্জিনিয়ার আমিনুল শোকজ
- শীতকালে খামার ঘিরে প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে
- বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ
- ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা উচিত না’
- দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও উদ্ধার হওয়া ১১টি স্মার্ট ফোন মালিকদের প্রদান
- শেখ হাসিনার কথা মনে করিয়ে যা বললেন ফারুকী
- জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের পাশে জেলা প্রশাসন
- ‘নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় কখনও হয়রানি করা হবে না’
- মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় চিত্র নায়ক রুবেলসহ আহত ৯
- ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকের বাজারে মানবতার সওদা
- জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে সুখবর দিলেন বিপিসি চেয়ারম্যান
- ‘পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প’
- ‘পরিস্থিতি মনিটর করছি, আশা করছি সবাই শান্ত হবে’
- মেধাবী শরীফের বাঁচার আকুতি
- মজুরি বৈষম্যের শিকার পলাশবাড়ীর নারীরা
- ‘বিএনপির কাউন্সিলে দাওয়াত না পাওয়ায় যাইনি’
- ভোলার তজুমদ্দিনে ড্রেজার মালিকের কাছে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ
- আজ গৌরীপুর মুক্ত দিবস
- ‘শহীদরা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে’