শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বৃদ্ধি শিক্ষকের নৈতিক অবক্ষয়
![শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বৃদ্ধি শিক্ষকের নৈতিক অবক্ষয়](https://www.u71news.com/article_images/2024/04/22/Untitled.jpg)
নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার
পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই শিক্ষকতা ও শিক্ষক শব্দটি সবচেয়ে সুন্দর হিসেবেইে মানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে। এখনও যে একবারেই নষ্ট হয়ে গেছে তা কিন্তু বলা যাবে না। হ্যাঁ এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে কিছু সংখ্যক নামধারী শিক্ষকের জন্য শিক্ষক সমাজ আজ সাধারণ মানুষের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টিতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। যা শিক্ষক সমাজকে প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। শিক্ষাদানের মহান ব্রত নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই শিক্ষক। সেটা হোক প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক শব্দটি বিভিন্ন ভালো ভালো শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। শিক্ষক হতে হলে যে বিষয়গুলি সবচেয়ে জরুরি তা হলো শিষ্টাচার, ক্ষমাশীল ও কর্তব্যপরায়ণ এর মতো কিছু বিশেষণ। অন্যভাবে সত্যবাদী, শিক্ষিত, চরিত্রবান, সৎ, উদ্যোগী ও দায়িত্ববান শব্দের মতো কিছু সুন্দর শব্দের সমাহার ঘটবে শিক্ষকের জীবনে। ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ তবে সমাজের অন্যান্য মানুষের তুলনায় শিক্ষক সমাজের নিকট মানুষের চাহিদা অনেক বেশি এটা মনে রাখতে হবে শিক্ষক সমাজকে। এখনও সাধারণ মানুষ ও অভিভাবকরা শিক্ষকদের আস্থার পাত্র হিসেবেই দেখে এবং পিতামাতার পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়ে থাকে। কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারীদের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে। একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। শিক্ষার্থীদের মানবতাবোধ জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানকে সার্থক করে তোলেন না পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেন।
সুন্দর পৃথিবী গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারিগর শিক্ষক। সুন্দর মানুষের জন্ম না হলে দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। পৃখিবীতে যারা জ্ঞান ও কর্মে বড় হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জীবনেই শিক্ষকের প্রভাব অনস্বীকার্য।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যৌন হেনস্তার ঘটনা জাতিকে চরম অস্বস্তিতে ফেলছে। শিক্ষকদের দ্বারা একের পর এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষক শিক্ষিকাদের অশালীন নাচের ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে এমন কি বাদ যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরাও। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে সকল জায়গায়। যার নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আর হতাশার কথা হলো ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও আরও অনেক ঘটনাই অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে যা ভুক্তভোগী পক্ষ নিরবে সহ্য করে যাচ্ছে। সামাজিক অস্থিরতা এবং ভবিষৎতের কথা বিবেচনা করে প্রকাশ হচ্ছে না আরও নির্যাতনের ঘটনা। এইসব ঘটনা শিক্ষকদের মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন ও অধঃপতনও বলা যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে এখন ভাইরাল হচ্ছে দ্রুত। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এইসব ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যা পরিসংখ্যান বলছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যখন অবস্থান করে তখন জীবনের পট পরিবর্তনের সময়। আর পরিবর্তনের সময় জীবনের নানা ঘটনা জন্স নিতে থাকে। এইসব ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। তৈরি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃংখলা। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ অবনতি হচ্ছে ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক। ঘটনার কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এসব ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম্বার দেয়ার প্রলোভনে। এই নাম্বার দেয়ার ফাঁদে ফেলে শিক্ষার্থীর উপর নেমে আসে যৌন হয়রানির ঘটনা। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব প্রকাশিত হয় খুব কমই। বিভিন্ন কারনে কেউ প্রকাশ করে আবার করতে পারে না। শেষ পর্যায়ে যখন প্রকাশিত হয় তখন এটা অনেক দূরে চলে যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারের নিয়ম নীতির ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর উপর থেকে শাসন নামক শব্দটির অপমৃত্যু হয়েছে। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের ব্যবধান কমাতে গিয়ে সম্পর্ক এতটা তলানিতে এসছে যে তা বলাই কঠিন। এই স্তরের শিক্ষার্থীরা যখন উপরের স্তরে প্রবেশ করছে তখন এই সম্পর্ক কিছুকিছু ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করছে। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন তবে মাঠের বাস্তবতা এ থেকে দূরে নয়।
সম্প্রতি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পর আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই বিষয় গুলি যখন সামনে আসে তখন আমরা খুব উদ্গ্রিব হই। কিছু দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবার আগের জায়গায় ফিরে যাই আমরা। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন চলে আর বিচারের বাণী নিরবে কাঁদে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিটির প্রতিবেদন আর প্রকাশিত হয় না। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়ের পরিবার সেটা আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে থাকে না। অন্যদিকে চলে প্রভাবশালী পরিবারের হুমকি। সবমিলিয়ে ফলাফল শুন্য। এমনকি বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শিক্ষকদের বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন পথ অনুসরণ করে থাকেন। যখন আর বাঁচানোর কোন পথ থাকে না তখনই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রত্যেকটা ঘটনা আলাদা আলাদা বিচার করলে দেখা যাবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের গাফিলতির কারনে এসব অভিযুক্তদের সঠিক বিচার করা যাচ্ছে না।
সিরডাপ মিলনায়তে ‘যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতে নির্দেশনা; বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে করণীয়’ র্শীষক মতবিনিময় সভায় ব্লাস্টের গবেষেণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত ১৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টি (৬১ শতাংশ) বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪০টি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৭টি। ৬২টি বিশ্ববিদ্যালয় কোন কমিটি গঠন করেনি। তার মানে বিষয়টি হলো কোন ঘটনা ঘটার আগে কেউ কমিটি করতে রাজি নয়। বিচার না করে কেবলই ধাসাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রতিষ্ঠানেই যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সম্পর্কিত কমিটি রয়েছে তবে এসব কমিটির কোন কার্যক্রম নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে শ্রদ্ধা ও ভালোবসার যে সম্পর্ক দেখা যেত এখন সেটি আর নেই বললেই চলে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এ বিষয়টি নিয়ে বেশি বেশি সেমিনারের আয়োজন করা এখন জরুরি এবং সরকারের কিছু নীতির পরিবর্তন করা সময়ের দাবি। শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টিতে সরকারের পক্ষ থেকেও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক :শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।
পাঠকের মতামত:
- বিদেশি উৎসবে মেহজাবীনের প্রথম সিনেমা
- ‘ব্যর্থতা আড়াল করতে মানুষকে গ্রেপ্তার করছে সরকার’
- ছাত্রনেতাদের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের আলোচনার আহ্বান
- কোটা আন্দোলনে আহতদের আয়-রুজির ব্যবস্থার আশ্বাস
- ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেফতার ২৩৫৭
- সাংবাদিকদের উপর ও বিটিভি ভবনে হামলার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় প্রতিবাদ সমাবেশ
- নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রত্যয় হয় জয়, না হয় মৃত্যু!
- মাদারীপুরে সহিংসতায় দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত
- স্কুলের জমিতে দোকান, কোমলমতি শিশুদের পাঠদান ব্যাহত
- রাজবাড়ীতে ইউপি সদস্যসহ ২ সহোদর কারাগারে
- ‘শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে’
- ‘যারা সহিংসতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’
- সেমিফাইনালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
- প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা
- ট্রাম্প কী পুনরায় হোয়াইট হাউসে ফিরছেন
- বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র, মুম্বাইয়ে রেড অ্যালার্ট
- যা থাকছে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
- আপাতত বন্ধই থাকছে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ
- ইথিওপিয়ায় ভূমিধসে ২২৯ জনের মৃত্যু
- বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে নাক না গলাতে মমতাকে নয়াদিল্লির বার্তা
- গৌরনদীতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ
- গ্রেপ্তারদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিতের আহ্বান কানাডার
- বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬ বিলিয়ন ডলার
- আশাশুনির বাহাদুরপুরে বাসন্তী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর
- সাতক্ষীরায় নাশকতার মামলায় জামায়াত বিএনপির ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
- ভাঙ্গায় মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর বেঁচে থাকার আর্তনাদ
- দুর্নীতিবাজ সিনহার বই অন্তর্জ্বালা থেকে : আইনমন্ত্রী
- সংলাপে রাজি নন আন্দোলনকারীরা
- আর্জেন্টিনার জয়ে খুশি মেহজাবীন
- ‘নতুন কারিকুলামের শিক্ষা সার্কভুক্ত দেশগুলোও ফলো করছে’
- ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য অনুদান দিলেন ইলন মাস্ক
- কালিগঞ্জ সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে যাচ্ছে বেনজীরের রূপগঞ্জের ডুপ্লেক্স বাড়ি
- কোটা বাতিলের দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ
- নাটোরের বড়াইগ্রামে ৩ দিনব্যাপী কৃষি মেলার সমাপনী
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- তিতলি-মাইকেল-লুবান : একসঙ্গে তিন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পৃথিবী
- রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থী-পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত ২
- কোটা সংস্কার ইস্যুতে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
- মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৩০, আটক ৮
- ‘পরিস্থিতি বুঝে মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে’
- নেপালে বন্যা-ভূমিধসে নিহত অন্তত ১১
- মিছিলে মিছিলে মুখরিত কোটালীপাড়া
- বোয়ালমারীতে আচরণ বিধি লঙ্ঘনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে জরিমানা