E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ হাসিনা: পঙ্কিল রাজনীতির পথ অতিক্রম

২০২৪ মে ০৪ ১৬:১০:৫৮
শেখ হাসিনা: পঙ্কিল রাজনীতির পথ অতিক্রম

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


শেখ হাসিনা আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের নেত্রী। জনমানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিভূ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার। শেখ হাসিনা এখন শুধু আর ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। যাঁর অনুপ্রেরণা, প্রণোদনা এবং নেতৃত্বে বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখেছে। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় উদ্দীপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা এক গৌরবোজ্জ্বল আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সার্থক উত্তরাধিকারী। দেশগড়ার আলোকবর্তিকা। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আপসহীন নেত্রী। তিনি জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবেন। তিনি প্রগতিশীল ভাবনার অধিকারী। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অগ্রসরমান রাজনৈতিক নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মপ্রত্যয়ী। আজ আমাদের জননেত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী। আওয়ামী লীগের নৌকা আজ তাঁর কর্মগুণে জাতীয় প্রতীক। রাজনীতির প্রতীক। দেশের উন্নয়নের প্রতীক।

শেখ হাসিনা দেশপ্রেম, মানবিকতাবোধ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্য আজ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অবদান রেখে নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আজ আন্তর্জাতিক নেত্রী। তাঁর কর্ম ও দক্ষতার মাধ্যমে তিনি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হিসেবে আজ বিবেচিত। ‘ফোবর্স’ সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তাঁর অবস্থান ছিল ৩৯তম। ২০১৯ সালে ছিল ২৯তম এবং ২০১৮ সালে ২৬তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফরেইন পলিসি’ নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্বনারী পরিষদের একজন সদস্য। এটি বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি সংগঠন। তিনি আজ শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের মর্যাদায়ও অভিষিক্ত। কথায় বলে, “শব্দের চেয়ে কাজ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে।” প্রধামন্ত্রীর কাজ এবং উন্নয়নই আজ তাঁকে দেশে-বিদেশে মহান নেতায় পরিণত করেছে। অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, আত্মপ্রত্যয় ও দূরদর্শিতাই শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেত্রীর আসনে সমাসীন করেছে।

আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ মোকাবেলা করে বড় হতে হয়েছে। পিতা শেখ মুজিব নির্যাতিত, শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। জনগণের অধিকার আদায়ে তাঁকে বিসর্জন দিতে হয়েছে জীবনের সব সুখ-আনন্দ। পাকিস্তান আমলে বছরের পর বছর, থেমে থেমে ১৩ বছর শেখ মুজিব, আজকের বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতাকে কারাগারের অন্তরালে থাকতে হয়েছে। ফলে শেখ হাসিনা পিতার আদর কাছে থেকে পাননি। পিতার স্নেহ থেকে তিনি বঞ্চিত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পিতা বঙ্গবন্ধুর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্যোগ যখন সফল হতে চলেছে, তখনই এলো কুচক্রীদের চরম আঘাত। সপরিবারে হত্যা করা হলো জাতির জনককে। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। এক রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকের ইতিহাস রচিত হলো বাংলাদেশে। গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা হলো। আবার শুরু হলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, কুটিল পৈশাচিক রাজনীতি। দেশের ভাগ্যাকাশে দেখা দিলো অন্ধকারের ঘনঘটা। বাংলার মানুষের বুকে আবার চেপে বসলো মীরজাফর, জল্লাদবাহিনী তথা সামরিক শাসন। এ সময় শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু চলে গেলেন। দুই কন্যাকে উত্তরসূরি হিসেবে রেখে গেলেন। আর মহান আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাবা-মা, ভাই ও নিকট আত্মীয়দের শোক সইবার জন্য, বাঙালি জাতির ভার বইবার জন্য বাঁচিয়ে রাখলেন।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পিতার আরাধ্য কাজ, অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পড়লো শেখ হাসিনার ওপর। পিতার অবয়বে, পিতার আদর্শে তিনি দায়িত্ব নেন এই বাংলার মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনার। প্রায় তিন দশক তিনি সংগ্রাম করেন, দায়িত্ব পালন করেন জনগণের কল্যাণে। এ সময় তাঁকে বড় দুঃখ, বড় সংকট ও বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে হাঁটতে হয়েছে। তাঁকে কঠোর, বক্র, সর্পিল পথ ধরে চলতে হয়েছে। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হয়েছে। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে হয়েছে। এ সময় তাঁকে জনগণকে নিয়ে দুই দুইটি সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। আন্দোলন করতে হয়েছে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে। এজন্য একাধিকবার তাঁকে অন্তরীণ ও সেনা ছাউনিতে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু সকল অপশক্তি তাঁর নেতৃত্বের কাছে পরাজিত হয়েছে। গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন পিতা বঙ্গবন্ধুর ন্যায় অবিচল, অটল ও দুর্বার।

শেখ হাসিনা দীর্ঘপথ হেঁটে বাংলাদেশের জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে দুটি সামরিক জান্তার এবং একটি অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক পথে, বিভিন্ন সময়ে, দুটি গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসককে আন্দোলনের মাধ্যমে সরাতে হয়েছে। শেখ হাসিনা নীতির সাথে আপস করলে অনেক আগে ক্ষমতায় আসতে পারতেন। তিনি ক্ষমতার জন্য নেতিবাচক রাজনীতির পথে কখনো এগোননি। তিনি তাঁর জীবনে কোনো বাঁকা পথ, কোনো প্রলোভনকে প্রশ্রয় দেননি। যেহেতু তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করেন, সেজন্য তিনি জনগণকে নিয়ে, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে, নিয়মতান্ত্রিক পথে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনায় এসেছেন। নিয়মের প্রতি, আইনের প্রতি, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তাঁকে বড় মাপের নেত্রীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি এদেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অগ্রদূত। তিনি যে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’- এটা তাঁর প্রতিটি কাজ ও কর্মে নিরন্তর উদ্ভাসিত।

শেখ হাসিনা দেশের অবিসংবাদিত নেতা। দেশের নেতৃত্বে তাঁর আগমন ধূমকেতুর মতো। তাঁর আগমন আল্লাহর রহমতের মতো- আশীর্বাদস্বরূপ। মহামতি লেনিন বলেছিলেন- A nation gets the Leader it deserves. সময়কালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশের জন্ম হতো না। জনগণের স্বাধীনতা ফিরে আসতো না। দেশের জনগণ মন খুলে কথা বলতে পারতো না। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হতো না। Politices is a difficult game. এই প্রবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে শেখ হাসিনা রাজনীতিকে সহজ করেছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে, ইতিহাসের প্রতিটি পাতায়, নিজেকে গণতন্ত্রের ‘মানস কন্যা’ হিসেবে গ্রথিত করেছেন। দেশের নেত্রী, জনগণের নেত্রী, দেশের উন্নয়নের নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু ৩০০০ ডলার ছাড়িয়ে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও বিদ্যুৎ যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি পেয়েছেন। বিভিন্ন ইতিবাচক কাজের জন্য পেয়েছেন প্রচুর প্রশংসা ও উপাধি। তিনি বাংলাদেশের ভূমিকন্যা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এ দেশের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার সব উদ্যম রহিত হয়, মানসিকভাবে হতোদ্যম এ দেশবাসী ২১ বছর সামরিক শাসকদের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। কীভাবে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে সামনে যেতে হবে, কীভাবে বিশ্বের দরবারে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে হবে, কীভাবে দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে হবে তার সবই সে সময় নির্বাসিত, অন্তর্নিহিত, যেন প্রভাতে প্রদীপের সলতে পাকানোর কোনো লোক নেই, সন্ধ্যায় আলোক প্রাপ্তি তো দূরের কথা! তারপর এলো ১৯৯৬ সাল; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাঙালির অহংকার হয়ে উঠলেন, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়ে তিনি মানুষের সামনে দাঁড়ালেন। দেশের রাজনীতিতে সমাজ সংস্কার আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়ে উঠল মূলমন্ত্র; বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মঙ্গল চিন্তায় ব্যাপিত হলেন।

লেখক : উপপরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test