E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: পরিবর্তনের পথে আমাদের প্রস্তুতি কেমন?

২০২৪ জুন ১৭ ০০:০৯:০৪
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: পরিবর্তনের পথে আমাদের প্রস্তুতি কেমন?

ওয়াজেদুর রহমান কনক


চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (Fourth Industrial Revolution) প্রযুক্তিগত অগ্রগতি কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে এবং নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন দক্ষতা ও কাজের ধরণ তৈরি হওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। ডেটা সায়েন্টিস্ট এবং ডেটা বিশ্লেষক ব্যবসা ও শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেটা বিশ্লেষণ এবং ব্যবহার করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্যকারী পেশাদারদের চাহিদা বাড়ছে।

এআই (AI) উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ এআই (AI) সিস্টেম ডিজাইন, তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইঞ্জিনিয়ার, প্রোগ্রামার এবং টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। এলওটি (IoT) ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদ স্মার্ট ডিভাইস এবং সিস্টেম তৈরি, সংযুক্তকরণ এবং পরিচালনা করতে ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন।
নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ এলওটি (IoT) ডিভাইস ও সিস্টেমের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন। রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবট তৈরি ও পরিচালনার জন্য দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন।

রোবোটিক্স রক্ষণাবেক্ষণ টেকনিশিয়ান, রোবটিক সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমস্যা সমাধানের জন্য টেকনিশিয়ানদের প্রয়োজন। ব্লকচেইন ডেভেলপার ব্লকচেইন ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন এবং সিস্টেম তৈরি ও পরিচালনার জন্য ডেভেলপারদের চাহিদা রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির অর্থনৈতিক দিক বিশ্লেষণ এবং ব্যবস্থাপনা করতে বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন।

থ্রিডি (3D) প্রিন্টিং টেকনিশিয়ান এবং ডিজাইনার থ্রিডি (3D) প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও ডিজাইন করার জন্য টেকনিশিয়ান ও ডিজাইনারদের প্রয়োজন। উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার উৎপাদন প্রক্রিয়ার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির প্রয়োগ ও উন্নয়নের জন্য ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম তৈরি এবং পরিচালনার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন। ন্যানো-স্কেলে উপকরণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বাড়ছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ, অনলাইন মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা, এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েশন নিয়ে কাজ করা। ই-কমার্স ম্যানেজার এবং ডেভেলপার, ই-কমার্স সাইট পরিচালনা এবং উন্নয়নের জন্য ম্যানেজার ও ডেভেলপার প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে নতুন ধরনের কাজের ক্ষেত্র এবং দক্ষতার প্রয়োজন তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা প্রোগ্রাম এই নতুন ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে মানুষের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বর্তমানে একটি ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং বিভিন্ন শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোর সাথে একীভূত হচ্ছে। এই পর্যায়ে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উদ্ভাবন ক্রমাগত উন্নতি লাভ করছে, তবে এর সম্পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন স্বচালিত গাড়ি, রোগ নির্ণয়, এবং গ্রাহক সেবা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনও এই প্রযুক্তির নৈতিক ও আইনি সমস্যা সমাধান এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার কাজ চলছে।

স্মার্ট হোম ডিভাইস, স্মার্ট সিটি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে এলওটি (IoT) প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা, এবং বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং এবং স্বাস্থ্যসেবা বাড়ছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারের অস্থিরতা, নিয়ন্ত্রণ এবং আইনগত গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
উৎপাদন শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, এবং বিভিন্ন সেবাখাতে রোবটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোবটের উচ্চমূল্য, কর্মচারী পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান ক্ষতি সম্পর্কিত সমস্যা। অনেক দেশ ও অঞ্চলে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে, যা দ্রুতগতির এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করছে।

উন্নত চিকিৎসা, কৃষি, এবং পরিবেশগত সমাধান উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং নৈতিক ও আইনি সমস্যা। ব্যবসা, শিক্ষা, এবং সরকারী খাতে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন দ্রুত গতিতে ঘটছে। ডিজিটাল ডিভাইড, সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা গোপনীয়তা।
সামগ্রিকভাবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব একটি মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে যেখানে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন দ্রুত উন্নতি লাভ করছে, কিন্তু এর পূর্ণ সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আরও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এই বিপ্লবের সুযোগ গ্রহণ করতে এবং এর চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে কাজ করে যাচ্ছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (Fourth Industrial Revolution) ব্যাপকতা বিশাল এবং এটি সমাজের প্রায় প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করতে পারে। এই বিপ্লবের মাধ্যমে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ এমন এক নতুন যুগের সূচনা করছে যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। স্বয়ংক্রিয়তা ও রোবোটিক্সের মাধ্যমে উৎপাদন খাতে কার্যকারিতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। শিল্পের প্রতিটি স্তরে দক্ষতা ও মান উন্নত হবে।

ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন আরও সুরক্ষিত ও সহজতর হবে। ই-কমার্স এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাণিজ্যের পরিসর বাড়বে। নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ফলে নতুন ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে অনেক প্রচলিত চাকরি অটোমেশন এবং এআই (AI) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে।

এআই (AI) এবং জৈবপ্রযুক্তি মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। টেলিমেডিসিন এবং পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা বাড়বে।
অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম এবং ই-লার্নিং সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যাপ্তি এবং গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা ও আজীবন শিক্ষার ধারণা বাস্তবায়িত হবে। স্মার্ট হোম এবং স্মার্ট সিটির মাধ্যমে জীবনের মান উন্নত হবে। এলওটি (IoT) ডিভাইস এবং স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজের গতি ও নির্ভুলতা বাড়বে। সুরক্ষিত এবং স্বচ্ছ লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করবে যা বিভিন্ন শিল্পে প্রভাব ফেলবে, যেমন ব্যাংকিং, সরবরাহ চেইন এবং স্বাস্থ্যসেবা। দ্রুতগতির এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে নতুন ধরনের পরিষেবা এবং যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে। স্মার্ট গ্রিড এবং স্মার্ট সিটি উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশগত সচেতনতা এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি পাবে। জৈবপ্রযুক্তি ও অগ্রণী কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদনশীলতা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ব্যক্তিগত ডেটা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে নৈতিক ও আইনি কাঠামো প্রয়োজন হবে।

প্রযুক্তিগত উন্নতির সুবিধা সকলের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে ডিজিটাল ডিভাইড কমানো যায়। ডিজিটালাইজেশন এবং স্বয়ংক্রিয়তার মাধ্যমে সরকারি সেবা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রদান করা সম্ভব হবে। নতুন প্রযুক্তির জন্য সঠিক নীতি ও আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন হবে যাতে এর অপব্যবহার রোধ করা যায়।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ব্যাপকতা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এটি অর্থনীতি, সমাজ, প্রযুক্তি, পরিবেশ, নীতি ও আইন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই বিপ্লবের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা করতে পারলে মানবজীবনে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব, তবে এর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৩ জুন ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test