E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

হিটলারী কায়দায় ছাত্রহত্যা

২০২৪ আগস্ট ০৫ ২৩:১৩:৩৮
হিটলারী কায়দায় ছাত্রহত্যা

মারুফ হাসান


ভূঞা কোটা সংস্কারের দাবিতে যে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেটিকে সরকার নিজেই রাজনৈতিক আন্দোলনে রুপান্তর করেছে। সরকার চাইলেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে মেনে ব্যক্তিগত ইগোর বেড়াজালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সংঘর্ষে রুপান্তর করেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকার প্রধানের শব্দচয়ণ স্পষ্টত ত্রুটিপূর্ণ ছিল।

এই ত্রুটিপূর্ণ শব্দ ছাত্রদের বিক্ষুব্ধ করেছে তো বটেই পাশাপাশি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারের দলীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভীষণ ভাবে প্রলুব্ধ করেছে। তার প্রমাণ সারা দেশের সড়ক, মহাসড়কে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের অবস্থানে প্রদর্শিত হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে সাধারণ ছাত্রদের যে মৃত্যুর ঢল, প্রায় ২১২ জনের বেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, শিশুদেরকেও গুলি করেছে পুলিশ, পুলিশের গুলিতে বাসা বাড়ির ভেতরে থাকা শিশুরাও নিহত হয়েছে। পুলিশ এতেই ক্ষান্ত হয় নি, গুলি করেছে হেলিকপ্টার থেকে। বাংলাদেশ দেখেছে সে মৃত্যু চিত্র দেশের মানুষের কাছে এই মৃত্যু চিত্র ভয়ংকর যুদ্ধের দৃশ্য। একদিকে পুলিশের গুলি ও সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সশস্ত্র হামলা, ককটেল ও চাপাতি নিয়ে তাণ্ডব। সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে কাশ্মীরি কায়দায় এসব খুন, হত্যা, নির্যাতন ও গণগ্রেফতার চলেছে।

এর পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের যে নির্মম ভাবে পিটিয়েছে সেটি সত্যি নিন্দনীয়। কোনো গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য আন্দোলনে এভাবে পুলিশ ও সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে হামলা সরকারের অক্ষমতা ও দুর্বলতার প্রকাশ।

ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরকার একটি অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশ দিয়ে বাসা বাড়ি থেকে সাধারণ ছাত্রদের গণগ্রেফতার এবং চাঁদাবাজি করছে। রাস্তায় শিক্ষার্থী দেখা মাত্রই সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা প্রথমত নির্মম ভাবে পিটিয়ে আহত করেন, এরপর তাদের মোবাইল ফোন তদন্ত করে তারপর সে যদি আন্দোলনে যুক্ত ছাত্র হয় তাহলে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। আর যদি সাধারণ ছাত্র হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। ঠিক হুবহু চরিত্রে পুলিশ, পুলিশ ছাত্রদের দরে হয়ত গ্রেফতার করেন, নয়তো চাঁদা দাবি করেন। এই চিত্রগুলো সিনেমাটিক কিংবা কাল্পনিক মনে হতে পারে কিন্তু এই চিত্রগুলোই বাংলাদেশের দৃশ্যমান চিত্র।

বাংলাদেশ ইতিহাসে অতীতে কোনো সরকার এভাবে একদিনে এতো ছাত্র তো দূরে থাক মানুষকে পর্যন্ত মারার সাহস করেনি। আমাদের উন্নয়নশীল সরকার সে সাহস দেখিয়েছেন। এবং পরবর্তীতে সে মৃত্যু গুলোকে কালিমালিপ্ত করেছেন। সেনা নামিয়ে সে দুঃসাহসে রুপান্তর করেছেন। এবং ইতিহাসের পাতায় ঘোষিত হিটলার ও শিক্ষার্থী হত্যা কারী হিসেবে এই সরকারের নতুন পরিচয় তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে। বাংলাদেশে শিক্ষার সাথে যুক্ত ও সমস্ত মানুষ শিক্ষক, লেখক,শিল্পী , সাংস্কৃতিক কর্মী, দিনমজুর , শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীসহ সমস্ত জনগণের কলরব কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে প্রবাহিত হয়ে এই সরকারের বিচারের সম্মুখীন করার দাবিতে রুপান্তর হয়েছে।

বিশেষ করে সরকার প্রধান এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ, ঠাট্টা ও কটূক্তি করে বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে আক্রান্ত করে। এবং উনার এই ত্রুটিযুক্ত বক্তব্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষা দিয়ে বিচার করেছেন। আর উনি সে বিচারকে অক্ষরজ্ঞান শূন্য মন দিয়ে বিচার করেছেন। সেটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবেই উনি করেছেন। কারণ উনি এই দেশের রানি হতে চান, রানি এলিজাবেথ। এবং উনি সেটি ভাবেনও উনি এই দেশের রানি এলিজাবেথ। তাই উনি নিজের অসুস্থ ভাবনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কখনো রাজাকার কিংবা শিবির হিসেবে চিহ্নিত করেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে যতগুলো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে তার জন্য তিনি কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না।সুতরাং উনাকে ওই গণভবন থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট বিনয়ের সাথে ক্ষমা চেয়ে, দেশে নারকীয় ছাত্র হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করার চিন্তা করতে হবে।

লেখক : লেখক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test