E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরার সময় হয়েছে 

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৮:০৮:২৬
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরার সময় হয়েছে 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


জাতির জন্য একটি অনন্য অর্জন উপহার দেওয়া শিক্ষার্থীদের এখন শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার সময়। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের একটি সাধারণ চাওয়াকে কেন্দ্র করে “ জুলাই-২৪ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন” এর সূচনা হয়েছিল। চলমান সে আন্দোলনের ৩৫ দিনের মাথায় সরকার পতন হয়ে যাবে, এমন কথা কেউ আন্দাজও করতে পারেনি।এত স্বল্প সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের করুণ পরিণতির মাধ্যমে একটি গণআন্দোলন সফল পরিণতি পায়, তা ইতিহাসে বিরল।

ছাত্রদের দেখানো পথে দ্রুতই সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লো, দীর্ঘদিনের একদলীয় সরকারের দুঃশাসনের অবসান হলো।

আওয়ামী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি আর প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে তারা ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব, দেশটা স্বাধীন করার পেছনে একক কৃতিত্ব দাবিসহ নানা কারণে তারা দ্রুতগতিতে মানুষের আস্হা হারায়। ফলে তাদের নিদারুণ করুণ বিদায়ে আর বিলম্ব হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলো কেবল হিংসা আর প্রতিশোধের নোংরা রাজনীতিতে মত্ত থেকেছে। একজন রাজনীতিকের বক্তব্য মানেই নেতা তোষণ আর বিপক্ষ দলের প্রতি বিষোদগার। পচে যাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত পতিত রাজনীতিকদের জীবনাচার থেকে ছাত্রদের কিছু শেখার নেই।

সরকারি চাকরিজীবীদের প্রায় শতভাগ দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষদের জিন্মি করে মুনাফা অর্জন, দলীয় ক্ষমতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে একশ্রনীর দুষ্টচক্র ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে বিদেশে পাচার করার কথা মানুষের মুখে মুখে। ভালো কিছুর নজির নেই, কেবলই অন্ধকার।

যখন ভাবি, বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাই, এমন একটি কলুষিত পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছাত্র সমাজ কোথা থেকে এমন একটি নৈতিকতা-নির্ভর আন্দোলনের শিক্ষা-সাহস কীভাবে পেল ? ওরা বন্দিদশা থেকে আমাদের মুক্ত করেছে।

ছাত্রদের মধ্যে, নবীনদের মধ্যে পবিত্রতা আছে, সততা আছে, একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ আছে, ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা রয়েছে, এসব গুণাবলীর শক্তি অসিম। যে শক্তিকে ধারণ করে দুরন্ত দুঃসাহস নিয়ে বন্দুকের সামনে প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, হিমালয়সম দুর্লঙ্ঘ্য পাহাড় গুড়িয়ে দিয়ে একেবারে সমতল ভূমি বানিয়ে দিলো, নতুন বাংলাদেশ গড়বো বলে। স্বল্প সময়ের গণআন্দোলনে কাঙ্খিত ফল আত্মপ্রকাশ করলো আগ্নেয়গিরির আকস্মিক বিস্ফোরণের মতো। এ অর্জন আমাদের একটি শ্রেষ্ট অর্জন।

১৯৭১ এর বিজয় বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ট অর্জন, বিদেশী শক্তিকে তাড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জন। দেশটা স্বাধীন হয়েছিল সবার দেশ হয়ে ওঠার জন্য কিন্ত তা হয়নি। সে ব্যর্থতা আমাদের। তবে জুলাই-২৪ আন্দোলনের বিজয় ‘৭১ এর স্বাধীনতা অর্জনের বিজয়ের সাথে তুলনীয় নয়।

মুক্তির দরজা খুলে দিলো ছাত্ররা আর মূল আন্দোলনে না থেকেও সুযোগ বুঝে নিজ নিজ স্বার্থ উদ্ধারে অনুপ্রবেশ ঘটেছে নানা মত ও পথের শক্তি ।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্মারকসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্হাপনা গুড়িয়ে দিলো কারা? সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় আক্রমণ করলো কারা?

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো তো ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না, কবে নির্বাচন হবে, সিংহাসনে আসীন হতে হবে।

দলীয় সরকারের দুঃশাসনের কথা মনে করলে আতঙ্কিত হই, তাই অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন প্রয়োজন থাকুক; তাঁরা বিজ্ঞ লোক।

ইউনূস সরকারের পক্ষে বর্তমানে উদ্ভুত সমস্যাগুলো সামাল দেওয়া সহজ কাজ নয়, তাঁকে সময় দিতে হবে।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মনে রাখতে হবে, বর্তমান অরাজনৈতিক সরকারের উপদেষ্টাগণ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রাজ্ঞজন, প্রতি পদক্ষেপে তাঁদের উপদেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁদের ওপর জাতীয় যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা নির্বিঘ্নে পালন করার সুযোগ দিতে হবে। শক্ত হাতে প্রশাসন চালাতে হবে, কোনো দুর্বলতা নয়।

ছাত্ররা পেরেছে, তাদের মনোনিত প্রতিনিধি ড . ইউনূসও পারবেন, এ বিশ্বাস আমাদের। তাঁর ওপর আস্হা রেখে ছাত্রদের এবার শিক্ষাঙ্গণে ফিরে যেতে হবে।

আমরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে চাই, যা হবে সবার দেশ, বাংলাদেশ, যেখানে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা”কে কেউ আঘাত করতে সাহস করবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৭ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test