বিকৃত পৌরুষের শিকার আছিয়া, সমাজ কতটা দায়ী?
মীর আব্দুল আলীম
আছিয়া আর ফিরবে না। তার নিষ্পাপ মুখ আর অপলক চাহনি কোনোদিনও আমাদের সামনে ভেসে উঠবে না। অথচ তার মৃত্যু আমাদের সামনে রেখে গেছে এক কঠিন প্রশ্ন— আমরা কি সত্যিই সভ্য সমাজে বাস করছি? আমাদের মানবতা কি শেষ হয়ে গেছে?
আছিয়ার মৃত্যু আমাদের চরম ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। এটি শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে থাকা বিকৃত পৌরুষত্বের প্রতিফলন। আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির এক নির্মম উদাহরণ।
গত ৬ মার্চ, ২০২৫ সালে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সে হয়ে পড়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার। অভিযোগ অনুযায়ী, তার দুলাভাই সজীব হোসেনে বাবা হিটু শেখ তাকে ধর্ষণ করে। আর এই বর্বরতার ঘটনা জানার পর সজীবের মা জাবেদা বেগম ও ভাই রাতুল শেখ মিলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আসিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এই ঘটনা আমাদের সামনে সমাজের এক অন্ধকার দিক উন্মোচিত করেছে— যেখানে নারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়, তাদের স্বপ্ন ধ্বংস করা হয়, এবং কখনও কখনও তাদের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়। বিকৃত পৌরুষত্ব কেবল নারীদের জন্য নয়, গোটা মানবতার জন্য এক অভিশাপ।
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন নৃশংসতার পরও বিচার পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। নারী ও শিশু নির্যাতনের বেশিরভাগ মামলাই বিভিন্ন কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়। প্রভাবশালী আসামিদের কারণে স্বজনেরা ন্যায়বিচার পান না। আদালতে গড়ালেও দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতির কারণে বিচার পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়।
২০১২ সালে সাভারে পাঁচ বছরের শিশু সামিয়ার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল। ২০২০ সালে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে। কিন্তু এসব ঘটনার কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত সমাজে কতটা পরিবর্তন আনতে পেরেছে?
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১,৯৮৭ জন নারী ও শিশু, যার মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১২৪ জন। কিন্তু এদের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সংখ্যা খুবই কম। আছিয়া সেই বিচারহীনতার নির্মম শিকারদেরই একজন।
ঘৃণিত পৌরুষত্বের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ
১. পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা: শিশুকাল থেকেই ছেলেদের শেখানো হয় যে তারা নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই মানসিকতা তাদের মধ্যে এক ধরনের অধিকারবোধ তৈরি করে, যা পরে ঘৃণিত পৌরুষত্বে পরিণত হয়।
২. বিচারহীনতার সংস্কৃতি: নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন প্রায়শই হয় না। অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়, ফলে ভবিষ্যতে অন্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহিত হয়।
৩. নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজে নারীদের স্বাধীনতা সহ্য করা হয় না, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার খর্ব করা হয় এবং তাদের ব্যক্তি পরিচয়কে শুধুমাত্র পুরুষের অধীনস্থ করে তোলা হয়।
৪. শিক্ষার অভাব ও বিকৃত সংস্কৃতি: নারীর প্রতি সম্মানবোধ শেখানো না হলে ঘৃণিত পৌরুষত্ব আরও শিকড় গেড়ে বসে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে নারীকে দুর্বল করে রাখার চেষ্টা করা হয়।
সমাজের ভূমিকা ও করণীয় পদক্ষেপ
১. নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গড়ে তোলা: পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধার শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২. বিচারব্যবস্থা শক্তিশালী করা: নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নারীর ক্ষমতায়ন: শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মাধ্যমে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করতে হবে।
৪. পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন: পুরুষদের মধ্যেও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে, যাতে তারা নারীদের সহযোগী হিসেবে দেখে, প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়।
৫. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যম, সামাজিক আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক প্রচারণার মাধ্যমে ঘৃণিত পৌরুষত্বের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
আজ প্রশ্ন একটাই— আমরা কি আরেকটি আছিয়ার লাশ দেখতে চাই? সমাজ কি এই পাশবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, নাকি চোখ বুজে থাকবে?
আমাদের প্রয়োজন কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণের বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিটি স্তরে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন না হলে আইন করেও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
ধর্ষকের একমাত্র পরিচয় সে ধর্ষক- সে কোনো দলের, কোনো সম্প্রদায়ের, কোনো পরিবারের গর্ব হতে পারে না। আছিয়ার রক্ত বৃথা গেলে আমাদের বিবেক চিরদিনের জন্য কলুষিত হবে। আমরা কি সেই কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই?
লেখক : কলামিস্ট ও সমাজ বিশ্লেষক।
পাঠকের মতামত:
- 'রাজশাহীতে মুক্তিবাহিনী হঠাৎ পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে'
- গোপালগঞ্জে আ’লীগের ৫ নেতার পদত্যাগ
- পাবনা-৪ আসনে বিএনপি নেতা হাবিবের মনোনয়ন বাতিল ও পিন্টুকে প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
- ফরিদপুরে কুদ্দুস পীরের আস্তানায় তৌহিদি জনতার হুমকি, থানায় জিডি
- শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে পাংশায় বিএনপির আনন্দ মিছিল
- শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে নগরকান্দায় আনন্দ মিছিল
- রায়ের পর শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ
- ঈশ্বরগঞ্জে স্কুল ফিডিং কর্মসূচীর উদ্বোধন
- মাদারীপুরে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কর্মশালা
- রাজৈরে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়ে ছাই
- শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘিরে ফরিদপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
- ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক গৌতম দাসের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন
- বালুর সাথে কীটনাশক মিশিয়ে পেঁয়াজের বীজতলায় দিলো দুর্বৃত্তরা, আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি
- কাপাসিয়ায় বিএনপি প্রার্থী রিয়াজুলকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে মামলা দায়ের
- তজুমদ্দিনে মেজর হাফিজকে গণসংবর্ধনা
- ‘ভোট দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচান’
- তথ্যনির্ভর নতুন বাংলাদেশ গঠনে ঠাকুরগাঁওয়ে আলোচনা সভা
- টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- নারী উদ্যোক্তার উত্থান: বাংলাদেশে অর্থনৈতিক রূপান্তরের নতুন অধ্যায়
- রাজবাড়ীতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে
- সাতক্ষীরায় অস্ত্র গোলাবারুদসহ বনদস্যু সাইফুল ওয়াদুদ আটক
- শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়, সালথায় বিএনপির আনন্দ মিছিল
- বিশ্ব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবর
- ‘রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পেয়েছে, এ রায় যুগান্তকারী’
- নিমে নিরাময় হয় যে সব রোগের
- ‘ঐ চেয়ার নির্লজ্জদের জন্যই’
- হাজারো মানুষের তারুণ্যের জাগরণ ‘অনন্যা’
- নিরাপদ সমুদ্র পর্যটনের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- আবারো রগ কেটে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে : মোমিন মেহেদী
- ‘ভারত নোংরা খেলা খেলতে পারে, দ্বিমুখী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান’
- রাজশাহীতে আশুরা পালনে মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ
- ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন’
- ডহর রামসিদ্ধি : নৌকার গ্রাম
- সবার আমি ছাত্র
- ‘বঙ্গবন্ধু একটি সুন্দর ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন’
- আজ জালালপুর গণহত্যা দিবস
- মেক্সিকোতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪
- মামদানির জয়, প্রথম মুসলিম মেয়র পেলো নিউইয়র্ক
- ভণ্ডামি আর নাটক থেকে মুক্তি চান আঁখি আলমগীর
- গাজীপুরে ৩৯ দফা দাবিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ
- একদিনে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু
- মহম্মদপুরে শহীদ আবীর পাঠাগারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি
-1.gif)








