E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পরিবেশ দিবসের অঙ্গীকার পরিবেশ হোক সবার

২০২৫ জুন ০৩ ১৭:৩৭:৩৭
পরিবেশ দিবসের অঙ্গীকার পরিবেশ হোক সবার

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। পরিবেশ শব্দটি আমাদের মনের মাঝে শিহরণ জাগায়। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ কেমন হওয়া দরকার আমরা তাও জানি। নেই শুধু এই পরিবেশ ভালো রাখার মনমানসিকতা। আমরা বুঝি শুধু নিজেকে ভালো রাখা। কিন্তু এটা মনে আনি না যে পরিবেশ ভালো না থাকলে দিনশেষে কেউ ভালো থাকবে না। প্রতিনিয়িতই পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। এ থেকে সংশোধনের পথ আমরা তৈরি করতে পারছি না। যার ফলে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি তেমনি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দুঃসহ পরিবেশ সৃষ্টি করে যাচ্ছি। পরিবেশ রক্ষা একক কোন কাজ নয়। এমনকি সরকারের পক্ষেও এককভাবে এ থেকে উত্তোরনের কোন পথ নেই। শুধু কাগজে কলমে বক্তৃতায় পরিবেশ রক্ষা করে চলছি। 

এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “ প্লাস্টিক দূষণ আর নয়” এবং শ্লোগান হচ্ছে “ প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়।” অত্যন্ত সুন্দর ও সময়োপযোগি প্রতিপাদ্য ও শ্লোগান। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই আন্তর্জাতিক ও নিজস্ব চিন্তা চেতনায় প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশও এ থেকে পিছিয়ে নেই। দিবসের গুরুত্ব বিবেচনায় এগুলিকে আবার ভাগ করা হয়। সেই বিবেচনায় পরিবেশ দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এটাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। দিবসের পক্ষে কথা বলার পূর্বে বিপক্ষেও দুচারটা কথা বলা প্রয়োজন। তবে এটাও বলে রাখি আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে বিধায় পক্ষে বিপক্ষে দুচারটি কথা বলা হচ্ছে। তা নাহলে হয়তো এটাও বলার সুযোগ থাকতো না বা কারো শুনার সময় হতো না।

প্রশ্ন হলো দিবস পালন কেন করছি? প্রতিবছরই অনেক উৎসাহ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলো তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু এই যে দিবস পালন করা হচ্ছে যাদের উদ্দেশ্যে তাদের পর্যন্ত এটার মূল বানী পৌঁছেছে কি না তার খবর কিন্তু আমরা নেই না। যার ফলে এই যে এত আয়োজন তার কোনটাই সফলতার মুখ দেখতে পায় না। এবং বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় পরিবেশ দিবস পালনের বিষয়টি কেবল সরকারিভাবে সভা সেমিনার আর বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। তাই এ থেকে উত্তোরণের জন্য অবশ্যই তা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেকোন পর্যায়ে। না হলে তার ফলাফল কোন ভাবেই সুখকর হবে না। এখন একটু আলোচনা করা যেতে পারে পরিবেশ দূষণ কি এবং কি কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে ? পরিবেশের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক উপাদানের অবাঞ্চিত পরিবর্তন, যা জীবজন্তু ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষণের ফলে মাটি এবং বায়ু দূষণ হয়। এর ফলে মানুষের পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি সাধন হয় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে জনজীবন হুমকির মুখে চলে যায়। পরিবেশ দূষণ একটি বৈশি^ক সমস্যা তাই এর মোকাবেলা করতে হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। পরিবেশ দূষনের উৎসকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যার একটি প্রাকৃতিক অন্যটি মানবসৃষ্ট। যদিও প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে মানুষের হাত নেই তথাপি বলা চলে মানবসৃষ্ট কারনগুলোর কারণে প্রাকৃতিক বিষয়গুলো দিনদিন বাড়ছে।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যৎপাত, বনাঞ্চালে দাবানল, প্রাকৃতিক গ্যাস নিঃসরণ, ধূলিঝড়ের মতো উপাদানগুলো আমাদের পরিবেশকে দূষণ করছে। তার থেকে বেশি দূষণ করছে মানুষেরা। পুথিবীর মানুষেরা বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে এ পৃথিবীকে। শিল্প কারখনা, পরিবহন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, কৃষি কার্যক্রম, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খনন কার্যক্রম, বনভূমি ধ্বংস, পারমানবিক পরীক্ষা ও দুর্ঘটনা, প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশকে বপির্যস্ত করে তুলছে। এসব কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগ বাসা বাঁধছে মানুষের শরীরে। মাটি দূষণের কারণে খাদ্যশস্য এবং শাকসবজিতে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করছে। শুধু মানুষ নয় পশুপাখি ও অন্যান্য জীবজন্তুর জীবন বিপন্ন হচ্ছে। খাদ্যশৃঙ্খলে বিপর্যয় ঘটছে তাছাড়া অনেক প্রজাতির প্রাণির অস্তিত্ব বিলিন হচ্ছে।

সবচেয়ে জটিল সমস্যা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, অ্যাসিড বৃষ্টি, ওজন স্তরের ক্ষয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি। গ্রিন হাউজ নিঃসরণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এবার আলোচনায় আনা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। বিশেষ করে আমাদের দেশে এর ব্যবহার এত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে যেদিকে তাকানো যায় শুধু পলিথিন আর পলিথন লক্ষ্য করা যায় এ যেন পলিথিনের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ২০০২ সালে ১মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। কিন্তু এতে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি; বরং আজ অবধি এর উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে। আবার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে কিন্তু এর কোন প্রযোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে সমস্যাটা সমাধান আইনের প্রয়োগেই কেবল আটকে নেই। কারণ আমরা জনসাধারণের হাতে পলিথিনের বিকল্প কোন কিছু তুলে দিতে পারিনি। কোন একটি জিনিষ ব্যবহার করে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে এ থেকে ফেরত আনতে গেলে তার চেয়ে ভালো বিকল্প তৈরি করে দিতে হবে না হলে এর ব্যবহার থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না এটা মাথায় নিতে হবে। তা নাহলে যত প্রকার আইন করি না কেন সে আইন বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। প্লাস্টিক ব্যবহার যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাকে কেবল মাত্র আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কোন ভাবেই সম্ভব নয়। মানুষের সচেতনতা এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

নগরায়ণ যেমন প্রয়োজন অন্যদিকে নগরের পরিবেশ রক্ষা করাও তেমন জরুরি। শিল্পকারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন কিন্তু এটাকেতো বাদ দেওয়া যাবে না। উন্নয়নের ধাপ হলো শিল্পায়ণ। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এ থেকে যেন পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে। সবদিক থেকেই পৃথিবী এগিয়ে যাবে কিন্তু সেই এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশের যেন বড় কোন বিপর্যয় না ঘটে সে দিকে লক্ষ্য রাখা একান্ত অপরিহার্য। কারন পৃথিবী বাসযোগ্য করে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটি কোন ব্যক্তি বা দেশের একক বিষয় নয় তবে প্রত্যেকের জায়গা থেকে নিজের মতো করে চেষ্টা করতে হবে। আজকের পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে কিন্তু এই পরিবেশ দিবসের যে তাৎপর্য তা সবসময় সবাইকে ধারণ করতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে আরো বেশি মনোযোগি হতে হবে।

মানুষকে নিজেদের জায়গা থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতন করে তুলতে হবে পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রযোগের মাধ্যমে এ কার্যক্রমকে সফল করে তুলতে হবে। এবছরের প্রতিপাদ্য ও স্লোগান অনুযায়ী আমাদের এখনই এ প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। আমাদের চিন্তা চেতনায় এটা লালন করতে হবে পরিবেশ দূষণ সবার জন্যই সমস্যা। এটা যেন আমরা কখনও আলাদাভাবে চিন্তা না করি। কেবল সামগ্রিক চিন্তা এ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।

পাঠকের মতামত:

১৫ জুন ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test