E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

শিক্ষক কুশল বরণ চক্রৱৰ্তী’র ওপর মব হামলা

২০২৫ জুলাই ০৫ ১৬:৪০:৫৪
শিক্ষক কুশল বরণ চক্রৱৰ্তী’র ওপর মব হামলা

শিতাংশু গুহ


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রৱৰ্তী’র ওপর মব হামলা আবারো প্রমান করলো হিন্দুরা বাংলাদেশে মুসলমানের সাথে থাকতে পারবে না। কুশল চক্রবর্তী আওয়ামী লীগ করেনা, তাই তাকে বলা হলো ‘আওয়ামী লীগের দোসর’? কুশল চক্রবর্তী হিন্দু, সেটাই যথেষ্ট। হিন্দু তাই ভারতের দালাল, র-এজেন্ট, বিধর্মী-মালাউন। কুশল চক্রবর্তী শুক্রবার ৩রা জুলাই ২০২৫ ভার্সিটিতে যান পদোন্নতি  বিষয়ে একটি ইন্টারভিউ দিতে। মবের মুখে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সাথীরা সবাই প্রফেসর হয়ে গেছেন, তিনি হননি, সেটি ঝুলছিলো, আজকের ঘটনার পর কি সেটি আটকে গেলো? 

ছাত্র নামধারী মব ভিসি, প্রো-ভিসি’র সামনেই ভিসি’র কক্ষে তাঁকে নাজেহাল করে। ভিসি চুপ ছিলেন। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে বেশ ক’টি ভিডিও এসেছে। কুশল চক্রবর্তী নিজেও একটি ভিডিও করে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেই জানান যে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট করে এ মব সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। কুশল বরণ ‘সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সাথে জড়িত। তিনি বলেছেন, ‘একজন শিক্ষকের সেই সন্মানটুকু পর্যন্ত নেই যা রাস্তার একটি মুসলিম টোকাই’র আছে’?

তিনি বলেন, একের পর এক ঘটনা সংখ্যালঘুর জীবন দুর্বিষহ করে দিয়েছে। তিনি বিকাল ৩টা থেকে ৭ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকা ছিলেন। ভিসি তার সাথে কথা বলেননি। একাডেমিক প্রো-ভিসি শামীমুদ্দিন খান তাঁর সাথে কথা বলেছেন এবং তাকে বাড়ী পৌঁছে দিয়েছেন। ভিডিও-তে কুশল বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনি এ ভার্সিটি’র শিক্ষক ছিলেন, আমিও শিক্ষক। তিনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে এনিয়ে কথা বলার আহবান জানান। কুশল চক্রবর্তী বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি এমন আচরণ করতে পারে? বিক্ষোভে তো আমার ডিপার্টমেন্টের কোন ছাত্র ছিলোনা। কুশল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে বিচার চেয়েছেন।

কুশল চক্রবর্তীর ভাগ্য ভাল মব তাঁর গায়ে হাত দেয়নি বা মেরে ফেলেনি? হিটলার বলেছিলেন, মানুষের জীবনটা এমন করে দাও যাতে বেঁচে থাকাটাই যথেষ্ট বলে মনে হয়! বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানরা হিন্দুদের জীবনটা তেমনি করে দিয়েছে। বাংলাদেশে যারা নিজেদের ভাল মুসলমান দাবি করেন, তারা মাইন্ড করবেন না, কারণ অন্যায়কে আপনাদের ‘নীরব সমর্থন’ দেশকে আজ এ জায়গায় নিয়ে এসেছে।

দৈনিক প্রথম আলো এনিয়ে একটি সংবাদ পরিবেশন করেছে। এটি পড়লে বুঝতে অসুবিধা হবেনা যে, এ ঘটনায় উল্লেখিত কারো কারো ইন্দন আছে? ভিসি ও ক’জন প্রোভিসি’র অবস্থান বৈমাত্রসুলভ ছিলো। ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম একধাপ এগিয়ে বলেই দিয়েছেন, কুশল বরণ চক্রবর্তী চেয়েছিলেন যে তিনি হেনস্তার শিকার হন। পত্রিকার মতে, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদকে কর্মসূচিতে দেখা গেছে। এঁরা বিকেল চারটার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়। তাঁরা কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি করে।

কুশল চক্রবর্তী সনাতনী জাগরণ জোটে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের সাথে ছিলেন। কলকাতার এবিপি আনন্দ ব্রেকিং নিউজ হিসাবে হেডিং করেছে, ‘বাংলাদেশে আক্রান্ত কুশল বরণ চক্রবর্তী’। মোহাম্মদ পারভেজ নামের এক নেতা ঘোষণা দিয়েছেন যে, কুশল বরণ-এর প্রমোশন বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে; ফ্যাসিবাদের দোসরদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে; অভিযুক্তদের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিচার করা হবে। প্রশ্ন হলো, ভিসি’র অফিসে মব কিভাবে? আরো লজ্জার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ ভিসিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেছে, ‘স্যার আপনাকে আমরা বসাইছি, আপনি নিজের যোগ্যতায় এখানে আসেননি’! এরপরও তিনি স্বপদে আছেন ক্যামনে?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৯ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test