E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চেষ্টা এবং অদম্য ইচ্ছার অপর নাম সফলতা

২০২১ অক্টোবর ২০ ২২:৫৪:৩৬
চেষ্টা এবং অদম্য ইচ্ছার অপর নাম সফলতা

সোহাগ রেজা 


“ ধৈর্য্য, সততা আর একাগ্রচিত্তে স্বপ্ন দেখলে, সে স্বপ্ন একদিন বাস্তবে রূপ নেয়! যাদের চাওয়া যত অল্প-তাদের প্রাপ্তি তত বেশী। মো. তাজুল ইসলাম সোহাগ, একজন সরকারি চাকরিজীবি হলেও তাঁর কাছে টিভি ও বেতারে সংবাদ উপস্থাপনা হলো একটি আবেগ বা গভীর প্রণয়ের জায়গা। ছোটবেলা থেকেই মনে-মনে ভাবতেন, ইশ্! টিভি বা রেডিওতে যদি একদিন সংবাদ পড়তে পারতাম! শখের এমন স্বপ্ন দেখার মানুষের সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়। সোহাগ এর এই শখ ও স্বপ্নের শুরুটা ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই, তবে কখনও ভাবতে পারেননি সেই স্বপ্নটা পূরণ হবে! সোহাগ তাঁর প্রিয় মানুষদের উদ্যেশ্যে কবিতার মতো করে বলেন:

“প্রত্যাশার প্রতি ক্ষণ
স্বপ্নগুলো হোক পূরণ
পিছনে ফেলে অনেকদূর
আসুক কাছে বহুদূর।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর বাবুই পাখির বাসার শৈল্পিক শৈলী দেখে-দেখে বড় হওয়া ছেলেটি আজ স্বপ্ন পূরণের পথে হেঁটে-হেঁটে এসেছে বহুদুর। লালিত স্বপ্নের মোহ ধীরে ধীরে পূরণ করেছে সে একের পর এক। অনাবিল আনন্দ আর চিত্তের প্রশান্তি এঁকে এনে দিয়েছে অনেক সুখ। হয়তো ভাবেনি কখনো পূরণ হবে আনমনের সেই স্বপ্নেবোনা স্বপ্নগুলো। শুধু সে জানতো চেষ্টার অপর নাম সফলতা। এই বিজয়ীর নাম মো. তাজুল ইসলাম সোহাগ। অনেকে তাকে সোহাগ রেজা নামে চেনেন। পহেলা অক্টোবর, ফরিদপুর জেলার সালথা (নগরকান্দা) থানার যদুনন্দী গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গর্বিত সন্তান সে। পিতা- বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বেলায়েত হোসেন সেনাবাহিনীতে চাকরির পরে ব্যাংকেও চাকরি করেছেন, সোহাগের বাবা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতীর জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্মগ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করেন। তাঁর নানাভাই কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তার ‘মা’ কহিনুর বেগম জ্যোৎস্না একজন আদর্শ নারী। তার অত্যন্ত আদরের একটি মাত্র সন্তান- সযতœ ইসলাম সপ্রেম। শিমুল, সোহাগ, সবুজ, নিপুন চার ভাই-বোনদের মধ্যে সোহাগ এর অবস্থান দ্বিতীয়। তাঁর চার ভাইবোন সহ অন্যান্য বন্ধু বা সহপাঠীদের নিয়ে নিজের গ্রামেই কেটেছে তাঁর শৈশব। তিনি সত্যকে জয় করতে ভালবাসেন, ভালবাসেন সকল নির্ভেজাল সুন্দরকে। সযতœ-সপ্রেম আর নিবিড়তা দিয়ে যেকোন কিছুর প্রতি ভালবাসা লালন করতে জানলে ভালবাসার যে জয় হয়, তা হয় অত্যন্ত মধুর। গ্রামের সবুজ প্রান্তর, ক্ষেত ভরা ফসলের নিপুণ দোল, নদী, বাঁশের সাঁকো, স্কুলে যাবার ধুলি মাখা পথ, বাড়ির পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর কুল-কুল ধ্বনি, সময় অসময়ে স্বচ্ছ টলটলে পানিতে নেমে গোসল আর অবাধ সাতার, আরও কতকি ! বিকেল হলেই সহপাঠীদের সাথে দল বেঁধে খেলাকরা এমনকি বন্ধুদের সাথে আদর-সোহাগ, রাগ-অনুরাগ নানা খুনসুটির কথা আজও ভীষণ মনে পড়ে। বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে শৈশব, কৈশরের দিনগুলিতে। শহরের ইট কাঠ আর ব্যস্ত জীবনের ভাঁজে ভাঁজে মনে পড়ে ছোট্ট বেলার কত স্মৃতি আর ভালোলাগার নানা মুহূর্ত। কৈশরের এমন স্মৃতির ভেলায় ভেসে-ভেসে আজও স্মৃতিকাতর হলে ক্ষণে-ক্ষণে এমন ভাবনাতে ভীষণ সুখ অনুভব করেন তিনি। এসবের মাঝেই চলে জীবন, এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে।

সে বি.কম.(অনার্স), এম.বি.এস ও এম.বি.এ শেষ করে এখন তিনি আই.সি.এম.এ-তে অধ্যায়নরত। ছোট বেলায় টিভির খবর দেখার প্রতি অনেক ঝোঁক ছিল তার, আর সেই থেকে স্কুলে লেখা-পড়ার বই নিয়ে কখনও-কখনও সংবাদ পড়ার মত করে বইয়ের লিখাগুলো পড়তেন, তখন থেকেই ভেতরে লালন করেছিলেন একদিন টেলিভিশনে সংবাদ পড়বেন। লালিত স্বপ্নের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে আজ সোহাগ টেলিভিশনের পর্দায়। সত্যি-সত্যিই সংবাদ পাঠক হিসেবে তাঁর অভিষেক হল। আনন্দ আর উচ্ছ¦াস ভাগাভাগি হল প্রিয়জনদের সাথে। সোহাগ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর পাশাপাশি-একটি জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপক অর্থাৎ টিভিতে খবর পড়েন।

তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংবাদ উপস্থাপক, নাট্যাভিনেতা,অনুষ্ঠান উপস্থাপক বা ঘোষক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার। টেলিফিল্ম, টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চ, উপস্থাপনা, বিজ্ঞাপন ও প্রামাণ্যচিত্রে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। শখের বশে হলেও জনপ্রিয় এফ.এম রেডিও’র আর.জে, রেডিও-টিভিতে উপস্থাপনা করা, সংবাদ বা খবর পড়া এসব তাঁর মনে অন্য এক অনুভূতি জাগ্রত করে। ২০২০’র গ্রন্থ মেলাতে মো. তাজুল ইসলাম সোহাগ সম্পাদিত কবিতার বই “অন্য এক অনুভূতি” প্রকাশিত হয়। লেখা-লেখি ও কবিতা আবৃত্তিতেও রয়েছে সমান পারদর্শিতা। সযতেœ শিল্প-সাহিত্য চর্চা করা তাঁর প্রিয় শখ গুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি ২০০১ হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কাজী আমীরুল ইসলাম রুমী’র নির্দেশনায় ফরিদপুর থিয়েটারের একজন নাট্যকর্মী হিসেবে বেশ কিছু মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন।

স্বপ্ন-বোনা মানুষ সব সময় নতুন স্বপ্নের ছক আঁকেন। টিভি নাটকে সোহাগ এর অভিষেক ঘটে-২০০৬ সালে গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মোহর’ নাটকে, শুভ্র খান পরিচালিত পাখি টেলিফিল্মেও অভিনয় করেন। নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যান আরও এক ধাপ। অভিনয় করেন প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘দুই বেয়াইয়ের কীর্তি ’ ছবিতে। এরপর দেওয়ান নাজমুল নির্মিত বিজ্ঞাপন: ‘টি আর ট্রাভেলস’ ও তার পরিচালিত নিথর ভালোবাসা নাটকে এবং অমিতাভ রেজা নির্মিত ডিজুস সিমের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন।

তিনি শওকত আলী রানা পরিচালিত টিভি নাটক ‘বাক বিধান’ এবং সঞ্জীব সাহা সঞ্জু পরিচালিত ‘হাই হিল’ ও ‘শূন্যতায়’ নাটকে অভিনয় করেন, এছাড়াও অত্যন্ত গুণি টিভি অভিনেত্রী ও নাট্যকার সৈয়দা ফরিদা ফেরদৌসী যাত্রী’র প্রযোজনায় বাংলাদেশ বেতারের বেশ কতগুলো জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য নাটক হলো: প্রয়াত মান্নান হীরা রচিত নাটক: মোহন বাঁশি, জয় বাংলার কাব্য। মাসুম রেজা রচিত: ভালোবাসার দলিল। মাসুম আজিজ রচিত: আগরতলা, পিতার শোণিত ধারা। আজাদ আবুল কালাম রচিত: অপেক্ষার আলো! ফজলুল করিম রচিত ও মাহবুবুর রহমান প্রযোজিত বেতার নাটক ‘ঘটনার ঘনঘটা’ ছাড়াও টিভি ও বেতারে আরও বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন তিনি। আর এসব কিছু তার মনের আনন্দ ও শখের তীব্রতাকে যেন বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। সকল সুন্দর কিছু সৃষ্টির পিছনে বড় একটা স্বপ্ন থাকে। শ্রম, অদম্য ইচ্ছাবৃত্তি এবং একগ্রতা দিয়ে তা অর্জন করতে হয়! তাঁর হাতে তেমন কোন সময় থাকেনা যদি পর্যাপ্ত সময় পান তবে সুন্দর-সুন্দর কাজের সাথে নিজেকে নিমজ্জিত রাখতে চান তিনি।

কাজের ফাঁকে- ফাঁকে লেখালেখির অভ্যাসও রয়েছে। কেবল আকাশের নীল আর রাতের পূর্ণিমা সোহগের ভিতরে কবিত্ব জাগায়নি, মহান আল্লাহ’র প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তায় সৃষ্ট সাহিত্য আর কবিত্ব দিয়ে লিখেছেন গল্প,কবিতা,গান ও নাটক। সোহাগ এর লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে সম্প্রতি “মনেরও আড়ালে তুমি রেখনা চাওয়া...” এই মৌলিক গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সামিনা চৌধুরী এবং রোমান্টিক ধাঁচের এই গানটির সুর করেছেন আলমগীর হায়াৎ রুমন।

“আমিতো ভাবিনী ভাবতে পারিনি...” এই মৌলিক গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন শাহনাজ রহমান স¦ীকৃতি এবং এই স্যাড রোমান্টিক বা সফ্ট মেলোডি ধাঁচের এই গানটির সুর করেছেন উজ্জ্বল সিনহা। ক্লোজ-আপ তারকা রন্টিদাশ এবং বাবু সরকার গেয়েছেন “ এখনই সময় চল করি এই পণ...” এই গানটির সুর করেছেন কাজী দেলোয়ার হোসেন। প্রনব চক্রবর্ত্তী পার্থ’র কন্ঠে “বাংলা আমার দেশের মাটি...” , “দৃষ্টির বৃষ্টিটা দেখেছ...”, “স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন খুঁজি...” সহ অনেক গানই বেশ জনপ্রিয়তার সাথে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত প্রচারিত হয়ে আসছে। তার বিভিন্ন লিখা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় ও ম্যাগাজিনে। ২০১৫’র গ্রন্থ মেলাতে “কবিতার উঠান” একটি সম্পাদিত বইয়ে তাঁর বেশ ক’টি লেখা প্রকাশিত হয়। শিল্প মনের আরেক প্রকাশ মাধ্যম গান রচনা করা। গীতিকার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন খুব অল্প বয়সেই। তাঁর রচিত গান সমুহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার ও এফ এম রেডিওতে প্রচারিত হয়ে আসছে।

তাঁর স্বপ্ন জাগানিয়া মন মাঝে-মাঝে ভ্রমণ পিপাসু হয়ে ওঠে। ছুটে যান বাংলার দৃষ্টিনন্দন রূপ বৈচিত্রে নিজেকে একাকার করবার বাসনায়। মানব বৈচিত্র কৌতুহলী মন তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। দেশের সীমান্ত-সীমারেখা ছাড়িয়ে সোহাগ গিয়েছেন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কলকাতা-দিল্লির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ও আগ্রার তাজমহল সহ নানা জায়গায়। আসলে মনের চাওয়ার যেন সমাপ্ত ঘটে না। তাঁর মনের ভেতর সুপ্ত বাসনায় হয়ত কোন এক সময় ছুটবেন ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে।

নানা ব্যাস্ততার মাঝে তাঁর তেমন কোন অবসর মেলেনা! নিজের মনের গহীনে অনেক কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও নানা কারণে হয়ে ওঠেনা। তাঁর ধারনা সুষ্ঠু সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। সোহাগ মনে করেন “সাহিত্য চর্চা মানুষের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে মনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় এবং সদিচ্ছা মানুষকে সুখী করে। যাদের চাওয়া যত অল্প-তাদের প্রাপ্তি তত বেশী”।

তিনি আরো মনে করেন ধৈর্য্য, সততা আর একাগ্রচিত্তে স্বপ্ন দেখলে, সে স্বপ্ন একদিন বাস্তবে রূপ নেয়। আর স্বপ্নটা অবশ্যই বাস্তবতার নিরিখে দেখা উচিত।

তাঁর প্রিয় পোষাক এর মধ্যে জিন্স প্যান্ট ও কালো রং এর টি-শার্ট বা শার্ট। তিনি ভালবাসেন ঘুরতে ও আনন্দদায়ক সব ধরনের কাজ করতে। তিনি তাঁর মায়ের হাতে ইলিশ খেচুরী খেতে খুব ভালবাসেন।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test