E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে চলচ্চিত্র ঐক্যজোট

২০১৭ জুলাই ০২ ১৪:৩৮:৩২
প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে চলচ্চিত্র ঐক্যজোট

স্টাফ রিপোর্টার : যৌথ প্রযোজনার নাম করে যৌথ প্রতারণার আধিপত্য শুরু হয়েছে। কৌশলে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করনো হচ্ছে কলকাতার ছবি। এই অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিসহ ১৭ সংগঠনের ঐক্যজোটের চলচ্চিত্র পরিবার।

ঈদের আগে যৌথ প্রযোজনার নিয়ম না মেনে নির্মাণ হওয়ায় জাজের ব্যানারে ‌‘বস ২’ ও ‘নবাব’ ছবি দুটোর সেন্সর না দিতে দাবি করে আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেই দাবিকে উপেক্ষা করেই ছবি দুটো ঈদে মুক্তি পেয়েছে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিশেষ বিবেচনাতেই ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে। এরপর কিছু টেলিভিশনের অনুষ্ঠানেও মন্ত্রী ছবিগুলো যৌথ প্রযোজনার নিয়ম মেনেই নির্মিত হয়েছে বলে দাবি করেন। এতে করে যৌথ প্রতারণা নিয়ে মন্ত্রীর অবস্থান ও মন্তব্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন চলচ্চিত্র পরিবারের নেতাকর্মীরা।

সেইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা। তারা এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেই আবেদন জমা পড়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আন্দোলনকারীদের প্রধান উদ্যোক্তা চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার জানিয়েছেন, শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাবার আশা করছেন তারা। সাক্ষাৎ পেলে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হবে। দেশের চলচ্চিত্রকে রক্ষা করতে যে কোনো কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে পারেন তিনি।

এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘আমরা দেশের ইন্ডাস্ট্রি রক্ষার্থে তথ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি লিখিত আকারে এবং মৌখিকভাবে তার কাছে যৌথ প্রতারণার সব বিষয় স্পষ্ট করে তুলে ধরবো। তিনি অবশ্যই এর সমাধান করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।’

এদিকে ‘বস ২’ ও ‘নবাব’ ছবি দুটির সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া না পাওয়া নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বাকবিতন্ডা চলছে। ছবি মুক্তির পরও ছবিগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র পরিবারের আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে জড়িতরাও নানা মন্তব্য করছেন। হল বন্ধের হুমকি দিয়েছেন জাজের সমর্থনে থাকা হল মালিক সমিতি, বুকিং এজেন্ট সমিতিসহ বেশ ক’জন শিল্পী, নির্মাতা ও প্রযোজক। তাদের আর সিনিয়রদের নিয়ে ‘কটূক্তি’ করে সমালোচিত হয়েছেন নায়ক শাকিব খান। এফডিসি ভিত্তিক সংগঠনগুলো তাকে দ্বিতীয় দফায় বহিষ্কার করেছে। তার সঙ্গে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজকেও।

পাশাপাশি, শোনা যাচ্ছে এই বিষয়ে সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাচ্ছেন হল মালিক সমিতির নেতারাও।

যৌথ প্রযেজনায় যেসব নীতিমালা না মানার অভিযোগ

যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ বিষয়ে ২০১২ সালের সংশোধিত নীতিমালার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে, ‘যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির জন্য মুখ্য শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা যৌথ প্রযোজকগণই নির্ধারণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে। একইভাবে চিত্রায়নের লোকেশন সমানুপাতিক হারে রাখতে হবে।

আইনের এই ধারায় থাকা ‘যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির জন্য মুখ্য শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা যৌথ প্রযোজকগণই নির্ধারণ করবেন’ - অংশটির অপব্যবহার হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তারপর সমানুপাতিক হারে শিল্পী কলাকুশলীদের রাখার বিষয়টিও অনেক সময়ই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই নিয়ম না মানার উদাহরণ আগে দেখা গেলেও এটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করে ২০১৪ সালের মে মাসে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিটি মু্ক্তির পর। মুক্তির সময় পরিচালকের নামের তালিকায় কলকাতার নির্মাতা অশোক পাতি ও বাংলাদেশের অনন্য মামুনের নাম থাকলেও ওপার বাংলায় ছবির প্রচার থেকে শুরু করে প্রদর্শন পর্যন্ত নির্মাতা হিসেবে কেবল অশোক পাতির নামটিই দেখা যায়। এছাড়া ছবির নায়ক-নায়িকা দু`চরিত্রেই অভিনয় করেছেন কলকাতার শিল্পীরা। সবশেষ ‘নবাব’ ও ‘বস টু’ ছবি দু’টি নিয়ে আবারো সরগরম চলচ্চিত্রাঙ্গন। শিল্পী বাছাইয়ে নিয়ম ভাঙাসহ দুইদেশে ছবিগুলোর প্রচার-প্রচারণা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে এই দুটি ছবি যৌথ প্রযোজনার নিয়ম মানেনি। তবে কেমন করে ছবিগুলো সেন্সর পেল- প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি আলোচনায় আসছে- যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো মুক্তির ফলে আদতে কার লাভ হচ্ছে, এই বিষয়টি? এছাড়া এটি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির যে সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, তা এই শিল্পকে কতটা হুমকির মুখে ফেলছে?

এফডিসিতে আন্দোলনকারীদের দাবি, যৌথ প্রযোজনার ধারণা বাংলাদেশে নতুন নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই ‘ধীরে বহে মেঘনা’ ও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘অবিচার’র মতো বিখ্যাত সব ছবি নির্মিত হয়েছে। এসব ছবি করলে কলাকুশলীদের যেমন বড় বাজেটের ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়, তেমনি ভিন্ন দেশের শিল্পী-কলাকুশলী, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কাজ করার সুযোগ হয়। সেদিক থেকে একে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন না, এমন কেউ নেই। কিন্তু নিয়মনীতি না মেনে শুধু ভিন্ন দেশের ছবিকে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়ার বিপক্ষে অনেকেই।

এদিকে জাজ যৌথ প্রতারণার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বারবার আন্দোলনকে যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে বলে প্রচার করছে। ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সেন্সর বোর্ডসহ নানা মহলকে প্রভাবিত করছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। এবার অপেক্ষার পালা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কী সমাধান আসে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test