E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন

২০২১ অক্টোবর ১৩ ১২:১৩:৪৫
হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন

স্টাফ রিপোর্টার : বসত ভিটাসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে হিন্দু বিধবারা ভাগ পাবেন- উল্লেখ করা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এক্ষেত্রে হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রপার্টি অ্যাক্ট (১৯৩৭ সাল) বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ রায়ের রায়ের ফলে ৮৩ বছর পর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন হিন্দু বিধবারা।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রায় প্রকাশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ নাফিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চের বিচারকের স্বাক্ষরের পর ২২ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ হয়েছে।

আদালত তার রায়ে বলেছেন, আইনে কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির কথা নেই। ‘সম্পত্তি’ শব্দের অর্থ সব সম্পত্তি যেখানে স্থাবর বা অস্থাবর, বসতভিটা, কৃষিভূমি, নগদ টাকা বা অন্য যেকোনো ধরনের সম্পত্তি। কৃষিজমি ও বসতভিটার মধ্যে পার্থক্য করার সুযোগ নেই এবং এ ধরনের সম্পত্তি বিধবার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়।

এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন মর্মে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের ফলে কৃষিজমিসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে হিন্দু স্ত্রীরা ভাগ পাবেন ভোগদখল এবং বিক্রিও করতে পারবেন বলে জানান আইনজীবীরা।

এ সংক্রান্ত একটি মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। নারী নীতিতেও বলা হয়েছে সমান অধিকারের কথা। কিন্তু সম্পত্তিতে এ দেশের হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি এতকাল।

দেশের উচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে হিন্দু নারীরা সেই উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি পেলেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওই দিন ব্যারিস্টার উজ্জ্বল ভৌমিক এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন। বাদী গৌরীদাসীর পক্ষে মো. আব্দুল জব্বার ও তার দেবরের পক্ষে ছিলেন নাফিউল ইসলাম।

ব্যারিস্টার উজ্জ্বল ভৌমিক ওই সময় জানিয়েছিলেন, ১৯৪১ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্টের এ সংক্রান্ত এক মামলার রায়, ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন এবং ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের পর আইন পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, দেশে প্রচলিত যে আইন আছে তাতে জমির (কৃষি এবং পতিত ভূমি) মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সে জন্যই স্বামীর সব জমিতে অংশীদারিত্ব পাবেন হিন্দু বিধবা নারীরা।

দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, হিন্দু বিধবারা স্বামীর কৃষিজমিরও ভাত পেতেন না। অথচ ১৯৯৬ সালে খুলনার বটিয়াঘাটার হিন্দু বিধবা নারী গৌরীদাসীর নামে কৃষিজমি রেকর্ড হয়। এর বিরুদ্ধে একই বছর খুলনার বিচারিক আদালতে (বটিয়াঘাটা) মামলা দায়ের করেন গৌরীদাসীর দেবর জ্যোতিন্দ্র নাথ মণ্ডল।

শুনানি শেষে বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে বলেন, হিন্দু বিধবারা স্বামীর অ-কৃষিজমিতে অধিকার রাখলেও কৃষিজমির অধিকার রাখেন না। এরপর সে রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালেই গৌরীদাসী খুলনার জজ আদালতে আপিল আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু বিধবা নারী স্বামীর কৃষিজমির ভাগ পাবেন বলে ২০০৪ সালে রায় দেন।

এরপর খুলনার জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়। উভয়পক্ষের দীর্ঘ শুনানি এবং অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত নিয়ে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করলেন। হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, হিন্দু বিধবারা অ-কৃষিজমির মতো স্বামীর কৃষিজমিরও মালিক হবেন।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ১৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test