E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে আর ক্ষমা নয় 

২০২২ নভেম্বর ২৩ ১৭:৫১:২৮
বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে আর ক্ষমা নয় 

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণকে ভবিষ্যতে আর ক্ষমা করা হবে না বলে সতর্ক করেছেন আদালত।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ক্ষমা চাওয়ার পর আজ (বুধবার) তাদের সতর্ক করে ভবিষ্যতে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, পরপর দুবার এমন ঘটনা ঘটলো। এবার মাফ করা হলো। কিন্তু ভবিষ্যতে আর না।

এ বিষয়ে সব জেলা আইনজীবী সমিতিকে সতর্ক বার্তা দিতে বার কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ২২ সেপ্টেম্বর বিচারক নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর তিন আইনজীবীকে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার তাদের উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা বিচারকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, কোনো সভ্য সমাজের মানুষ সেটি করতে পারেন না।

এর আগে গত ১ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুলসহ এ আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর পাঠানো চিঠিটি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল।

গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন। সে অনুসারে নির্দিষ্ট বেঞ্চে অভিযোগ উপস্থাপন হলে আদালত ১ নভেম্বর রুল জারি করে তিন আইনজীবীতে তলব করেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের নথিতে বলা হয়, খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশ এক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি মামলার রায়ের জন্য দিন ঠিক করা ছিল। তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু মামলাটি রায় হতে প্রত্যাহার করে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য সময় আবেদন করেন। তিনি মৌখিকভাবে ‘এই মোকদ্দমায় বারের সভাপতি সাহেব আবার জেরা করবেন, আমরা একটা সময়ের দরখাস্ত দেবো’ উল্লেখ করে এজলাস ত্যাগ করেন।

পরে অন্য মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেনসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন ও বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন।

তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা সে কথায় কর্ণপাত না করে নিজেদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। এর মাঝে খুলনা বারের সাধারণ সম্পাদক জেরারত অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি দত্তকে (অন্য একটি মামলায় পিযুষ কান্তি সাক্ষীকে জেরা করছিলেন) জোরের সঙ্গে বলেন, ‘জেরা শেষ করেন’।

পিযুষ কান্তির জেরা শেষ হলে বার সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে আদালতকে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয়পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেওয়া হয়নি। কেন নেওয়া হয়নি ও সময়ের দরখাস্ত কেন নামঞ্জুর করলেন, আমাকে বলতে হবে।

তখন বিচারক নির্মলেন্দু দাশ বলেন, ‘সভাপতি সাহেব আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?’ জবাবে উনি বলেন, ‘কীভাবে পারি। কোনোভাবে জানবো, বলেন।’

বিচারক বলেন, ‘আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি নামঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নেবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।’ তখন তিনি (উক্ত আইনজীবী) বলেন, ‘কৈফিয়ত চাচ্ছি তো। কারণ আপনি যখন টাকা নিয়ে, ঘুস নিয়ে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত দেন, সেটার তো জবাব আমরা চাই না।’

একপর্যায়ে বিচারককে উদ্দেশ করে বার সভাপতি বলেন, ‘আমরা কোর্ট বয়কট করবো। আমরা মিডিয়ার সামনে প্রমাণ করবো আপনি দুর্নীতিবাজ। আপনার বিরুদ্ধে যা যা করা দরকার আমরা করবো। আপনার যা করার আছে, আপনি করেন...।’

নথিতে আরও বলা হয়, আইনজীবী নাজমুল হোসেনও অশ্রাব্য ভাষায় একটি গালি দেন। অ্যাডভোকেট পাপ্পুও গালাগালি করেন। সভাপতির সঙ্গে থাকা অন্য আইনজীবীরাও অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন ও গালাগালি করেন। তারপর তিনিসহ তার সঙ্গে আসা অন্য আইনজীবীদের নিয়ে বের হয়ে যান। পাবলিককেও বের করে নিয়ে যান।

নথিতে বলা হয়, একটি বিচারিক বিষয়ে বারের সভাপতি তার সঙ্গীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে একজন বিচারক হিসেবে তিনি হতাশ, অপমানিত হয়েছেন ও বিচার বিভাগের মর্যাদার ওপর তারা আঘাত হেনেছেন ও চরমভাবে আদালত অবমাননা করেছেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test