E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে ১০ আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ

২০২৩ জানুয়ারি ২২ ১৩:১৬:৪০
ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে ১০ আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ

স্টাফ রিপোর্টার : গ্রেফতার আসামিদের বেআইনিভাবে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার ‘অপব্যবহার’ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। এতে এ সম্পর্কিত একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতেও বলা হয়।

রবিবার (২২ জানুয়ারি) ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দীন আসাদ এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধ এবং এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাওয়া হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি প্রিজন) বিবাদী করা হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবীরা হলেন- আসাদ উদ্দিন, মীর এ কে এম নুরুন্নবী, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান।

১০ আইনজীবীর পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দৈনিক জাতীয় পত্রিকায় গত ২০ ডিসেম্বরে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায়, গাজীপুরে একজন আসামি ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। এরপর ১৭ জানুয়ারি ছবিসহ আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানেও দেখা যায়, শরীয়তপুরে আরেকজন আসামি একইভাবে ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। এসময়ের মধ্যেই একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকার আদালতে আনা হয়। এর কিছুদিন আগে আরেকজন আইনজীবীকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে আনা হয়। এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন বলেন, কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুসহ অনেক আসামিকে হাতকড়া পরানোর ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ির যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র পালানো ঠেকাতে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্বপরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে অথবা রাস্তা দীর্ঘ হয় কিংবা বন্দি সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সেক্ষত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।

‘অন্যদিকে জেল কোড ও কারা আইনে কারা অপরাধের বর্ণনার পাশাপাশি শাস্তি হিসেবে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কারাগারের ভেতরে কয়েদিরা সংশ্লিষ্ট কারা অপরাধ করলে তার শাস্তি হিসেবে এর ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া যেসব কয়েদি পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে তাদের হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবলমাত্র জেল কোড ও কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবলমাত্র হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ডান্ডাবেড়ি নয়’ বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী আসাদ উদ্দিন।

সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী জানান, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- কেবলমাত্র আইনানুযায়ী ব্যতিত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেওয়া যাবে না বা তার সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনের এসব বিধানের বাইরে গিয়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার করা হচ্ছে, যা নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এরইমধ্যে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। সিটিজেন ফর ডেমোক্রেসি বনাম স্টেট অব আসাম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, পুলিশ বা কারা কর্তৃপক্ষ কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরাতে পারবে না। কোনো মারাত্মক ও পলায়নের আশঙ্কা আছে- এমন আসামিকে এগুলো পরানো অত্যন্ত প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না। ওয়ারেন্ট ব্যতিত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হলে এবং হাতকড়া পরানো আবশ্যক মনে হলে পুলিশ তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে আসা পর্যন্ত হাতকড়া পরাতে পারবে। পরবর্তী সময়ের জন্য অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হবে। আমাদের দেশে এমন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা/নীতিমালা না থাকায় ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার হচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২২, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test