E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খালেদার দুর্নীতি মামলার শুনানি আগামী ৫ মে

২০১৫ এপ্রিল ০৫ ১২:৩১:৫৭
খালেদার দুর্নীতি মামলার শুনানি আগামী ৫ মে

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি আগামী ৫ মে পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।

আসামিপক্ষের চারটি আবেদন মঞ্জুর করে রবিবার মামলা দু’টির পরবর্তী এ দিন ধার্য করেন রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালত।

একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তার সঙ্গে জামিন পেয়েছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অন্য দুই আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

খালেদা ছাড়াও মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে সকালে আদালতে হাজির হন খালেদা। তার পক্ষে জামিনসহ মোট চারটি আবেদন জানান তার আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জারি থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল করে খালেদার পক্ষে দুই মামলায় জামিনের আবেদন দু’টি জানানো হয়। অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদও আদালতে হাজির হয়েছেন।

প্রথমে জামিনের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। জামিনের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল ইসলামসহ অনেকে।

তবে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেননি দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরের বিষয়ে আপত্তি নেই বলেও শুনানিতে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

গত ৪ মার্চ শুনানি শেষে দুই দুর্নীতি মামলায় প্রধান আসামি খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখেন আদালত।

খালেদার পক্ষে অন্য দুই আবেদন করা হয়- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্য দেওয়া বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে জেরা করতে তাকে রি-কল করা এবং ওই মামলায় যেসব ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়িত অনুলিপি পেতে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হারুন-অর-রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কোনো আসামি না থাকায় আসামিপক্ষের জেরা বাতিল করেছিলেন আদালত। খালেদার পক্ষে তাকে জেরা করতে আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। এ জন্যই প্রথম সাক্ষীকে রি-কল ও ডকুমেন্ট পাওয়ার আবেদন জানানো হয়।

এসব আবেদনও মঞ্জুর করে আগামী ৫ মে হারুন-অর-রশিদকে খালেদা ও তারেকসহ অন্য আসামিদের পক্ষে জেরার দিন ধার্য করেছেন আদালত। হারুন-অর-রশিদকে জেরা শেষ হলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণেরও দিন ধার্য করা হয়েছে ওই দিন। এর আগেই ডকুমেন্টগুলো আসামিপক্ষকে দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন। সাক্ষীরা সবাই আদালতে হাজির ছিলেন।

আসামিপক্ষের একটি আবেদন মঞ্জুর করে আদালত গত ৪ মার্চ মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আগের মতোই আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন। ফলে রোববার বরাবরের মতো তারেকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া হাজিরা দেন।

খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, আদেশ সংশোধন, জামিন বহাল এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুপস্থিতিসহ ওইদিন ৪ মার্চ মোট সাতটি আবেদন জানিয়েছিলেন আসামিপক্ষ।

আবেদনগুলোর নিষ্পত্তির পর চারটি আবেদন নথিভুক্ত রেখে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেন আদালত। ফলে রাষ্ট্রপক্ষের সাতজন সাক্ষী সেদিনও আদালতে উপস্থিত থাকলেও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে রোববার সকাল দশটা ৩৭ মিনিটে বিশেষ আদালতের এজলাসকক্ষে পৌঁছান খালেদা। এজলাসকক্ষের আসামির কাঠগড়ার সামনে তার বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়। হাতলঅলা চেয়ার ও সামনে টেবিল বসানো হয়। টেবিলে রাখা হয় টিস্যু বক্স ও পানির বোতলসহ নানা কিছুও।

খালেদা জিয়া এজলাসকক্ষে ঢোকার পর তার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন তার বসার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে চেয়ারে বসেন খালেদা।

এর পর পরই আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা-তারেক ও রবিবার জামিন পাওয়া দু’জন ছাড়া অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। তারাও রবিবার আদালতে ছিলেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে।

আগের বিচারকের প্রতিও অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো ছাড়াও তার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এজলাসকক্ষেই বিশৃঙ্খলা ও হই-হট্টগোল এবং বিচারকের প্রতি কটূক্তি করে আসছিলেন খালেদার আইনজীবীরা।

এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারক বদল করা হয়।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৭ দিন।

(ওএস/পিবি/এপ্রিল ০৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test