E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আইন ও মানবাধিকার

২০১৫ জুলাই ০৪ ১৭:৩২:৩৮
আইন ও মানবাধিকার

মোঃ মঈনুল ইসলাম লিমনঃ একটি সুষ্ঠ ও সু-শৃঙ্খল রাষ্ট্র গঠনে যে দুটি বিষয় প্রথমেই আসে তা হলো আইন ও মানবাধিকার। আইন ও মানবাধিকার দু’টি আলাদা অর্থ প্রকাশ করলেও আইন ও মানবাধিকার একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং একটি ব্যতিরেকে অপরটি চিন্তা করলে হয়তো বা এদের প্রয়োগ যথার্থ হবে না। আইন ও মানবাধিকার সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে আমাদের জানতে হবে আইন ও মানবাধিকার বিষয়টা কি, এদের প্রয়োগ ও পরিব্যাপ্তি।

প্রথমে আইন নিয়ে আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো আইনের যথার্থ সংজ্ঞা প্রদান করা সম্ভব নয়। কারণ যে পদ্ধতিতে আইনকে সংজ্ঞায়িত করা হবে সেটি হবে হয়তো ব্যক্তিগত বা ইচ্ছামূলক। এছাড়াও আইনের শাখা-প্রশাখা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বিভিন্ন ধরনের আইনের মধ্যে প্রাকৃতিক আইন, সাংবিধানিক আইন, রাষ্ট্রীয় আইন, রাজনৈতিক আইন, নৈতিকতার আইন, বাধ্যবাধকতার আইন, আদালতের আইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন শাখায় আইন কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আইনের একটি কার্যকরী ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞাঃ আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকরী করতে ইহাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এর ৫২ অনুচ্ছেদ, ব্যাখ্যা-১ এ বলা হয়েছে- "আইন অর্থ কোন আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোন প্রথা বা রীতি।"

মানবাধিকার আলোচনা করার পূর্বে অধিকার সম্পর্কে কিছুটা ধারনা থাকা আবশ্যক। অধিকার হল সমাজে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের দাবীকৃত এমন কতগুলো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবী যার নৈতিক কিংবা আইনগত ভিত্তি আছে এবং যা মানুষের বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এক অর্থে অধিকার আইনের সৃষ্ট নয়; ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অধিকার লাভ করে। অন্যদিকে মানবাধিকার বলতে মানুষের যে কোন অধিকার কে বোঝায় না; মানবাধিকার শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। আইনগত ও নৈতিক অধিকারগুলোর মধ্যে সেগুলোই মানবাধিকার যেগুলো পৃথিবীর সকল মানুষ শুধু মানুষ হিসেবে দাবী করতে পারে। এ অধিকারগুলো কোন দেশ বা কালের সীমানায় আবদ্ধ নয়। এগুলো চিরন্তন এবং সার্বজনীন। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ এ অধিকারগুলো নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। মানবাধিকারের প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট হলো: (১) সার্বজনীন সহজাততা এবং (২) অহস্তান্তরযোগ্যতা। এ দু’টি বৈশিষ্ট্যের কারণে মানবাধিকার অন্যান্য অধিকার থেকে পৃথক। সার্বজনীন সহজাততা বলতে বোঝায় যে কোন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করা মাত্র এ অধিকারগুলো দাবী করতে পারে। অহস্তান্তরযোগ্যতা বলতে বোঝায় যে কেউ এ অধিকারগুলোকে ছিনিয়ে নিতে পারে না। এই অর্থে মানবাধিকারগুলো নাগরিক অধিকার থেকে পৃথক। নাগরিক অধিকারগুলো দেশের পজিটিভ ল দ্বারা স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র এগুলোকে ছিনিয়ে নিতে পারে। কিন্তু মানবাধিকারগুলো রাষ্ট্র জন্ম লাভ করার পূর্বেও বিরাজ করে। এ কারণে এগুলোকে ছিনিয়ে নেয়া যায় না।

প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ (United Nation) ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুমোদন করে, যা মানবাধিকার সনদ নামে পরিচিত। ইংরেজিতে মানবাধিকার সনদ বা ঘোষণাপত্রটিকে বলা হয় "Universal Declaration of Human Rights (UDHR)"। যেহেতু ঘোষনাপত্রটি সকল জাতির সম্মতিক্রমে এবং সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদন্ড সেহেতু এটা একটি মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনাপত্র। এই সনদে সর্বমোট ৩০ টি অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করা হয়েছে যা মানবাধিকারের উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করে।

প্রতিটি মানুষ বা রাষ্ট্র কিছু সহজাত অধিকার ভোগ করবে। প্রতিটি রাষ্ট্রের আত্মরক্ষা, স্বাধীনতা, বৈধ ক্ষমতা পরিচালনা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করার অধিকার রয়েছে। সুতরাং এই মতবাদ অনুযায়ী মানুষের সহজাত অধিকার থেকেই আইনের উৎপত্তি, আইন থেকে এসব অধিকারের উৎপত্তি নয়।

ক্রমবর্ধমান এই বিশ্বে মানুষ এখন তাদের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন এবং এই সচেতনার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে অনেক মানবাধিকার সংস্থা। যে কোন অধিকার লংঘিত হলে এ সংস্থাগুলো তা পর্যবেক্ষণ করে এবং আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করে।

তথ্য উৎসঃ তথ্যগুলো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহীত।

লেখকঃ মোঃ মঈনুল ইসলাম লিমন

এল এল. বি (অনার্স), এল এল. এম


(এলপিবি/জুলাই ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test