E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশু ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে ২জনের ফাঁসির আদেশ

২০১৬ জানুয়ারি ৩১ ১৩:৩৬:০২
শিশু ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে ২জনের ফাঁসির আদেশ

পিরোজপুর প্রতিনিধি :নয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার অপরাধে পিরোজপুরে দুই যুবককে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। পিরোজপুরের জেলা, দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া রবিবার চাঞ্চল্যকর একটি মামলায় এ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। সেই সঙ্গে উভয়কে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডিতরা হলেন- জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান স্বপন (২৩) ও সুমন জোমাদ্দার (২১)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ফুলমিয়ার মেয়ে ফাতেমা আক্তার ইতি একই উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়া গ্রামে তার নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে একটি গরুকে ঘাস খাওয়াতে সে ওই বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যায়। মাঠে গরু বেঁধে ইতি দুপুরেও ঘরে ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশিরা তার খোঁজ শুরু করে। এক পর্যায়ে পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশে একটি বাগানের মধ্যে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় তার মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে পিরোজপুর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা. ননী গোপাল রায় তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, ইতিকে ধর্ষণ করে তাকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের বাবা মামলার বাদি মো. ফুল মিয়া এবং নানা মো. আব্দুর রব মাষ্টারের সঙ্গে হত্যার পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে আলোচনায় সন্দেহ করেন যে, ইতির মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ মেহেদী ও তার সহযোগী সুমন জোমাদ্দারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।

সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায় যে, তারা দুইজন মিলে ইতিকে বাঘডাসা দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

মামলাটির অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস উল্লেখ করেন যে, মেহেদী ইতির বড় বোন বিথিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ছিল। বিথির পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে মেহেদী তার সহযোগী সুমনকে নিয়ে ফন্দি আঁটে যে, ইতিকে ধর্ষণের পর হত্যা করলে স্বজনেরা এ ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এ সুযোগে মেহেদী বিথিকে অপহরণ করে তিনি পালিয়ে যাবেন। বিথির প্রতি মেহেদীর আসক্তিকে প্রশমনের জন্য অভিভাবকেরা রিনা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি রিনাকে প্রায়ই নির্যাতন করত, শিশু ইতি এ নির্যাতনে বাধ সাধত। এ কারণেও ইতির প্রতি মেহেদীর আক্রোশ ছিল।

মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে এলে বিচারক সর্বমোট ১৪ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ইতির বড় বোন বিথি আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে জানান, বিয়ের পরও মেহেদী তাকে উত্ত্যক্ত করত।

সাক্ষীদের সাক্ষ্য, মামলার আলামত এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আদালতের কাছে সন্দেহাতীভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মেহেদী এবং সুমনই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইতিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলাটি পরিচালনা করেন পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পিপি আব্দুর রাজ্জাক খান বাদশা। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ও অ্যাডভোকেট আহসানুল কবির বাদল।


(ওএস/এস/জানুয়ারি৩১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test