E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যর্থ হলে ৪শ নারী বিচারক নিয়োগ পেতেন না : নাজমুন

২০১৭ জুলাই ০৬ ১৫:৩৭:১০
ব্যর্থ হলে ৪শ নারী বিচারক নিয়োগ পেতেন না : নাজমুন

স্টাফ রিপোর্টার : ‘প্রথম নারী বিচারক হিসেবে ব্যর্থ হয়ে যাইনি। আল্লাহর কাছে তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রথম নারী বিচারক হিসেবে আমি ব্যর্থ হলে হয়ত আজ বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ নারী বিচারক নিয়োগ পেতেন না।’ -প্রায় ৪২ বছরের বিচারক জীবনের শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চের এই নারী বিচারপতিকে বিদায় সংবর্ধনা দেন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের পাঁচ শতাধিক সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের পক্ষ থেকে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরপর সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ নারী বিচারপতির বর্ণাঢ্য কর্মময়জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

এই দু’পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারপতি নাজমুন আরা নিজের ৪২ বছরের বিচারিক জীবনের নানা স্মৃতি-অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘প্রায় ৪২ বছরের বিচারকের জীবন শেষ হলো আজ। বিচার করার কঠিক কাজ ও বিচারকের সীমাবদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার আগ্রহ ছিল আমার। আজকের এ ক্ষণটিতে আমার কষ্ট হচ্ছে এই বিচারঙ্গণ থেকে বিদায় নিতে আপনাদের ছেড়ে যেতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বিচারক বানিয়েছেন, এ দেশের প্রথম নারী বিচারক। তবে আমার বিচারক হওয়ার পেছনে আমার মরহুম আব্বার ইচ্ছা ও আম্মার প্রেরণা বড় ভূমিকা রেখেছে।’

১৯৭২ সালের আইনজীবী পেশার প্রথম দিন কোর্টের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বোধহয় আমার মনের কোনায় ইচ্ছাটা উঁকি দিয়েছিল -আমি কি জজ হতে পারি না? কিন্তু জানলাম আমি জজ হতে পারি না। ওই সময় বাংলাদেশের নারীরা জজ হতে পারতো না। আমি ওকালতি করার বছর দেড়েক পরে ওই বিধান সরকার তুলে দেয়।’

নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের শেষের দিকে দেশের প্রথম নারী বিচারক হয়ে খুলনার জজশীপে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করি। ওই সময়ে খবরের কাগজে এটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া দু’রকমেরই হয়েছিল। কেউ স্বাগত আবার অনেকে নাক সিঁটকেছিলেন -নারী আবার বিচারক হতে পারে না কি? নারী আবার কি বিচার করবে? কর্মক্ষেত্রেও আমি এই দু’রকমের আচরণ পেয়েছিলাম।’

সুদীর্ঘ বিচারক জীবনে কখনই জেনে-বুঝে বা অবহেলায় বা অমনযোগী হয়ে কোনো ভুল বিচার বা অন্যায় বিচার কনেনি উল্লেখ করে দেশের এ প্রথম নারী বিচারপতি বলেন, ‘আমার অনেক বিচারই হয়ত ভুল হয়ে গেছে, আপিলে গিয়ে হয়ত সংশোধিত হয়েছে। কিন্তু সে ভুল বিচার আমি জেনে-বুঝে বা অমনোযোগী হয়ে করিনি। জেনে-বুঝে অবিচার করা বা অমনোযোগী হয়ে বা অবহেলা করে ভুল বিচার করা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। পক্ষাশ্রিত হয়ে বা কোনো কারণে বা কারো দ্বারা প্রভাবান্নিত হয়ে বিচার করা মহাপাপ। আমার আত্মতৃপ্তি আমি জেনে বুঝে বা অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে বা পক্ষাশ্রিত বা প্রভাবিান্নিত হয়ে ভুল বিচার বা অন্যায় বিচার কখনোই করিনি।’

১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করা দেশের এই প্রথম নারী বিচারপতির আজ (৬ জুলাই বৃহস্পতিবার) শেষ কর্মদিবস। যদিও সুপ্রিম কোর্টের পঞ্জিকা অনুযায়ী তার অবসরের মেয়াদ ৭ জুলাই। ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় আগের দিন আজ বৃহস্পতিবারই তার শেষ কর্মদিবস।

প্রথা অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে ওইদিন তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। আজ বিকেলে জাজেস লাউঞ্জে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ তাকে সংবর্ধনা দেবেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test