E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আফগান-তালেবান শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতি-নারী অধিকার রক্ষার আহ্বান

২০২০ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৪:২৪:৫৩
আফগান-তালেবান শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতি-নারী অধিকার রক্ষার আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শনিবার থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় সংঘাতকবলিত আফগানিস্তানের দুই পক্ষ, দেশটির সরকার এবং সরকারবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই দশক ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ছাড়াও দেশটিতে নারী অধিকার রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে আলোচনায়।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে কাবুল সরকার ও মার্কিন বাহিনীর মধ্যে চলমান এই যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ ছাড়াও উভয় পক্ষের অসংখ্য যোদ্ধার প্রাণহানি হয়েছে। আফগান সরকারের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলছেন, ‘এই যুদ্ধ করে প্রকৃতপক্ষে কেউই জয়ী হয়নি।’

তবে তালেবান অবশ্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির কথা বলছে না। আফগানিস্তান রাষ্ট্র ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচিত বলে মত গোষ্ঠীটির। একটি একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য উভয়পক্ষকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবদমান দুই পক্ষকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘আপনাদের সফলতা গোটা বিশ্বের কাম্য।’

সামনে দুই পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা শুরুর আগেই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদেরকে শিগগিরই যুদ্ধবিরতি ছাড়াও এমন একটি ঐক্যমতে আসার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে নারী অধিকারের বিষয়টি রক্ষিত হবে। এ ছাড়া তালেবানের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলে কোনো নারী না থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের অবসানের দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের কারণে তার এ প্রচারণা আরও জোরালো হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলে বিশাল অর্থ সহায়তা দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাই বৈঠক শুরুর প্রথম দিনে কাতারে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

কাতারে ঐতিহাসিক আলোচনা শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ১৯তম বর্ষপূর্তির ঠিক একদিন পর। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সেই হামলায় ৯ হাজার মার্কিনি হতাহত হয়। হামলার পরপরই সন্ত্রাসবাদবিরোধী বৈশ্বিক যুদ্ধে নামে আফগানিস্তানসহ অনেকে দেশে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

আফগান সরকার এবং তালেবান এই প্রথম শান্তির জন্য মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। বৈঠকের প্রথম দিনে দোহায় উপস্থিত হয়ে কার্যকর একটি শান্তি চুক্তির করার এই সুযোগ লুফে নেয়ার জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তবে এতে অনেক বাধাবিপত্তি যে রয়েছে, তাও স্বীকার করেন তিনি।

মাইক পম্পেও বলেন, ‘আপনাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বেছে নেয়ার কাজটি আপনাদেরই করতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সহিংসতার চক্র ভেঙ্গে ফেলাই আফগানদের অধিকার রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায়।’

আফগান সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলেন, সব বিষয়ে যদি দুই পক্ষ একমত হতে না পারে তাহলে উভয়ের কিছু কিছু বিষয়ে ছাড় দেয়া উচিত।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য বর্তমানে দোহায় অবস্থানরত আমার প্রতিনিধি দল এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করছে যা আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং জাতিগত পটভূমির বৈচিত্র্যময় লাখ লাখ নারী-পুরুষ সমর্থন করে।’

তালেবান প্রতিনিধি দলের নেতা মোল্লা বারদার আখুন্দ বলেছেন যে আফগানিস্তানের ‘এমন একটি ইসলামী ব্যবস্থা থাকা উচিত যাতে দেশের সমস্ত উপজাতি ও নৃগোষ্ঠী কোনওরকম বৈষম্য ছাড়াই নিজের অধিকার রক্ষিত হয়েছে বলে প্রতিশ্রুতি পায় এবং ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধের সঙ্গে তাদের জীবন যাপন করতে পারে।’

কর্মকর্তা, কূটনৈতিক আর বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও বিবদমান দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসানো একট গুরুত্বপূর্ণ অর্জন তবে এর মানে এটা নয় যে শান্তির পথ তৈরির বিষয়টি খুবই সহজ। বিশেষ করে গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন-তালেবান চুক্তির পরও দিন দিন দেশটিতে যেভাবে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে তা শঙ্কার।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test